blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

লাইফ উইদাউট লাভ - পর্বঃ ০৩

দুই রুমের ছোট্ট একটা ফ্লাট নিয়ে থাকি। এক রুমেই আমার দিব্যি চলে যায়। বাকী রুমটা ফাঁকা পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেয়ার চিন্তাভাবনা করিকিন্তু ভাবনাটাকে আর বাস্তবায়ন করা হয়ে ওঠে নাআমি নিজে মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু ফ্লাটটাকে পরিষ্কার রাখা হয়ে ওঠে না। ভাইয়া ভাবী রুমে ফ্রেশ হচ্ছে। আমি এরই মাঝে গ্যাসের চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে দিলাম। খুব চায়ের তেষ্টা পেয়েছে। অনেকক্ষণ চা খাওয়া হয় নাই  কাজের বুয়া নাই। কাজের বুয়া রাখার সাহস করি না। একলা থাকি। কবে দেখবো এলাকার বখাটে ছেলে গুলো চাঁদাবাজির আশায় কাজের বুয়ার সাথে আমার অনৈতিক সম্পর্ক ইত্যাদি দিয়ে বাজার গরম করে ফেলেছে। একটা ছেলে আছে। সে এক দুই দিন বাদে ঘরদোর ঝাড়ু দিয়ে যায়, বাজার সদাই করে। ছেলেটার একটা জিনিস ভালো লাগে। তার চুরি করার অভ্যাস নেই। আমি মোটামুটি নিজের কাজ চালিয়ে নেয়ার রান্না করতে পারি। একদম খেয়াল ছিলো না দ্বীপ্ত ভাইয়ারা আসার সাথে সাথে খাবার দিতে হবে। এই বেলা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসি। রাতে দেখা যাবে। বেরোতে যাবো এই সময়ে ভাবী কিচেনে এসে হাজির । কাপ ধুয়ে চা ঢেলে নিলেন। 

‘শুভ্র,  কোথায় যাও?

‘এই তো ভাবী একটু বাইরে যাই। কাছেই একটা রেস্তোরাঁ আছে। কিছু খাবার নিয়ে আসি।

‘ রেস্তোরাঁ। বেশ। আজকাল কিন্তু কেউ বাংলা বলতে চায় না। ইংরেজী বলা যেন একটা ফ্যাঁশান হয়ে গেছে। সবার মুখে রেস্টুরেন্ট শুনি। বহুদিন বাদে রেস্তোরাঁ শুনে ভালো লাগলো। তাই বলে দেশে এসে দোকানের খাবার খাবো? এইটা কি বলো শুভ্র! ফ্রিজে বাজার করা আছে?

আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম, “আছে”ভাবী তখনি কোমরে শাড়ীর আঁচল জড়িয়ে ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেলেন।  

‘ এত দূরের পথ জার্নি করে এসেছেন ভাবী। এখন থাক। খেয়েই দেখেন না ঢাকাইয়া রেস্তোরাঁর খাবার। আর রেস্তোরাঁ কিইন্তু মোটেও বাংলা শব্দ না ভাবী।

‘  আরে রাখো তো তোমার জার্নি। এখন আর জার্নিকে জার্নি মনে হয় না। তুমি এসে আমাকে দেখিয়ে দাও কোথায় কি রেখেছো

প্রেশার কুকারে মাংস চড়িয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, শুভ্র বিয়ে করবে কবে? মাথার অবস্থা তো খারাপ। পুরোপুরি স্টেডিয়াম হয়ে গেলে তো মেয়ে পাবে না। তখন ক্রিকেট খেলার জন্য স্টেডিয়ামই ভাড়া দিতে হবে। মেয়ে দেখবো?

আমি কিছু বলার আগে দীপ্ত ভাইয়ার অট্টহাসির শব্দ পেলাম। তাকে একটু আগে চা দিয়ে এসেছি। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দরজা কপাটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “ঢেকি স্বর্গে গেলেও যেমন ধান ভাঙ্গে, তেমনি বাঙালী অবিবাহিত পাত্র পাত্রী পেলে বিনে পয়সায় ঘটকালী করে। নিউইয়র্কে তোর ভাবীকে সবাই ঘটক পাখি ভাবী বলে ডাকে। তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে বেশ কয়েক যুগলের বিবাহ দিয়েছেন।” ভাবী ভাইয়ার উপর কপট রাগ ঝাড়েন, “তোমার এত জ্বলে কেন! তোমার বিয়ে দেই নাই বলে কি এত রাগ”
দ্বীপ্ত ভাইয়া এগিয়ে আসেন, প্লিজ কণা। এইটুকু দয়া করো। তোমার ঘটকালিতে বিয়ে করার শখ আমার অনেক দিনের।
কণা ভাবী, একটা বউ চালাতে পারো না। আবার আরেকটা বিয়ে করার শখ! পুরুষ মানুষের এই এক বদ রোগ। এক পা কবরে চলে যায় তবুও বিয়ের আশা ছাঁড়ে না।
দ্বীপ্ত ভাইয়াঃ কি কও কণাদুই পাই তো এক জায়গায় আছে। কোন পা কবরে?
কণা ভাবীঃ তোমার সাথে আর কথায় পারা যায় না।
দ্বীপ্ত ভাইয়াঃ আর তুমি শুভ্র’র সামনে এইডা কি কইলা! আমি বউ চালাইতে পারি না।



দ্বীপ্ত ভাইয়া কণা ভাবী ছোট বাচ্চাদের মত তর্ক জুড়ে দিলো। আজ অনেক দিন পর আমার ছোট্ট কিচেন গল্পে তর্কে সরগরম হয়ে উঠলো। ছোট বেলার এরকম কিছু স্মৃতি আছেতখন আমাদের বাড়ীতে মাটির চুলায় রান্না হত। অঘ্রাহায়ন পৌষে মাঠের ধান কাটা হয়ে যেত। শীতকালে রান্না ঘরের সামনের উঠানে খোলা আকাশের নিচে মাটিতে গর্ত খুড়ে চুলা পাতা হত। সেখানে ধানের খড় দিয়ে রান্না করতে বসতেন মাবাড়িতে মামা খালা নানী ফুফুদের কেউ এলে চুলায় পিঠে বসে যেত। রাজ্যের সব গল্প হত। আমি চুপটি করে গল্প শুনতাম।  

ভাবী রান্না শেষ করে ঘরে গেলেন। দীপ্ত ভাইয়া বললেন, “শার্টটা তোর কাছে আজো আছে?

আমি আমার গায়ের শার্টটার দিকে তাকালাম। ভেবেছিলাম দীপ্ত ভাইয়া চিনতে পারবে না। আকাশ নীল বর্ণের এই শার্ট। বহুবছর পরে আজ আমি পরেছি। বিকেলে কোন শার্ট পরে রিসিভ করতে যাবো সেটা নিয়ে বেশ সিদ্ধান্তহীনতায় পরে যাই। পোষাক আষাক নিয়ে আমি মোটেও খুঁতখুঁতে নই। একটা হলেই হয়। কিন্তু আজ অকারণেই খুঁতখুঁত করলাম। আলমারি থেকে কাপড় বের করতে করতে একসময় সবই বের করে ফেললাম। কাপড়ের ভিড়ে পরে ছিলো নীল শার্টটি। যেটার স্পর্শে আমি দ্বীপ্ত ভাইয়াকে অনুভব করি। এই শার্টটাই পরার সিদ্ধান্ত নিলাম।


রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করতে দশটা বেজে গেলো। দ্বীপ্ত ভাইয়াদের ঘুমাতে দিলাম আমার রুমে। আমি পাশের রুমে শুয়ে পড়লাম। চোখের সামনে পুরোনো সেই দিনগুলো একে একে সিনেমার মত হাজির হচ্ছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এক শীতের সকালে মিয়াভাইয়ের সাথে তার হ্যান্ডসাম বন্ধু এলো আমাদের গ্রামে, পাথরখালিতে মাছ ধরা, শালিকখালি নদীতে এক জ্যোৎস্না স্নাত রাতে দুজনের কাছাকাছি আসা। নিঃশব্দে চোখের পাতায় ঘুম নেমে এলো। 

-----------------------------------------------------------------