blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

জমিদার পুত্র

সে অনেক দিন আগের কথা। বাংলাদেশের কোন এক বিরাট জমিদার পুত্রের গল্প। রাজ বাদশা জমিদার এরা অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত ছিলো। সেক্সের ক্ষেত্রে পাপ জিনিসটা তারা খুব একটা বিশ্বাস করত বলে ইতিহাসে সাক্ষী পাওয়া যাবে না। ছেলে মেয়ে যাকেই পছন্দ হোক তাকে তুলে নিয়ে আসত হেরেমে। মনের খায়েস মিটিয়ে ঝাঁকাতো বাঁকাতো সেই দেহটাকে। অধিকাংশ সময় দেখা যেত কয়েকবার রাগরস ক্ষরণের পর ছুড়ে দিত দেহটাকে। আবার নতুন দেহ খুঁজত জৈবিক তাড়নায়। জমিদার মশাইয়ের একটা পুত্র সন্তান ছিলো। জমিদার সাহেব চাইতেন তার পুত্র যৌনতায় তাকে ছাড়িয়ে যাক। কিন্তু জমিদারের দুর্ভাগ্য। জমিদার তনয়ের নারী আসক্তি ছিলো না। সে পুরুষাসক্ত। জমিদার এটাকে অন্যায় মনে করেনি। কিন্তু পুত্র যে তার দেয়ার চেয়ে নেয়াতেই পটু। নুনুখোর পোলা নিয়ে তিনি করবেন টা কি! একমাত্র পুত্র। ফেলে দেয় কিভাবে। জমিদার বেশ কিছুদিন মন খারাপ করে থাকলেন। তারপর ব্যাপারটা মেনে নিলেন।

ছেলেটার সুখের জন্য তিনি গুপ্তচর লাগালেন। তার ও আশপাশের জমিদারের এলাকায় বড় পুরুষাঙ্গ যুক্ত ব্যক্তি খুঁজে আনার জন্য। গুপ্তচর বেশ কয়েকজন তাগড়া যুবক ধরে আনলো। তাদেরকে নগ্ন করে জমিদারের সামনে দাঁড় করানো হলো। জমিদার প্রায় অজ্ঞান হবার জোগাড়। একজনের যৌনাঙ্গের সাইজ সাড়ে আঠারো ইঞ্চি। ও হরি। এটা কিভাবে সম্ভব। জমিদারপুত্রের মনোরঞ্জনের জন্য তাকেই নির্বাচন করলেন। লোকটার নাম মদন।

মদনের সাথে পুত্রের প্রথম মিলনের রাতকে ফুলসজ্যার মত করে সাজিয়ে দিলো সাজার চেলারা। পুত্র মদনের সাথে রতিকর্ম কমে খুবই তৃপ্ত হলো। বাবার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ভালোবাসা তার কয়েক হাজার গুন বেড়ে গেলো। মদন জিংসিং না খেলে কি হবে তার শক্তি দেখার মত। কুকুরের মত জোড়া লাগলে আর ছাড়ে না। পুত্র উত্তেজনায় বেশ কয়েকবার চিৎকার দিতে বাধ্য হলো।

এদিকে জমিদার সাহেব সারারাত ঘুমাতে পারলেন না। মহা দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। এত বড় জিনিস পুরোটা ঢুকালে যদি তার পুত্র মারা যায় তবে তো তিনি নির্বংশ হবে। বংশরক্ষা না হলে তো তার স্বর্গলাভ হবে। কিছু একটা করা দরকার।

পরদিন ভোরে চারদিক ফর্সা হওয়ার আগেই জমিদারের চামচা গিয়া মদনকে ধরে নিয়ে এলো। জমিদারের সামনে মদনের পুরুষাঙ্গ মেপে অর্ধেকে একটা লাল ফিতা বেঁধে দিলো। আর কড়া করে নির্দেশ দিলেন, এর বেশী ঢুকালে তোমার গর্দান নেন। জমিদার, রাজা বাদশারা যে কথায় কথায় ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা করতে ওস্তাদ সে আর নতুন কি।

দ্বিতীয় রাতে জমিদারের কথামত মদন অর্ধেকটাই ঢুকালো। কিন্তু জমিদার পুত্র মোটেও মজা পাচ্ছে না। সে বলল, “ কালকে ছিলো পুরো, আজকে কেন আঁধা ”
মদনঃ তোমার বাবার লাল ফিতা যে আমার ধোনে বাঁধা।
জমিদারপুত্রের রাগ হলো। সে মহা ক্ষেপে বললঃ মারো গুতা, ছিঁড়ুক ফিতা, বাবার গালে পড়ুক জুতা।
ওইদিকে জমিদার মশাই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করছিলেন মদন তার কথা শুনে কিনা।

কিন্তু পুত্রের এই কথায় তিনি রাগে চিৎকার করে উঠলেন, "ওরে মদনা, দে ভইরা, সাউয়ার পোলা জাকগা মইরা।”



বিঃদ্রঃ নিজ দ্বায়িত্বে পড়িবেন। হস্তমৈথুনের জন্য কোনক্রমে শুভ্র ভাই দায়ী নহে।

সমকামী মুসলমান হওয়াই কি অপরাধ?

আজকাল ফেসবুকে এক শ্রেণীর মানুষের মাঝে নিজেকে গোপন করার তত্ত্ব প্রকাশ করতে দেখছি। তাদের মত না হলে নাস্তিকদের মত সমকামীদেরও উগ্র মৌলবাদীদের জিঘাংশার শিকার হতে হবে। নিজের হৃদয়াপোলব্ধি থেকে আমি বুঝতে পারি আমার ছেলেদের আকর্ষন কাজ করে এবং জীবনের বাকী অংশ একজন পুরুষের সাথে কাটিয়ে দেয়ার বাসনা হৃদমাঝারে অংকুরিত হয়। আচ্ছা সমকামী হওয়ার কারণে আল্লাহ সুবহানু তায়ালা কি আমাকে ঘৃণা করেন? আল্লাহ এই সমগ্র বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেছেন। এবং তিনি এও এরশাদ করেছেন যে বিনাকারণে তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করেন নাই। সন্তান যতবড় অপকর্ম করুক না কেন একজন পিতা মাতা তার সন্তানকে কখনো ঘৃণা করেন না। তাহলে স্রষ্টা কিভাবে তার আপন সৃষ্টিকে ঘৃণা করবেন। তিনি তো রহমানির রহিম।

শুধু মুসলিম বললে ভূল হবে বাঙালি সমাজের লোকেরা সকল হিজড়াকে সমকামী হিসেবে জানে। মা অনেক সময় বলেন, "তোমার কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবে, কারণ আমার মত কেউ তোমার আপন হবেনা "। আমি আমার বাবা মাকে সব সত্য বলে দিতে চাই। কিন্তু পরক্ষণেই আমি ভয়ে পিছিয়ে যাই। আমি আমার বাবা মাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আমি পুরো সমাজের কাছে তাদের লাঞ্চিত করতে পারি না। আমি চাইনা সমাজ তাদের এক ঘরে করুক। আমি কখনোই চাইনা তাদের সন্তান গে হওয়ার অপরাধে সমাজের কাছে তারা উপহাসের পাত্র হোক।

টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত বাঙালি বাবা মায়ের চিন্তাভাবনা আমাদের সবার জানা। ছেলে লেখা পড়া শেষ করে ভালো একটা চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করে নাতি নাতনীর জন্ম দেবে যাদের সাথে হেসে খেলে বুড়ো বয়সটা পার করে দেয়া যায়। চাপাকষ্ট বুকে নিয়ে বসত করি। ছোট ভাইয়ের সামনে বাবা মা আমার বিয়ের প্রসঙ্গ আলোচনা করেন। আমি লাজুক হাসি, প্রসঙ্গ পরিবর্তনের চেষ্টা করি অথবা সেখান থেকে উঠে যাই। কিন্তু ভাবনায় সিডর, হৃদয়ে আইলা বয়ে যায়।



বিষমকামীরা যেভাবে মেয়েদের নিয়ে আলোচনা করে আমি আমার বন্ধুদের সাথে সেভাবে ছেলেদের নিয়ে কথা বলতে পারিনা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্কুল কলেজের বন্ধুদের সাথে মেয়েদের সৌন্দর্য্য নিয়ে আলাপ করতে হয়। আমি চিৎকার করে বলতে পারি না, "দোস্তরা, আমি গে!" অনেক সময় আমার বন্ধুরা গে দের নিয়ে কৌতুক করে। তাদের অট্টহাস্যে আকাশ ভারী হয়। আমি তাদের পাশে দু:খভারাক্রান্ত মনে নি:শ্চুপ বসে থাকি। সমকামীদের সমর্থন করে কিছু বলতে পারিনা। সব যুক্তি তর্ক তখন হাওয়া হয়ে যায়। আমি জনতার সামনে , বন্ধুদের সামনে অপমানিত হওয়ার সাহস রাখি না।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যেখানকার সমকামী ভাই বন্ধুটি তার জীবনটাকে নিজের মত করে উপভোগ করতে পারছে। তাদের আছে স্বাধীনতা। প্রকাশের স্বাধীনতা। পরিবারের কাছে, বন্ধুদের কাছে তারা সব খুলে বলতে পারে। আমার কল্পনাতেও যা কখনো আসবে না।

ছোটভাইয়ের সমকামী ক্লাসমেট

আমি ফেসবুকে খুব এক্টিভ হলেও চ্যাটে অতটা আন্তরিক নই তা তোমরা অনেকেই জানো। আসলে অনেক বছর ধরে চ্যাট করছি। ২০০৮ থেকে। সেই একই ধরণের চ্যাট। হাতে গোনা কিছু মানুষ বাদে অধিকাংশের চ্যাটিংয়ের বিষয় এজ সেক্স লোকেশান। এদের কাছে মনের থেকে ধোন বড়।

দ্বিতীয় স্বত্তা - দ্বিতীয় আইডি

ফেসবুক! বর্তমান পৃথিবীতে যদি ডিজিটাল সপ্তাচার্য নির্নয় করা হয় তবে অবশ্যই ফেসবুক প্রথম স্থান অধিকার করবে। আমার থেকে বছর দুয়েকের বড় মার্ক জ্যুকারবার্গ এমনই এক সামাজিক নেটওয়ার্ক আবিষ্কার করেছেন যা পুরো পৃথিবীকে খুব কাছে আনতে সমর্থ হয়েছে। মূহূর্তের মধ্যে দেশ বিদেশে বন্ধু, আত্মীয় পরিজনের সাথে আমরা নিজেদের মূহূর্তগুলো, অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে পারছি। অন্যান্য আরো সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইট আছে। তবে তারা ফেসবুকের মত এত বিস্তৃতি, এত ব্যপ্তি অর্জন করতে সমর্থ হয়নি।

রংধনু পতাকার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

রংধনু পতাকার ইতিহাস। আসলেই কি এই পতাকার কোন ইতিহাস আছে? একটি সত্যিকারে পতাকার নকশা করা যায় না, তা জনগনের আত্মা থেকে ছিঁড়ে আনতে হয়। যেটা হয়ে ওঠে গনমানুষের পতাকা। তোমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন কেন রংধনু পতাকা নিয়ে এত মাতামাতি। কেন সবাই প্রোফাইলে রংধনু পতাকা লাগাচ্ছে। তোমরা সবাই কেনর উত্তর জানতে চাও। গুগলে সার্চ দিলে সহজেই পেয়ে যেতে। তবু ইতিহাসস জানতে সবারই অনিহা। আমি কিছুদিন তোমাদের ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তোমরা সবাই বলো এগুলো জেনে কি লাভ! আমিও ভাবি এগুলো তোমাদের জানিয়ে কি লাভ। তোমরা নগদে সব লভ্যাংশ পেতে চাও। মোঘলদের ইতিহাস জেনে কি লাভ? তবু ইতিহাসের বইয়ে কেন ওগুলো পড়ানো হয়?

১৯৭০ সালের কথা। কানসাসে বেড়ে ওঠা যুবক গিলবার্ট বেকার। আর্মির চাকরি নিয়ে স্যান ফ্রান্সিসকোতে চলে আসেন। সেনাবাহিনী থেকে সম্মানজনক অব্যহতি পাওয়ার পরে বেকার স্যান ফ্রান্সিসকোতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার একজন শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। তিনি স্বপ্ন পূরণের পথে এগোতে চাইলেন। তিনি সেলাই শিখলেন। সত্তরের দশকের নজরকাড়া পোষাক সব তৈরী করতে লাগলেন।

১৯৭৪ সালে বেকারের সাথে মিল্কের পরিচয় হয়। মিল্ক বেকারকে দেখান কিভাবে কাজ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়। তিন বছর পরে মিল্ক স্যান ফ্রান্সিসকোর বোর্ড অফ সুপারভাইজার নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম প্রকাশ্য সমকামী ব্যক্তি যিনি আমেরিকার বড় একটি শহরের সরকারী উচ্চ পদে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাও জনগণের ভোটে। কাস্ত্রো সেন্টের মেয়র থাকার সময়ে মিল্ক সমকামী যুবকদের আশার বাণী শোনানোর জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি সবসময় বলতেন, "তারা (সমকামী যুবকেরা) একমাত্র আশা খোঁজে এবং তোমাদের (জনগণের) উচিত তাদের আশা দেওয়া।'' একদা সমকামী ব্যক্তিগন নিজেদের প্রতীক হিসেবে গোলাপী ত্রিভুজ ব্যবহার করতো। মূলত হিটলারের নাৎসী বাহিনী সমকামীদের চিহ্নিত করে হত্যা করার জন্য এই গোলাপী ত্রিভুজ ব্যবহার করতো। নির্বাচিত হওয়ার পরে মিল্ক গিলবার্টকে চ্যালেঞ্জ করলেন, সমকামী সম্প্রদায়ের জন্য এমন একটি প্রতীক তৈরী করতে যা নিয়ে তারা গর্ব করতে পারে।
 


মহা উৎসাহে বেকার কাজ শুরু করলেন। বেকার জুডি গার্লান্ডের গাওয়া, ওভার দ্যা রেইনবো থেকে অনুপ্রেরণা নেন। তিনি নিজ হাতে সুতায় রঙ করলেন। ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় আট রঙা বিশাল দুইটি পতাকা সেলাই করলেন। বেকার প্রতিটি রঙের ব্যাখ্যা লিখলেন।


  • গোলাপী- সেক্স্যুয়ালিটি বা যৌনতা
  • লাল - জীবন
  • কমলা - হিলিং
  • হলুদ - সূর্য 
  • সবুজ - প্রকৃতি 
  • আসমানী - শিল্প 
  • নীল - শান্তি 
  • বেগুনী - উদ্দীপনা

এখান থেকেই মূলত শুরু। ১৯৭৮ সালে স্যান ফ্রান্সিসকোতে  ''গে ফ্রিডম ডে''র আয়োজন করা হয়। এখানে হাতে তৈরী বেকারের কিছু রংধনু পতাকা ওড়ানো হয়। পরবর্তীতে বেকার প্যারামাউন্ট ফ্লাগ কোম্পানীর সাথে মিলে অধিক পরিমানে পতাকা তৈরী শুরু করেন। প্যারামাউন্ট সাতরঙা পতাকা তৈরী শুরু করে।

১৯৭৮ সালের ২৭ নভেম্ভর সকালে মেয়র জর্জ মোসকেন এবং সুপারভাইজার হার্ভে মিল্ক সিটি হলে আততায়ীর হাতে খুন হন। স্যান ফ্রান্সিসকো্র সমকামী সম্প্রদায় এই ঘটনায় ব্যথিত হয়। গে ফ্রিডম ডে কমিটি ১৯৭৯ সালের গে ফ্রিডম ডে প্যারেডের সময়ে মার্কেট স্ট্রিটের দুই পাশের লাইট পোস্টে সাতরঙা পতাকা ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। তারা রংগুলোকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দুইটি পতাকা তৈরী করে রাস্তার দুইপাশে টাঙালেন। তিন=তিন রঙ ব্যালান্স করতে তারা নীল রংটিকে বাদ দিলেন।

ছয় স্ট্রাইপের রংধনু পতাকা অচিরেই স্যান ফ্রান্সিসকোর অনেক বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উড়তে শুরু করলো। একই সময়ে গর্ব এবং আশার প্রতীক হিসেবে কফি মগ, টি শার্ট, বাম্পার স্টিকার ইত্যাদিতে রংধনু পতাকার নকশার ব্যবহার শুরু হলো।

আর এখন আমরা ফেসবুক প্রোফাইলে সাতরঙা আলপনা আঁকি।


 সাতরং নিজের সত্ত্বাকে প্রকাশের রঙ

টুম্পা ভাবী

গত মঙ্গলবার রাতের শিফটে ডিউটি ছিলো। যথাসময়েই ডিউটিতে ঢুকলাম। সিনিয়র বললেন, শুভ্র এদিকে আসেন। লোকটা পরিশ্রমী কিন্তু ব্যবহার খুবই খারাপ। তাই আমিও লাফ দিয়ে তার কাছে গেলাম। দুইশোর মত পাম্প মোটরের ডাটা মেলাতে হবে। মেলাচ্ছি দুজন মিলে। তিনিই বলছেন আমি লিখছি। দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর উপুড় হয়ে লেখা আমার জন্য কষ্টকর। হাইটের কারণে একটু বেশী ঝুঁকতে হয়। বিরক্তিকর হলেও বিরক্ত প্রকাশের সাহস পেলাম না। এমন সময়ে ফোন বেজে উঠলো। আড় চোখে তাকালাম। আমার ডেস্কে মোবাইল বাজছে। সিম্ফোনির চেনা সুর। সিনিয়র ভ্রুক্ষেপ না করে ডাটা বলে যেতে লাগলেন। আবার ফোন বাজলো। বেজে যেতে দিলাম। আবার বাজলো। সিনিয়র বলে না ফোনটা ধরেন। আমি প্রায় দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটার গলা টিপে ধরলাম। আবার লিখছি। আবার ফোন বাজে। আবার কেটে দিলাম। আবার ফোন বাজে। আবার কেটে দিলাম। আবার ফোন বাজে। আবার কেটে দিলাম। কয়বার হলো! অবশেষে কাজ শেষ হলো। 


প্যান্টের পকেটে হাত চালান দিলাম। অচেনা এয়ারটেল নাম্বার। বলতে গেলে কোন নাম্বারই চিনি না। শুধু যেগুলা সেভ করা থাকে কন্টাক লিস্টে ওগুলোকেই চেনা নাম্বার বলি। মুখস্ত বলতে নিজের, আব্বুর, আম্মুর এবং আমার কলেজ লাইফের এক বন্ধুর একটা নাম্বার মুখস্ত আছে। ছোট ভাইয়ের নাম্বারটাও মুখস্ত হয় নাই। ওগ হ্যাঁ কিশোর চাকমা এবং আরেকজনের নাম্বার মাঝে মাঝে কিভাবে ঠিক বলে ফেলতে পারি। আজিব। ডাবল সিমের ফোন। বাংলালিঙ্ক আর গ্রামীনের সিম লাগানো। দুই কোম্পানীর ফ্রির ম্যাসেজে ইনবক্স দুদিনেই ফিলাপ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় ক্লিন করেছি। দেখি ওয়ান আনরিড মেসেজ। খুলবো না খুলবো না করেও রিড বাটনে চাপলাম। নাহ এটা অফার মেসেজ না। রোমান অক্ষরে এক লাইন লেখা। ‘’ami tumpa’’ । মেমরি সার্চ দিলাম। টুম্পা নামে কাউকে কি চিনি? নাহ। ভার্সিটি লাইফের পর থেকে নারী জাতীর সাথে লেনাদেনা প্রায় চুকিয়েই ফেলেছি বলা চলে।

কে হতে পারে টুম্পা। আমি সব ভূলে গেলেও অনেক কিছুই তো মনে থাকে। নাহ টুম্পা নামে চেনা কারো মুখ মনের গুগলে ধরা পড়লো না। জিপি থেকে এয়ারটেলে ফোন দিলে এত্ত গুলা টাকা কাটে। সাধে কি আর জিপিকে হারামীফোন বলা হয়। দিলাম ফোন। ওয়েটিং।

মিনেট পাঁচেক পরে আবার ফোন দিলাম। স্টিল ওয়েটিং। ধ্যুর। যে হয় হোক। আমি শিফমেটের সাথে গল্প করছি। হঠাৎ ওই নাম্বার থেকে মিসকল এলো। কেয়ার করলাম না। দশ পনেরও মিনিট পরে ফোন এলো। ডিরেক্ট কল। ওপাশ থেকে সুরেলা গলা ভেসে এলো...

- হ্যালো।
- হ্যালো, স্লামালেকুম।
- নমস্কার।
- নমস্কার! আপনি কি নিশ্চিত আমি নমস্কার পার্টি?
- হ্যাঁ।
- কে বলছিলেন।
- ওমা বিয়ে করছেন, বাচ্চা হওয়াইছেন। আর এখন বলেন আমি কে?
- আমি ঠিক বুঝলাম না। আপনি কি বলছেন!
- আমি তোমার বউ।
- আমার বউ? বিয়ে কবে করলাম?
- সেকি বাচ্চা হওয়াইছেন। আর এখন বলছেন বিয়ে কবে করলাম। আমি তোমার বাচ্চার মা!
- আমার বাচ্চার মা! কাম সারছে! আগে ভাবতাম লুঙ্গি বাচ্চার মা দাবী নিয়ে আসবে। এখন দেখি জলজ্যান্ত মানুষ সেই দাবী করে বসছে।
- খিল খিল খিল।
- বেশ মজা পেয়েছেন মনে হচ্ছে। এবার বলেন ভাই আপনি কে? অচেনা কারো সাথে তো সব কিছু নিয়ে মজা করা যায় না।
- এই তোমাকে না খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে।
- রাত দুপুরে স্বামীকে আদর করার ইচ্ছে জাগতেই পারে। দিনের বেলা কি স্বামীর দরকার নাই। এই মধ্যরাতে স্বামী খুঁজতে বেরিয়েছেন। পরিচয় বলেন ম্যাডাম।
- এই আমি তোমার হাত কামড়াবো।
- স্বামী যখন তখন হাত কামড়াবেন কেন। সব কিছুই কামড়াতে পারেন।
- নাহ। শুধু হাত কামড়াবো।
- কিছু আগে ফোন ব্যস্ত পেলাম, তখন কি অন্য কারো হাত কামড়াচ্ছিলেন।
- হ্যাঁ।
- ওহ বেশ পরকীয়া করেন মনে হচ্ছে।
- হ্যাঁ করি।
- বেশ বেশ। পরকীয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সকাল বিকাল পরকীয়া করেন, স্বামীর উপর চাপ কমান।
এর পরে লাইনটি কেটে গেলো। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানি এই সময়ে ফোন কেটে যায় না। ওপাশ থেকে কেটে দেয়া হয়। এর অর্থ এবার ব্যাক করো। ফ্রিতে পিরিতের আলাপ করি। কে না কে। আমি আর ব্যাক করতে গেলাম না। সিম্ফোনিতে সব রেকর্ড হয়ে থাকে। দুই শিফমেট মিলে রেকর্ড শুনি আর হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়ি। শিফমেট থেকে থেকে বলে, এই আমি তোমার হাত কামড়াবো। আবার হাসির হল্লা শুরু হয়।
টুম্পা যেই হোক। আমাদের কিছু হাসির খোরাক দিয়ে গেছে। গতকালও শিফমেট বললো, ভাই তাও ভালো শুধু হাত কামড়াতে চাইছে। অন্য কিছু কামড়ে ধরলে কি হতো। আমি বললাম, কি আর হতো। বউ মানুষ। যা খুশী কামড়াক।
 
 

নিরো

দেশে দেশে সমলিঙ্গিক বা সমকামী বিবাহের স্বীকৃতি দেয়ার হিড়িক পড়ে গেছে। অনেকের ধারণা গে ম্যারেজ বা সমকামী বিয়ে একটি আধুনিক প্রথা বা ধারণা। আসলে কিন্তু তা নয়। সুদূর অতীতে সমকামী বিবাহের নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রাচীন সমাজে সমকামী বিয়ের কথা বলতে গেলে নিরোর কথা বলতে হয়। নিরো একজন নয় দুই জন পুরুষকে বিয়ে করেছেন। বাঙালির কাছে রোমান সম্রাট নিরো বাঁশি বাজানোর জন্য বিখ্যাত। কথিত আছে রোম নগরী যখন পুড়ছিলো তখন নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। সম্রাট নিরো সমকামিতাকে নোংড়ামির শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়েছিলেন।


রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের চতুর্থ স্ত্রী আগ্রিপ্পিনার ছেলে হচ্ছে নিরো। ক্লডিয়াসের প্রথম সন্তান ১৪ বছর বয়সী রাজপুত্র ব্রিট্টানিকাসকে আগ্রিপ্পিনা বিষপ্রয়োগে হত্যা করে নিরো সিংহাসন লাভের পথ পরিষ্কার করেন। অথচ ক্ষমতা লাভের পর নিজ মাকে হত্যার প্রচেষ্টা করে নিরো। প্রথম বার বিষপ্রয়োগে হত্যা ব্যর্থ হয়। এর পর ঘরের ছাদ ভেঙে চাপা দিয়ে, জাহাজ ডুবিয়ে মারার প্রচেষ্টা ব্যার্থ হলে নিজের সৈন্য পাঠিয়ে আগ্রিপ্পিনাকে হত্যা করে। নিরো দুজন মেয়েকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর নাম ক্লডিয়া অক্টোভিয়া, সম্রাট ক্লডিয়াসের মেয়ে। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত রাখতে নিরো ক্লডিয়াকে বিয়ে করে। গরম বাথ টাবে ক্লডিয়ার মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়। এর পিছনে নিরোর অবদান অনস্বীকার্য। এরপর নিরো পপায়া সাবিনাকে বিয়ে করেন। নিরো গর্ভাবস্থায় সাবিনাকে লাথি মারায় তার মৃত্যু হয়। নিরো বন্দীদের বাঘ সিংহের খাবার হিসেবে ছেড়ে দিতো। অনেকসময় বন্দীকে প্রাণীর চামড়া পরিয়ে কলোসিয়ামে কুকুর ও অন্যান্য বন্য জানোয়ারের হাতে ছেড়ে দিতো ছিড়ে খাবার জন্য। কিছু লোককে ক্রুশে ঝুলিয়ে মারে। রাজ প্রসাদের পার্টিতে আলো জ্বালাতে কিছু লোকতে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। এই ছিল নিরো। সম্রাট নিরো। টাইর‍্যান্ট বা স্বৈরশাসকের নিকৃষ্ট উদাহরণ। নিরো নিজের জন্য সুবিশাল প্রাসাদ নির্মানের নিমিত্তে কাউকে অবহিত না করে রোমের একটা অংশ পুড়িয়ে ফাঁকা করে ফেলে।


সাবিনার মৃত্যুর পর নিরো স্প্রাউস নামের এক সুদর্শন দাস বালককে বিয়ে করেন। রাজকীয় ভাবে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। বিয়েতে স্প্রাউসকে কনের সাজে সাজানো হয়। নিরো পরেন দিয়ে পোষাক। স্প্রাউসকে মেয়েদের পোষাক পরতে হতো এবং তার সভাসদগণ তাকে সম্রাজ্ঞী হিসেবে অভিবাদন জানাতো। নিরো স্প্রাউসের জেনিটাল বা শুক্রাশয় কেটে ফেলেন। এরপরে নিরো পিথাগোরাস নামের এক যুবককে বিয়ে করেন। আমাদের ছেলেবেলায় পড়া পিথাগোরারের উপপাদ্যের পিথাগোরাস ইনি নন। এই বিয়েতে কনের পোষাক পরেন নিরো। নিরোর নিষ্ঠুরতায় তার সৈন্য বাহিনী বিদ্রোহ শুরু করলে সে পালিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত নিরো আত্মহত্যা করে। স্প্রাউস বা পিথাগোরাস সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এক স্বৈরশাসকের সাথে বিয়ে হওয়ায় তাদের নাম হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে।

আকিলিস এবং প্যাট্রোক্লস

আজ প্রাচীন বিশ্বের ভালোবাসার আরেকটি গল্প শোনাতে চাই। গ্রীকদের গল্প। আমি নিজেও এই ব্যাপারে পড়াশোনা করার আগে বিশ্বাস করতাম প্রাচীন পৃথিবীতে সমকামী ভালোবাসা শুধু গ্রীকদের মাঝে ছিলো। কিন্তু আস্তে আস্তে জানার পরিধি বেড়েছে। গত কয়েকদিনে রোমানদের বেশ কিছু ইতিহাস তোমাদের শুনিয়েছে। সব যে ভালোবাসার তা কিন্তু নয়। গ্রীকদের ক্ষেত্রে বর্ণনাগুলোর একটা ব্যাপার হচ্ছে এরা সব গ্রীকদের বীরদের চরিত্রে দেবত্ব আরোপ করে। সকল বীরদের পিতা মাতা শেষ পর্যন্ত দেবতারা হন। আকিলিস এবং প্যাট্রোক্লসের ভালোবাসা জগৎবিখ্যাত। ট্রয় নামের চলচ্চিত্রে এই চরিত্র দুটি আছে। এই দুজনের মধ্যে কে প্রেমিক আর প্রেমিকা তা নিয়ে গ্রীকদের মাঝে অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু তারা সঠিক কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে নাই। অনেকে ধারণা করেন প্যাট্রোক্লস ছিলেন প্রেমিক কারণ তিনি বয়সে বড় এবং বিজ্ঞ ছিলেন অন্য দিকে আকিলিস ছিলেন বয়সে নবীন এবং লাস্যময় যুবক। বলা হয় বীরদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সব থেকে সুদর্শন।

আকিলিস এবং প্যাট্রোক্লস তরুন বয়সে একে অন্যের প্রেমে পড়েন। তারা একত্রে বেড়ে উঠেছেন। জ্ঞানী পন্ডিত কাইরনের কাছে অধ্যায়ন করেছেন এবং একই সাথে ট্রোজান যুদ্ধে যান। তাদের সম্পর্ক কি ভালোবাসার ছিলো নাকি যৌন সম্পর্ক ছিলো? অধিকাংশ সম্রান্ত গ্রীকদের মত তারা পায়ুকাম থেকে বিরত ছিলেন। আকিলিসের বক্তব্য অনুসারে তারা দুজনের উরুর মাঝে ভালোবাসার খেলা খেলেছিলো। আমি কি বোঝাতে চেয়েছি নিশ্চয় বুঝতে পেরছেন। গ্রীকরা বিছানায় তাদের শক্তি সম্পর্কে অবগত না হলেও তারা কিন্তু তাদের বন্ধুত্বের শক্তি ঠিকই দেখতে পেয়েছে।

সুন্দরী হেলেনকে প্যারিস নিয়ে যাওয়ার পরে ট্রোজান যুদ্ধের সুত্রপাত হয়। সমগ্র গ্রীস ক্ষেপে উঠ। তারা আকিলিসের নেতৃত্ত্বে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ট্রয় নগরী দখলের জন্য নয় বছর ধরে যুদ্ধ চলে। গ্রীক সেনাপতি আগামেনন যখন সুন্দরী ব্রাইসিসকে ছিনিয়ে নেয় তার আকিলিসের কাছ থেকে তখন সে নিজেকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেই। সাহসী আকিলিস যুদ্ধ ক্ষেত্রে না গিয়ে নিজের তাবুতে বসে থাকেন। ওদিকে গ্রীসের বীরেরা ট্রোজান সেনাপতি হেক্টরের নেতৃত্ত্বে আক্রমনে একের পর এক নিঃশেষিত হতে লাগলো। আকিলিস ভ্রুক্ষেপই করলো না। কিন্তু যখন তার প্রাণের বন্ধু, তার ভালোবাসা, তার প্রেমিক মারা গেলো তখন সে যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে গেলো।


আগামেনন আকিলিসকে বারবার অনুরোধ করলো যুদ্ধে ফিরে আসার জন্য। এমনকি ব্রাইসিসকে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতীজ্ঞা করলো। কিন্তু আকিলিস নিশ্চুপ বসে রইলো। ট্রোজানেরা এক পর্যায়ে গ্রীক জাহাজগুলো পুড়িয়ে দিতে উদ্যত হলো। প্যাট্রক্লস আকিলিসের পোষাক পরে যুদ্ধক্ষেত্রে গেলো, মহা বিক্রমে সে ট্রোজানদের তাড়িয়ে নিয়ে গেলো। যুদ্ধের উত্তাপে প্যাট্রক্লস ফেরার কথা ভূলে গেলো। সে ট্রোজানদের ট্রয় ওয়ালের কাছাকাছি তাড়িয়ে নিয়ে গেলো। ট্রোজান প্যাট্রন অপল্লো পেছন থেকে প্যাট্রক্লসকে আঘাত করে। অতঃপর হেক্টর এক কোপে প্যাট্রক্লসকে হত্যা করে।


এই দুঃসংবাদ শুনে আকিলিস ধুলোর মাঝে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। প্যাট্রক্লসের দেহ ফিরিয়ে আনার পর আকিলিস তাকে পোড়াতে দিলো না। লাশের মাথার কাছ বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। স্বর্গ থেকে আকিলিসের মা দেবী থেটিস ছেলেকে সান্তনা দিতে নেমে এলেন।

আকিলিস উঠে নতুন যোদ্ধা সাজে নিজেকে সজ্জিত করে যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে গেলেন। গণহারে ট্রোজানদের কচুকাটা করতে লাগলেন। তিনি ট্রোজান রাজা প্রাইমের বড় সন্তান হেক্টরকে বধ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্যারিস অপোল্লোর নির্দেশ মত আকিলিসের গোঁড়ালিতে বিষাক্ত তীর মেরে তাকে হত্যা করেন। আকিলিস যাতে যুদ্ধে নিহত না হয় সেজন্য তার মা তাকে সাগরে ডুবিয়ে শুদ্ধ করেন। কথিত আছে তিনি পায়ের গোড়ালি ধরে ডুবান বলে এই অংশটি ভিজে নাই। সেজন্য শুধুমাত্র আকিলিসের গোড়ালিতে আঘাত করে তাকে মারা সম্ভব।


আকিলিস এবং প্যাট্রোক্লসের মৃতদেহ ভস্মীভূত করে তাদের ছাই একই কবরে সমাহিত করে গ্রীকেরা। তোমরা যারা চোখ দিয়ে পড়লে তারা শুধু একটা গ্রীক গল্প পড়লে। আর যারা মন দিয়ে পড়লে তারা নিশ্চয়ই দুই প্রেমিকের অমর প্রেমের গল্প পড়লে। যারা শুধু পাশাপাশি বাঁচতে চায় নাই। একজনের জন্য অন্যজন মরতেও পেরেছে। তারপরও কি গে রা ভালোবাসতে জানে না। তারা শুধু দেহসর্বস্ব প্রাণী! এই দুই বীরের জন্য, এই প্রেমিক যুগলের জন্য দুফোঁটা চোখের জল রেখো তোমার মনের কোঠায় যদি তুমি ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করতে চাও।

ব্রুনো ভোগেল

ব্রুনো ভোগেল একজন সমকামি সাহিত্যিক। ১৮৯৮ সালে জার্মানীর লিপজিগ শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯১৬ সালে মাত্র সতেরও বছর বয়সে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। ১৯২২ সালে একটি সমকামী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন, জেমেইন্সচার্ফ উইর যার অর্থ আমরাই সম্প্রদায়। সমকামী হওয়ার কারণে তার পিতামাতা তাকে ঘাড় ধরে রাস্তায় বের করে দেন। এরপর তিনি বার্লিন চলে আসেন। বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন তিনি। আমার জন্মের এক বছর পরে এই সংগ্রামী মানুষটি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান। আমরা সমকামীর কিছু করতে চাই আর আমাদের থেকে অতি বিরুপ পরিবেশ জন্মেও এই মানুষগুলো কিছু করে দেখিয়ে গেছে। হাল ছেড়ো না বন্ধু। জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করো।

ইফতি নাসিম

ফয়সালাবাদ, পাকিস্তান। ১৯৪৬ সাল। উপমহাদেশ জুড়েই তখন বিভাজনের গুঞ্জন। এমনি এক সময়ে বৃহৎ এক পরিবারে জন্ম হয় একটি ছেলের। ছেলেটির নাম রাখা হয় ইফতি নাসিম। ছেলেটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এক সময় সে আবিষ্কার করে সে অন্য দশজনের মত নয়।অন্যদের মত সে মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে না। সে নিজেকে বড় অসহায় এবং একাকি বোধ করতে থাকে। পাকিস্তানে সমকামী পুরুষের প্রকাশ্যে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। ইফতি লাইফ ম্যাগাজিনে একবার একটা আর্টিকেল পড়েছিলো। আমেরিকা হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে গে রা মুক্তভাবে বেঁচে থাকতে পারে। মাত্র ২১ বছর বয়সে নিজের মত করে বাঁচার জন্য ইফতি পাকিস্তান ত্যাগ করে। পৌঁছে যায় আটলান্টিকের ওপারের দেশ আমেরিকায়। সেখানে সে দক্ষিণ এশীয় সমকামী যুবকদের সহায়তা করার জন্য সাংগাত নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি নারম্যান নামে একটি কবিতার সংকলন প্রকাশ করেন। নারম্যান হচ্ছে উর্দু ভাষায় সমকামী থিমের উপর প্রথম রচিত কবিতার বই। বইটি প্রকাশের পরে পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। নারম্যানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

নারম্যান ফারসি শব্দ। এর অর্থ হার্মাফোডাইট, অর্ধ নারী- অর্ধ নর। ব্যাপক বাঁধা সত্বেও পাকিস্তানে নতুন ধারার এক কবিতা লেখার চল শুরু হয় যাকে বলা হয় নারমানি যেখানে নবপ্রজন্মের কবিরা অকপটে পুরুষ প্রেমের কথা স্বীকার করার সাহস রেখেছেন।


আল ফাতিহা

প্রতিটি সমকামী মানুষ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত বাস করে। জনারণ্যের মাঝেও তারা একলা পথিক। সমস্যা, কষ্টগুলো তারা নিজের মাঝেই পুষে রাখে পোষা পাখির মত। তবে কিছু কিছু সমকামী মানুষ আছেন। যারা ব্যতিক্রম। যারা অন্য সমকামীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ সমকামী সংগঠন খ্রিস্টানদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গোঁড়া মুসলিম স্কলাররা এগুলোকে বিজাতীয় তকমা লাগিয়ে দিয়েছেন। আচ্ছা এমন কি কোন মুসলিম সমকামী প্রতিষ্ঠান নেই? আছে। আল ফাতিহা এমনই একটি প্রতিষ্ঠান। মুসলিম সমকামী ব্যক্তিদের সমর্থন দিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় আল ফাতিহা। আল ফাতিহা শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আল ফাতিহা পবিত্র আল কোরআনের প্রথম সুরা। আল ফাতিহা মানে শুরু।

চটি

চটি শব্দটার সাথে আমার পরিচয় ছেলেবেলাতেই। চটি পায়ে চটরপটর করে হেঁটেছি কত তার ইয়ত্তা নেই। বাবার চাকরি সূত্রে ছেলেবেলা কেটেছে বারো জায়গার তেরো মানুষের সংস্পর্ষে। তাদের কেউ জুতাকে বলতো চপ্পল, কেউ বা চটি, কেউ বা স্যান্ডেল। আমরা অবশ্য বলতাম জুতো। আরেক জাতের যে চটি আছে তার সন্ধান পাই খুলনা পাবলিক কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময়ে। আমি ছিলাম একাদশ শ্রেণী, বি গ্রুপে। রোল ছিলো... নাহ রোল বলবো না। তো সহপাঠীদের অনেকেই দেখতাম লুকিয়ে ছোট ছোট বই নিয়ে আসতো। ব্যাগের আড়ালে লুকিয়েই পড়তো। এগুলো নাকি চটি বলে!

নিষিদ্ধ গল্প লেখা


নিষিদ্ধ গল্প লেখা যে চাট্টিখানি কথা নয় সে আমি কলেজ জীবনেই টের পেয়েছি। কিভাবে সে গুল্প বলার আগে বলি কিভাবে আমার লেখালেখি শুরু হলো। আব্বুর ছাত্রজীবনের গোটা দশেক বই লুকিয়ে পড়ার মাঝ থেকেই আমার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। ক্লাশ টেনে পড়ার সময় কবি হওয়ার সখ জানেবাক্যের অন্তমিল ঠিক রেখে কবিতা লিখতাম। যদিও সেগুলো গুনে মানে কোন দিকেই কবিতা হয়ে উঠতো না। তবুও সেই অখাদ্য কবিতাগুলো আমি ধরে বেঁধে অনেককেই শোনাতাম। প্রশংসা পেতাম না কারো কাছে। ভাবতাম সবাই আমার প্রতিভাকে হিংসা করছে। কয়েকদিন পরেই লেখালেখির উৎসাহে ভাঁটা পড়লোএক উঠতি কবি মন কৈশোরেই প্রাণ হারালো।

কলেজে পড়তে খুলনা আসি। পাবলিক কলেজে পড়ার সময়ে চটি সাহিত্যের সাথে আমার পরিচয় হওয়ার কথা আগে এক নিবন্ধে বলেছি। তখনকার কথাই বলতে চাই। ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময়ে বয়রায় বিভাগীয় লাইব্রেরী আমি আবিষ্কার করে ফেললাম হঠাৎ করে। এর আগে লাইব্রেরী জিনিসটার সাথে আমার পরিচয় ছিলো না। লাইব্রেরী মানে ভাবতাম বইয়ের দোকান। কারণ আমাদের এলাকায় অনেক গুলো বইয়ের দোকানের নামের শেষে লাইব্রেরী ছিলো। বিভাগীয় লাইব্রেরীতে থরে থরে সাজানো বই। হাজার হাজার বই। বই পড়ার ঝোঁক আগেও ছিলো। লাজুক টাইপের থাকায় সহসা কারো সাথে মিশতে পারতাম না। বন্ধু কেউ নেই বললেই চলে। মেসের সবাই ছাত্র পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সারাদিন। অচেনা শহরে একলা আমি। প্রায়ই লাইব্রেরীতে সময় কাটাতে লাগলাম। দুই বছরে হাজার খানের উপন্যাস পড়া হয়ে গেছিলো আমার।

থাকতাম দৌলতপুরে। সবুজ সংঘের মাঠের ওদিকটাতে। এমনি সময়ে আমার মাঝে লেখক প্রতিভা জেগে উঠলো। লেখালেখি করতে মন চাইতো। কি লিখি কি লিখি! লেখার কিছুই পেতাম না। জানালার বাইরে তাকালে অনেক গুলো নারিকেল গাছের মাথা, রোদ ছাঁয়া, মেঘ দেখতে পেতাম। এগুলোর বর্ণনা লেখা শুরু করলাম। আস্তে আস্তে আমি কোন বর্ণনাকে লেখার অক্ষরে ফুঁটিয়ে তুলতে সমর্থ হতে শুরু করলাম। সবাই একটু আধটু প্রশংসা করতে শুরু করলো। কেউ কেউ বলতো আমার বর্ণনা পড়ে তারা নাকি বর্ণনাটা চোখের সামনে দেখতে পায়। আমি দ্বিগুন উৎসাহে লেখালেখি শুরু করলাম। প্রতিদিনই লিখতাম। স্কুল লাইফে আমার হাতের লেখা খুবই খারাপ ছিলো। বাংলার স্যার বলতো তেলাপোকার পাঁয়ে কালি মেখে ছেড়েদিলে নাকি এরকম লেখা বের হয়। ক্লাশের ফার্স্ট বয় হয়েও এই অপবাদ আমি ঘোঁচাতে পারিনি। কিন্তু গদ্য লেখা শুরু করার পর থেকে আমার হাতের লেখা ভালো হতে শুরু করে।

একদিন মনে হলো একটা চটি কাহিনি লিখে ফেলি। যেই ভাবা সেই কাজ। রুমের দরজা আঁটকে লিখতে বসে গেলাম চটি কাহিনি। তখন পর্যন্ত আমি চটি কাহিনি বলতে নারী পুরুষের যৌন দৃশ্যের বর্ণনাকেই জানি। গে চটি বলে যে কিছু আছে তার কথা জানাই ছিলো না। তো কাহিনীর লেখা শুরু করলাম। তিন লাইন সবে লিখেছি। মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। হাত কলম ছেড়ে অন্য কিছু ধরে বসেছে। গল্পের প্লট, গল্প বর্ণনা খুব দ্রুত মাথার ভিতরে হতে লাগলো। নায়ক নায়িকারা যার যার রোল ঠিকই প্লে করলো। শুক্রাণু বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হয়ে গেলো মধুরেণ সমাপয়েৎ। খাতায় কিন্তু সেই তিন লাইনই লেখা থাকলো মাত্র। ক্লান্ত শরীরে কি আর গরম গল্প আসে বলো!

এর পরে আমি আরো কয়েকবার চটি গল্প লেখার চেষ্টা করেছি। তবে কামের কাছে হার মেনেছি প্রতিবার। আমার আর চটিলেখক হওয়া হয়ে উঠলো না। আমার নিজস্ব ধারণা হচ্ছে চটি সাহিত্য লিখতে গেলে ভাষা জ্ঞান কোন রকম হলেই হবে কিন্তু লেখকের নিজের নার্ভের উপর কড়া কন্ট্রোল থাকতে হবে। গে চটির সাথে আমার পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে। খুব সম্ভবত সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময়। এই সময়ে আমি মোবাইল কিনি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করা শিখি। তখন বাংলা গে চটি পাওয়া যেতো না। ফোনেরোটিকা নামের একটা সাইটে ইংলিশ চটি পাওয়া যেতো। ঐ সাইটের সব গুলো গল্প আমি পড়ে ফেললাম। এগুলোই আমাকে বেশী টানতো। কেন টানতো সে প্রশ্নের উত্তর বলাই বাহুল্য।

নিজের ছবি টবি দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করার শিক্ষা আমার হয় থার্ড ইয়ারে পড়ার সময়ে। এক সাইকোর পাল্লায় পড়ে। তারপর আমি বুঝলাম যে গে দের কে কখনো রিয়েল আইডিতে নিতে নেই। খুললাম ফেক আইডি। হয়ে গেলাম অনু পম। নামের মধ্যাংশ ভাঙার চল আমার আগে আমি আর কারো কাছে দেখিনি। নিজের ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে নিজেই মুগ্ধ হলাম। টুকটাক লেখা শুরু করলাম। সাহিত্য প্রতিভা বিকশিত হতে লাগলো। ২০১০-১১ সালের দিকে আমি শিখে গেলাম কিভাবে খারাপ শব্দ ব্যবহার না করে ভাবকে প্রকাশ করা যায়। এই সময়ে কেউ একজন প্রায়ই আমাকে ভদ্র চটিলেখক বলে অভিহিত করা শুরু করলো। তার নাম ঠিক মনে নেই। কিন্তু তার উপমাটা আমার মনে আছে। তখনকার সময়ে আমি সেক্স সিন বর্ণনা না করলে তার আগের দৃশ্য পর্যন্ত দক্ষতার সাথে বর্ণনা করতে পারতাম।

২০১৩ সালে অনু আড্ডা লিখে বেশ হাত পাকাই। ২০১৪ সালে লিখি লাইফ উইদাউট লাভ। নিজের নাম ব্যবহার করে লিখতাম বলে অনেকে ভাবতো এটা আমার নিজের জীবনের গল্প। আসলে এটা মোটেও আমার নিজের জীবনের গল্প নয়। আমি কখনোই গ্রামে বড় হয়নি এবং আমার জীবনে এরকম উথাল পাথাল প্রেম আসে নি। তবে পাঠকের আগ্রহ যাতে না কমে সেজন্য কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি তাদেরকে ক্লিয়ার করতাম না যে এটা আসলে আমার নিজের জীবনের গল্প নয়। এই সময়ে আমি বেশ কিছু গল্প লিখেছি। যদিও আমার গল্প গে পাঠকেরা খুব একটা খায় না। কারণ আমার গল্পে পুতু পুতু প্রেমের বড়ই অভাব থাকে। অথচ গে পাঠকেরা এই জিনিস খুবই লাইক করে। বাস্তবতা যেন তাদের বড়ই অপছন্দ। আজকাল অনেক গে লেখক গল্প লিখছেন। দুয়েকজন তো ক্লাসিকাল মানের গল্প লেখেন। যেমন একলা পথিক, আনন্দ ধারা। তবে অধিকাংশ লেখক অনেক স্বপ্ন মাখা গল্প লেখেন। তাদের গল্পের নায়কেরা প্রেমের জোয়ারে ভেঁসে যায়। তারা স্বপ্ন দেখায় পাঠককে। কিন্তু গে জীবনে এটা কোন বাস্তবতা নয়। এটা চরম মিথ্যা। এখানে ভালোবাসা মানেই শারীরিক ক্ষুধা। নগদে পাওয়ার লালসা।


২০১৫ সাল আমি নব উদ্যমে লেখালেখি শুরু করি। সমকামী সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা, ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করি যা এই পৃথিবীর মানুষগুলো বার বার ভূলে যেতে চেষ্টা করেছে। ট্রয় সিনেমায় আকিলিস এবং পেট্রোক্লসকে কাজিন হিসেবে দেখানো হয়েছে অথচ তারা প্রেমিক ছিলো এই কথা ভূলেও উচ্চারণ করেনি কোথাও। সমকামিরাও তাদের ইতিহাস জানতে চায় না। ভূলে থাকতে চায়, বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত একাকী বাস করতে চায়। যেন লুতের কওম এবং তার মাঝে আর কোন সমকামিতার ইতিহাস ছিলো না। সাধারণের কথা বাদ দিলাম যারা সমকামীদের নিয়ে কাজ করে তারাও ইতিহাসের দিকে চোখ বুলাতে চায় না। তারা শুধু বর্তমানকেই চায়। বর্তমানকে বদলে দিতে চাওয়ার প্রচেষ্টা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। পৃথিবীতে সমধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সব মানুষ তার নিজের পছন্দ মত ভালোবাসার মানুষের সাথে জীবন অতিবাহিত করার অধিকার অর্জন করুক।

এলান টিউরিং: এক সমকামী প্রেমিক এবং বিজ্ঞানী

এল্যান টিউরিং, এক ব্রিটিশ বালক। ক্লাসে কোন বন্ধু নেই। সদা একাকী। অন্যেরা সব সময় তাকে নিয়ে উপহাস করে, বিদ্রুপ করে, আক্রমন করে। এলান বিদ্ধস্ত হয়। এই সময় তার পাশে এসে দাঁড়ায় সহপাঠী ক্রিস্টোফার। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরী হয়। ক্রিস্টোফারের কাছ থেকে এলান ক্রিপ্টোগ্রাফী সম্পর্কে ধারণা পায়। আগ্রহ জন্মে। এ এমন এক কোডিং ভাষা যা কেউই বোঝে না। এলান ক্রিস্টোফারের প্রতি দুর্বলতা বোধ করে। কিন্তু তাকে বলা হয় না ভালোবাসি। এক গ্রীষ্মের ছুটিতে ক্রিস্টোফার বাড়ি যায়। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এল্যান। সবাই ফিরে আসে। ক্রিস্টোফার আসে না। খবর আসে টিউবারকুলোসিসে ক্রিস্টোফার মারা গেছ।

অমিশুক এল্যান পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্বিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রিপ্টোগ্রাফি নিয়ে সরকারী ভাবে কাজ করার নির্দেশ পায়। তাদের কাজ ছিলো এমন একটি মেশিন নির্মান করা যা দিয়ে জার্মান বাহিনীর পাঠানো ক্রিপ্টেড মেসেজ কে ডিক্রিপ্টেড করা যায়। সহযোগীদের সাথে নিয়ে দিন রাত কাজ করে এল্যান। অনেক প্রতিকূলতা সত্বেও সে তার যন্ত্র ক্রিস্টোফার মেশিন তৈরী করতে সক্ষম হয়। হ্যাঁ এই নামই এল্যান রেখেছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে এই মেশিন আবিষ্কারের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দুই তিন বছর আগেই শেষ হয়ে যায়। ১৪ মিলিয়ন মানে ১৪০ লক্ষ মানুষের জীবন বেঁচে যায়। বিজ্ঞানীরা এই মেশিনকে বলেন টিউরিং মেশিন। এই যন্ত্রের উপর গবেষণা চলতে থাকে। এরই পথ ধরে এক পর্যায়ে চমৎকার এক যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়। যাকে আমরা বলি কম্পিউটার। 

এল্যানের সমকামী চরিত্রের কথা প্রকাশিত হয়ে যায়। আদালত তাকে হরমোন চিকিৎসা নিতে বাধ্য করে। কারণ সেই সময় ব্রিটেনে সমকামিতা নিষিদ্ধ ছিলো। হরমোন চিকিৎসা শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় এল্যান আত্মহত্যা করে। এল্যানের ধারণা ছিলো সে চিকিৎসা নিলে ক্রিস্টোফারের স্মৃতি মুছে যাবে। যে মানুষটির জন্য ১৪০ লক্ষ লোকের জীবন বাঁচলো সেই মানুষটিকেই মহান সভ্য দেশ বাঁচতে দিলো না। কি অপরাধ ছিলো? পঞ্চাশ বছরেরও বেশী সময় পরে ব্রিটেন এল্যান টিউরিংয়ের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ এটা তার জীবৎকালেই বেশী দরকার ছিলো।

রোমানদের অদ্ভুত সমকামী শাস্তি!

পায়ুকামের প্রথা প্রাচীন। লিখিত সূত্র ধরে এগোলে এর মূল খূঁজে পাওয়া যায় ইব্রাহিম আলাহিওয়াসালামের যুগ পর্যন্ত। কিন্তু যেহেতু বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি দেবো তাই ইব্রাহিম না বলে আব্রাহাম বলবো। বাইবেলীয় সময়ে মৃত সাগরের নিকটবর্তী এলাকায় সোদম বলে একটি জনবসতি ছিলো। তখন তো আর ডেড সি ছিলো না। এই এলাকা ধ্বংস করে দেয়ায় ডেড সি'র উৎপত্তি হয়েছে। বর্তমানে যে জর্ডান দেশ আছে ওখানে। কেন ধ্বংস করে দেয়া হলো এই এলাকা। আসুন বাইবেলের পাতা উল্টাই। জেনেসিসের ১৯ নং অধ্যায়ের ৫ থেকে ৮ নম্বর বাক্য বর্ণণা করা যাক। "গড মনোক্ষুন্ন হলেন - তিনি কিছু প্রতিবেশী শহরসহ এলাকাটি ধ্বংস করে দিতে চাইলে কিছু ভালো মানুষ যেমন তার ভাইপো লট (আরবিতে লুত (আঃ)) এবং তার পরিবারকে রক্ষা করতে আবেদন জানালেন। গড দুজন এঞ্জেল (দেবদূত বা ফিরিশতা) পাঠালেন ইনভেস্টিগেট করতে। নতুন মাল দেখে খুব শীঘ্রই পায়ুকামী ব্যক্তিদের দ্বারা তারা আক্রান্ত হলেন। ঐশ্বরিক অথিতিদের রক্ষা করার লক্ষ্যে লট তার যুবতী দুই কন্যাকে জনসন্মুখে হাজির করে করে বললেন, এদেরকে নাও, এরাও ভার্জিন!"

আপাতত বাইবেল বন্ধ করেন। একটা প্রশ্ন রাখি। হোক লুত নবী ছিলেন। কিন্তু তিনি তো একজন পিতা ছিলেন। একজন পিতা কিভাবে পারেন সমকামিতাকে বন্ধ করতে নিজের মেয়েদেরকে গণধর্ষণের মুখে ঠেলে দিতে যারা কিনা কুমারী ছিলো, যাদের সত্বীচ্ছদ পর্দা তখনো ফাঁটে নাই। যাই হোক এই সব জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর দেয়ার কেউ নাই। প্রশ্ন করলে পাদ্রী থেকে মৌলভী তেড়ে মারতে আসে। আসুন বাইবেল থেকে আল কোরআনে যাই। পবিত্র কোরআনের ১৪ জায়গায় সমকামিতার উল্লেখ আছে। এক জায়গায় সমকামিতার অপরাধে সোদম ও গোমরাহ নগরবাসী তথা আদ, সাদ ও লুত (আঃ) এর কওমকে ধ্বংস করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ফিরিশতা জিবরাইল (আঃ) এসে ঐ স্থানকে উলটে দিলে মৃত সাগরের জন্ম হয়। মৃত সাগরের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবনের উপস্থিতির কারণে সেখানে কোন প্রাণী জন্মে না। এজন্যি এটার নাম মৃত সাগর। অতিরিক্ত লবনের ঘনত্বের কারণে আপনি এখানে ভেসে থেকে পেপার পর্যন্ত পড়তে পারবেন। ইংরেজীতে পায়ুকামকে সোডোমি বলে যা এই সোদম নগরের নাম থেকে এসেছে।

এইবার ধর্মীয় বই থেকে চলেন ইতিহাস পড়ি। ইতিহাসে সমকামীতার উদাহরণ ভূরি ভূরি। গ্রীক রোমান যুগে এটা তো উচ্চমার্গে পৌঁছে গিয়েছিলো। মহামতি আলেক্সান্দার দ্যা গ্রেটের বয়ফ্রেন্ড ছিলো। এমনকি সেই সমাজে প্রকাশ্যে সমকামিতা প্রচলিত ছিলো। যারা আলেক্সান্ডার চলচ্চিত্রটি দেখেছো তারা নিশ্চয় একটা দৃশ্যে দেখেছো যুবক আলেক্সান্ডারের পিতা সম্রাট (নাম মনে পড়ছে না) প্রকাশ্য পার্টিতে আগত এক যুবকে চেপে ধরে মেরে দিলেন। তবে সেটা মোরগ সেক্সের মত এত সংক্ষিপ্ত ছিলো যে ঠোঁটের কোনায় হাসি আসলোই। একটা মজার আইনের কথা বলে আজকের কচকচানি শেষ করবো। আমি জানি সবাই না হলেও অনেকেই তোমরা এই দীর্গ স্ট্যাটাসের এই পর্যন্ত চলে এসেছো। গ্রীকো-রোমান যুগের শেষ ভাগে সমকামিতা তার সৌন্দর্য্য হারায়। তখন নারীকামিতাই সেক্সের মূখ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। এই সময় পেডিকো বলে একটা আইনের প্রচলন হয়। নারী পুরুষের যে কেউই এই আইনে শাস্তি পেতো। এই আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি পা* মারার সুযোগ পেতো। অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তি বিশাল সাইজের একটি র‍্যাডিশ বা মুলা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারতো। কোথায় নিয়ে দাঁড়াতে হতো সেটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে শেরপুরের নাঁটাকে জিজ্ঞেস করো। গুগল সার্চ থেকে জানা যায় সে এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যের মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী! লুল।

রোমান সাম্রাজ্যে সমকামি অধিকার!

সমকামিতা সম্পর্কিত পোস্টগুলোতে ফেসবুকে প্রচুর মন্তব্য পাচ্ছি। 
মন্তব্য সে পক্ষে হোক অথবা বিপক্ষে যুক্তিপূর্ণ এবং গঠনমূলক হলে ভালো লাগে। অনেকে দাবী করছেন যে আমি আমার লেখায় সমকামিতার প্রচার করছি। আমার কিন্তু সেরকম মনে হয় না। আমি সমকামিতার পক্ষে বা বিপক্ষে কোন মত দেই নাই। জাস্ট বাইবেল এবং আল কোরআনের রেফারেন্স ধরে কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। আমি শুধু সমকামিদের একটি মেসেজ দিতে চাই যে সমকামিতা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সমকামি ব্যক্তিগণ সবাই নিজেকে আইসোলেটেড ভাবে। নিজেকে বড় একা ভাবে। জনমানুষের ভীড়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত বেঁচে থাকে। অথচ তার মত যুগে যুগে হাজার বছর ধরে মানুষের মাঝে সমকামিতা ছিলো। কখনো কখনো সেটা হয়ে গেছে সমপ্রেমিতা।

আমি তাই পুরাতন পূঁথি ঘেঁটে আপনাদের জানাতে চাই ইতিহাস। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন এগুলো জেনে কি হবে? জেনে আসলে কি হয়! আমি নিজেই জানিনা। চাঁদে মানুষ গেছে, মঙ্গলে রোবট। আমরা জেনেছি। জেনে কি হয়েছে। তবে আমি জানতে ভালোবাসি। আমি পড়তে ভালোবাসি। এটাতেই আমার আনন্দ। আজ আমি আপনাদের প্রাচীন রোম সমাজে সমকামিতা সম্পর্কে হালকা কিছু তথ্য জানাবো। প্রাচীন রোম বলতে অনেকের মাথায় দুই চারশো বছর আগের কথা আসে। এটা কিন্তু তারও আগে। তখন ইসলাম কি খ্রিস্টান ধর্মের আগমন ঘটেনি পৃথিবীতে। ইহুদী ধর্মের রাজত্ব চলছে। গ্রীক-রোমানরা অবশ্য মূর্তিপূজারী। অনেকক্ষেত্রে ভারতীয় হিন্দুধর্মীয় কালচারের পূর্বপুরুষ বলা যেতে পারে। তখন গ্রীক সামাজ্র ও রোমান সাম্রাজ্যের হাত ধরে নগর সভ্যতা বিকশিত হচ্ছে। যিশু খ্রিস্ট্রের জন্মের এক শত বছর আগে রোমান সম্রাট হার্ডিয়ান প্রকাশ্যে নিজের সমকামী সত্তাকে প্রকাশ করেন। নিজের বয়ফ্রেন্ডের স্মৃতির জন্য মিশরের একটি গ্রামকে নগরে পরিনত করে নাম রাখেন এন্টিনোপোলিস। নির্মান করেন মন্দির। খ্রিস্টান ধর্ম এবং পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটে এই অঞ্চলগুলোতে। মন্দির গুলো মিশে যায় ধূলোয়। কিন্তু এন্টিনোপোলিস এখনো টিকে আছে। এখনো বর্ণনা করছে এক অমর প্রেমের গল্প।

রোমান সাম্রাজ্রে রোমান পুরুষেরা স্বাধীনভাবে অন্য পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো। এক্ষেত্রে তাদের কোন ধর্মীয় বা সামাজিক বাঁধা ছিলো না। তবে তাদেরকে পেনেট্রেটিভ বা টপ রোল প্লে করতে হতো। বটম রোল প্লে করলে তাদের পুরুষত্ব কিংবা সামাজিক মর্যাদা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো। অধিকাংশ সমলিঙ্গিক যৌনক্রিয়া গুলো তারা বন্দী, দাস অথবা পুরুষ পতিতাদের সংগে করতো। অবশ্য পতিতারা স্বাধীন নাগরিক ছিলো না। তারা দাস ছিলেন। রোমান পুরুষেরা ১২ থেকে ২০ বছরের কিশোর ছেলেদের যৌন সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করতো। অনেকক্ষেত্রে পতিতাদের বয়স বেশী হতো। এটা তাদের দেহ সৌকর্য্যের উপর নির্ভর করতো। প্রাচীন রোমান নারীদের মাঝে সমকামিতা সম্পর্কিত সেরকম কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

রোমান সাম্রাজ্যে মুক্তভাবে জন্ম নেয়া একজন পুরুষ সামাজিক ভাবেই একজন নারী বা পুরুষের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারতো। নারী এবং কিশোর ছেলে উভয়ই ছিলো কামনার বস্তু। কিন্তু বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে একজন পুরুষ শুধুমাত্র দাস অথবা পতিতাদের সাথে যৌনকর্ম সম্পাদন করতে পারতো। অন্য কোন রোমান নাগরিকের স্ত্রী, তার বিবাহযোগ্যা কন্যা, অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্র, অথবা তার সাথে যৌনকর্ম করা রোমান নীতি অনুসারে অমানবিক কাজ হিসেবে গণ্য হতো। তবে মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে তার দাস দাসীদের সঙ্গে যৌন ক্রিয়া বৈধ ছিলো।

আজ এই পর্যন্তই থাক। আশা করি জানতে আগ্রহীদের ভালো লাগবে। আগামীতে হিন্দুধর্মে সমকামিতার শাস্তি নিয়ে রেফারেন্সসহ একটা লেখা লিখবো। হিন্দু বন্ধুদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলছি। হিন্দু হয়ে মনুশাস্ত্রের কথা নিশ্চয় তুমি ফেলে দিতে পারবে না।


চিত্রঃ মৃত্তিকা নির্মিত তৈলবাতিদানে খোদাই করা দুজন মল্লযোদ্ধার যুদ্ধ অথবা পুরুষের যৌনক্রিয়া দৃশ্য। আমি মনে করি এই পটে শিল্পীর সুতীব্র বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটেছে।

পৃথিবীর প্রথম সমকামী যুগল!

শিরোনামটা বেশ চটকদার্। যদি বলি আমি এবং রাজ পৃথিবীর প্রথম সমকামী যুগল তো অনেকেই তেড়ে আসবে। পারলে লুঙ্গি খুলে মাথায় বেঁধে দেবে। যদিও আজকাল ঘুমানোর সময় ছাড়া লুঙ্গি পরা হয় না। বিশ্বাস এবং বিতর্ক দুটি ভিন্ন ধারা। মুসলমানেরা অবলীলায় মেনে নেয় পৃথিবীর প্রথম পুরুষ। একই ভাবে হিন্দুরা মনু এবং খ্রিস্টানেরা এডামকে বলে প্রথম পুরুষ। কিন্তু আমি কিছু বলতে গেলে অবশ্যই প্রমান দিয়ে বলতে হবে। নইলে মানবেন কেন!

লিখিত তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় পৃথিবীর এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া আদি সমকামী যুগল বাস করতেন মিশরে। সে একশো দুশো বছর আগে নয়। যীশু খ্রিস্টের জন্মের ২৪০০ বছর আগে। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে। সেই সময়ে প্রাচীন মিশরে স্বামী স্ত্রীকে একই কবরে কবর দেয়ার প্রথা প্রচলিত ছিলো। এরকমই এক কবরে দুজন রাজকীয় পুরুষের মমি আবিষ্কৃত হয়েছে। স্বামী স্ত্রীকে যেভাবে যৌথ কবরে সমাহিত করা হয় তাদেরকে সেভাবেই রাখা হয়েছে। তাদের নাম নিয়ানখখনুম এবং খনুমহোতেপ।

শবাধারে সংরক্ষিত হায়ারোগ্লিফিকস লিপিতে লেখা আছে "জীবনে একসাথে এবং মৃত্যুতে ও একসাথে"। ছোট অথচ কি গভীর উপলব্ধি ফুঁটিয়ে তুলেছে বাক্যটি। ইতিহাস বলে নিয়ানখনুমের স্ত্রী ছিলো। কিন্তু শবাগারের সকল চিত্রশৈলীতে নিয়ানখনুমের সঙ্গে তার স্ত্রীর বদলে খনুমহোতেপের চিত্র আঁকা হয়েছে।

আমার ধারণা তোমরা এই যুগলের নাম আজ প্রথম শুনছো। নামে কি আসে যায়! নিজের অনুভূতিকে ঠকিয়ো না। প্রাচীন পৃথিবীর মানুষ ভালোবাসতে পেরেছিলো তাহলে আমরা কেন পারবো না। একটাই তো জীবন। সারা জীবন ভালোবাসার প্রতীক্ষায় না থেকে আশপাশেই খুঁজে দেখো। কেউ না কেউ আছে তোমার প্রতীক্ষায়। যে তোমার হাত ধরাতেই জগতের সকল সুখ খুঁজে পায়। সব শেষে মিশরীয় এই যুগলের জন্য রেখে যাচ্ছি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলী।

ফেসবুক মন্তব্যঃ
লেখাটি প্রথমে ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তাদের মন্তব্যগুলো কপি করে দেয়া হলো।

Mahin Almas

ek kothay osadaron..

শ্রাবণ আহমেদ

জীবনে একসাথে এবং মৃত্যুতে.......। কি প্রেম.....!!

Hossain Khan M

Thanks.etihas pocarar jonnw

বন্ধু বুনোফুল

শ্রদ্ধাঞ্জলি

Tita Nic

khiseeeeee ...ki suniiii..... aaato valobasha !!!!!

সেমি কোলন

valobasa k eto besi highlight koro na....je joto besi valobashbe, se toto besi pain e vugbe....i think!!

Tita Nic

apni 100% true kotha bolsen ...@sami kolon

Suvro Mohammad

সেমিকোলন , ভালোবাসায় যাদের খাদ থাকে তারা তো বাঁশ খাবেই। পজেটিভ ভাবতে শেখো। তুমি বললে সেক্সকেও হাইলাইট করতে পারি।

প্রিন্স্ ফারহান

sottei onek valo laghlo kotha gula smile emoticon

আঁধারের কাব্য

কেউ তো ভালোবাসে না।যারা ভালোবাসতে চায়,তাদের স্ট্যাটাসের সাথে মিলে না।মানে উপযুক্ত না তারা।কি যে হবে!গড নোওজ!!!!

Romeo Prantik

তুমি রয়ে যাবে হৃদয়ে মম ||

Ahmed Tuhin

হয়তো ভালবাসার রং এখনো দেখিনি,হয়তোবা চিনে নেওয়ার মত সুযোগ পাইনি

ব্যার্থ জীবন

খুজে দেখ ঐ দুর আকাশে খুজে দেখ এই ভাদ্র মাসে পাবে আমাকে ফুলের সুবাসে...

Sonno Raj

fast jake valobasar kotha bolci r sei amar dorbolatar sojoge amar chokher pani jhoriase.tai naira bel tola akbari jay.

Dhrubo Islam

ভাল লাগল

Antohin Moho

HMmm janar acche onek kichu...


হিন্দু ধর্মে সমকামিতার শাস্তি!

হিন্দু ধর্মে সমকামিতার শাস্তি কি?
যারা সমকামী তা সে ধর্মেরই হোক তারা এটুকু জানেন সমকামিতার শাস্তি সম্পর্কে ইসলাম বরাবরই সোচ্চার। পবিত্র আল কোরআনের ১৪ জায়গায় সমকামিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীতে সমকামীদের কি শাস্তি হওয়া উচিত এই বিষয়ে কোন প্রত্যক্ষ বিধান দেয়া হয় নাই। তবে অধিকাংশ ধর্মবিশারদের মতে সমকামিতার শাস্তি রজম বা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা। খ্রিস্টান ধর্মেও সমকামিতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আব্রাহামিক রিলিজন বা ইব্রাহিমীয় ধর্মমত গুলোতে সমকামিতার বিপক্ষে এত প্রবল মত কেন এসেছে সে বিষয়ে আমার নিজস্ব একটি ধারণা আছে তবে তথ্যসূত্র দিয়ে সেটা প্রমান করতে পারবো না। এটা আমার একান্তই নিজস্ব ধারণা। তবে আজকে আলোচনা করবো হিন্দুধর্মে সমকামিদের কি বিধান রাখা হয়েছে।

এতদিন আমার ধারণা ছিলো হিন্দু ধর্মে প্রত্যক্ষভাবে সমকামিতার বিপক্ষে কিছু বলা হয় নাই। বন্ধু কাম ছোট ভাই রাজা বাবুর সহায়তায় বেশ কিছু তথ্য যোগাড় করতে সমর্থ হলাম। হিন্দুধর্ম সহ সকল মুর্তিপূজারী ধর্মে নির্দিষ্ট কোন গ্রন্থ নেই। তারা নিজেরাও বলতে পারে না কোনটি তাদের মূল ধর্মগ্রন্থ। ধারনাটি ভাসাভাসা। কেউ বেদ বললে অন্যজন বলে গীতা। তবে এই প্রশ্নের সমাধান করা আমার লক্ষ্য নয়। হিন্দুশাস্ত্রে তৃতীয় প্রকৃতি উল্লেখ পাওয়া যায়। এটা কি পুরুষের মাঝে নারী সত্তার উপস্থিতি অথবা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের উল্লেখ করা হয়েছে আমি নিশ্চিত নই। প্রাচীন হিন্দু সমাজের কোন কোন অংশ এই তৃতীয় প্রকৃতির পূজার উল্লেখ আছে। দক্ষিণ ভারতে অর্ধনারীশ্বর বলে একজন দেবতার পূজা করা করা হয়।

তবে সমকামিতাকে কি হিন্দু সমাজ গ্রহন করেছে? স্বীকৃতি দিয়েছে। না। হিন্দুদের ফিকাহ বা আইনশাস্ত্র বলা যায় মনুস্মৃতি কে।। এই গ্রন্থে হিন্দুদের জীবনাচারণের বিভিন্ন বিধান প্রদান করা হয়েছে। এই গ্রন্থের কয়েকটি স্থানে সমকামিতার শাস্তি উল্লেখ করা হয়েছে যদিও তা রজমের মত গুরুতর নয়। পৃথিবীতে এখনও ৪৪ টি দেশে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে জেলদন্ডের বিধান বলবৎ আছে। সৌদি, আরব, মিশরসহ অনেকে দেশে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। একদা ইতালিতেও সমকামিতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্দ দেয়া হতো।

হিন্দুধর্মে দেবদেবীদের মাঝে সমকামি বৈশিষ্টের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন দেবতা চন্দ্রের সৌন্দর্য্যে অনেক দেবতার মুগ্ধ হওয়ার উল্লেখ আছে। দেবদেবীদের বাইরে ভাগীরথের জন্মবৃতান্তে একটি থ্রিসাম গল্পে আছে। সন্তানহীন অবস্থায় অযোধ্যার রাজা দিলীপ মারা যান। থাকে তার দুই বিধবা স্ত্রী। এই সূর্য্যবংশে বিষ্ণুর অবতার হয়ে আসার কথা। কিন্তু বংশ নির্মুল হলে সেটা কিভাবে সম্ভব! তখন ব্রহ্মা এর প্রতিকার করার জন্য শিবকে পাঠালেন। শিব এসে দুই বিধবাকে বর দিলেন যে তাদের একজনের গর্ভে পুত্র সন্তান জন্মাবে। প্রমানের জন্য পড়ুন বাংলা কৃত্তিবাসী রামায়ণের আদিকাণ্ডের "গঙ্গার জন্ম-বিবরণ ও মর্ত্ত্যলোকে সগরের গঙ্গা আনিতে গমন ও ভগীরথের জন্ম" নামক পর্ব।

মনুসংহিতার অষ্টম অধ্যায়ের ৩৬৯ এবং ৩৭০ নম্বর ছত্রে দুজন নারীর মধ্যে সমকামিতা সংঘটিত হলে কি শাস্তি হবে তার উল্লেখ আছে।

*যদি দুই কুমারীর মধ্যে সমকামিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাহলে তাদের শাস্তি ছিলো দুইশত মূদ্রা জরিমানা এবং দশটি বেত্রাঘাত (Manu Smriti chapter 8, verse 369.)

* যদি কোন বয়স্কা নারী অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নারীর (কুমারীর)সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে,তাহলে বয়স্কা নারীর মস্তক মুণ্ডন করে দুটি আঙ্গুল কেটে গাধার পিঠে চড়িয়ে ঘোরানো হবে’ (Manu Smriti chapter 8, verse 370.)।

তবে নাঁটুবাবুরা কি ছাড়া পেয়ে গেলো? তারা কি ইচ্ছে মত পুরুষগমন করে বেড়াতে পারবে। জি না। তাদের জন্য কিঞ্চিত বিধান রাখা হয়েছে। কি সেটা? আসুন আবার মনুস্মৃতি খুলি। ১১ নম্বর অধ্যায়ের ১৭৫ নম্বর ছত্র।
*দু’জন পুরুষ অপ্রকৃতিক কার্যে প্রবৃত্ত হলে তাদেরকে জাতিচ্যুত করা হবে এবং জামা পরে তাকে জলে ডুব দিতে হবে (Manu Smriti Chapter11, Verse 175.)।

কি রে অস্টিন গত পূজোয় কেনা নতুন জামাটা পরে জলে ডুব দিতে রাজি আছিস তো! দিতেই কিন্তু হবে। রোমান সম্রাজ্যে দাসদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। তাদেরকে সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। তুমি যদি অন্য কারো দাসকে ধর্ষণ করো তবে সে রোমান আইনে তোমার বিরুদ্ধে সম্পত্তিহানির অভিযোগ আনতে পারতো। ভারতীয় সনাতন হিন্দু ধর্মও পুরুষকে সব কিছুর জন্যে উর্ধ্বে নিয়ে গেছে। স্ত্রী মারা গেলে স্বামী টোপর পরে কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে চলতো। না মরলে রাড়ী রাখতো। অন্যদিকে স্বামী মারা গেলে সদ্যবিধবা নারীকে বৈধব্যের জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে স্বামীর সংগে একই চিতায় জীবন্ত পুড়ে মরতে হতো। তথ্যসূত্র চাইলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব পশ্চিম প্রথম খন্ড পড়ে দেখতে পারেন।

ধর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই ধর্ম।

পর্ণস্টার জনি র‍্যাপিডের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার


বন্ধুগণ আজ আমি তোমাদের সাথে আমার অতি প্রিয় একজন মডেলের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করবো। তার নাম জনি রেপিড। সে একজন গে পর্ণো তারকা। সে শুধুমাত্র কিউট নয় সেই সাথে প্রতিভাবান পর্নো তারকা।সে রাফায়েল আলান্সারের মত বিখ্যাত বিশেষ অঙ্গের অধিকারী ব্যক্তির সাথে অবলীলায় পারফর্ম করে।২০১৪ সালে আমি অনু আড্ডার আয়োজন করি। এবারও সাক্ষাৎকার আনছি তবে সমকামী ব্যক্তিদের। বলাবাহুল্য সাক্ষাৎকার গুলো আমি নেইনি। অনুবাদ করছি বভিন্ন মাধ্যমে দেয়া তাদের সাক্ষাৎকার।তবে উত্তর অনুসারে প্রশ্নগুলো আমিই সাজাচ্ছি এজন্য প্রশ্নকারীর ভূমিকায় আমি থাকছি। 

শুভ্রঃ কেমন আছো?
জনিঃ ভালো আছি। 

শুভ্রঃ তোমার বয়স কত চলছে?
জনিঃ আমি ২১ বছর আগে জন্মেছি। 

শুভ্রঃ তোমার ব্যক্তিগত আগ্রহ সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলো।
জনিঃ আমি পছন্দ করি গাড়ি মেরামত করতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে এবং আমি ছয় বছর রেসলিং করেছি।

শুভ্রঃ তুমি পর্ণো ইন্ড্রাস্ট্রিতে কিভাবে এলে?
জনিঃ মডেলিংয়ের প্রতি আমার সবসময়ই দুর্বলতা কাজ করতো। ২০১১ সালে আমার চাকরি চলে যাওয়ার পরে আমি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলাম। আমি খোঁজাখুজির পরে Men.com কে খুঁজে পাই। 

শুভ্রঃ তুমি জনি রেপিড নামটি কেন নিলে?
জনিঃ জনি নামটা খুব সহজ, সবার মনে থাকে! আমার আসল নামটি এত ইউনিক যে সবাই সহজে মনে রাখতে পারবে না। আর রেপিড দিয়ে আমার কোন কিছু খুব দ্রুত করার সামর্থ্যকে বুঝিয়েছি। রেসলিংয়ের ছয় বছরে আমি এত দ্রুত কিছু করা আয়ত্ব করেছি। 

শুভ্রঃ প্রথম পর্ণোতে অভিনয়ের সময় তুমি কি নার্ভাস বোধ করেছিলে?
জনিঃ কিছুটা। কিন্তু আমি সেটা খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠি।আমার প্রথম দৃশ্যে টাইলার সেন্ট জেমস সহকর্মী হিসেবে খুব সাহায্য করেছিলেন। 

 
 
শুভ্রঃ তুমি নিজেকে কিভাবে বর্ণনা করবে, স্ট্রেইট, বাই, গে – অথবা অন্যকিছু?
জনিঃ আমি মেয়েদেরকেও পছন্দ করি। সেজন্য আমার মনে হয় আমি উভকামী। 

শুভ্রঃ তোমাকে কিছু দৃশ্যে ভার্সেটাইল রোলে দেখা গেছে কিন্তু আমার মনে হয় তুমি বটম রোল প্লে করতে ভালোবাসো। কখন তুমি নিজেকে আবিষ্কার করলে?
জনিঃ আমি টপ হতে সবসময় পছন্দ করি কিন্তু উভয় রোল আমি উপভোগ করি। শ্যুটিংয়ের প্রথম দিনে এটা আমি আবিষ্কার করি। 

শুভ্রঃ অধিকাংশ বিষমকামী পুরুষ ডিলডো দিয়েও ফাকড হতে ভয় পায়। তুমি কি মনে করো তারা জীবনে কোন কিছু মিস করছে?
জনিঃ অবশ্যই। তারা জানে না তারা কি মিস করছে।

শুভ্রঃ তুমি মেন ডট কমে পাঁচটা সাইটের তিনটায় অভিনয় করেছো- ড্রিল মাই হোল, স্ট্রেইট টু গে এবং জিজ ওরগি।এর মধ্যে কোন ম্যুভিতে তুমি অংশগ্রহণ করে আনন্দিত হয়েছে।
জনিঃ আমার প্রিয় দৃশ্য ছিলো রুশো টুইন্সের সাথে। এটা স্ট্রেইট টু গে সাইটের “গেমস গন ওয়াইল্ড” পর্ণ ম্যুভির দৃশ্য। 

শুভ্রঃ মেন ডট কমের তোমার অভিনয় করা কোন দৃশ্যটি সব থেকে হটেস্ট বলে মনে হয়?
জনিঃ মেন ডট কমের সব থেকে জনপ্রিয় একটি ম্যুভি রাফায়েল আলান্সারের সাথে, “প্রিজন শাওয়ার”।

বিঃদ্রঃ হঠাৎ মাথায় এলো। এবং বমন করে দিলাম। কার কেমন লাগলো জানাতে ভূল্বে না কিন্তুক। বাই বাই ।