blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

রোমান সাম্রাজ্যে সমকামি অধিকার!

সমকামিতা সম্পর্কিত পোস্টগুলোতে ফেসবুকে প্রচুর মন্তব্য পাচ্ছি। 
মন্তব্য সে পক্ষে হোক অথবা বিপক্ষে যুক্তিপূর্ণ এবং গঠনমূলক হলে ভালো লাগে। অনেকে দাবী করছেন যে আমি আমার লেখায় সমকামিতার প্রচার করছি। আমার কিন্তু সেরকম মনে হয় না। আমি সমকামিতার পক্ষে বা বিপক্ষে কোন মত দেই নাই। জাস্ট বাইবেল এবং আল কোরআনের রেফারেন্স ধরে কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। আমি শুধু সমকামিদের একটি মেসেজ দিতে চাই যে সমকামিতা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সমকামি ব্যক্তিগণ সবাই নিজেকে আইসোলেটেড ভাবে। নিজেকে বড় একা ভাবে। জনমানুষের ভীড়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত বেঁচে থাকে। অথচ তার মত যুগে যুগে হাজার বছর ধরে মানুষের মাঝে সমকামিতা ছিলো। কখনো কখনো সেটা হয়ে গেছে সমপ্রেমিতা।

আমি তাই পুরাতন পূঁথি ঘেঁটে আপনাদের জানাতে চাই ইতিহাস। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন এগুলো জেনে কি হবে? জেনে আসলে কি হয়! আমি নিজেই জানিনা। চাঁদে মানুষ গেছে, মঙ্গলে রোবট। আমরা জেনেছি। জেনে কি হয়েছে। তবে আমি জানতে ভালোবাসি। আমি পড়তে ভালোবাসি। এটাতেই আমার আনন্দ। আজ আমি আপনাদের প্রাচীন রোম সমাজে সমকামিতা সম্পর্কে হালকা কিছু তথ্য জানাবো। প্রাচীন রোম বলতে অনেকের মাথায় দুই চারশো বছর আগের কথা আসে। এটা কিন্তু তারও আগে। তখন ইসলাম কি খ্রিস্টান ধর্মের আগমন ঘটেনি পৃথিবীতে। ইহুদী ধর্মের রাজত্ব চলছে। গ্রীক-রোমানরা অবশ্য মূর্তিপূজারী। অনেকক্ষেত্রে ভারতীয় হিন্দুধর্মীয় কালচারের পূর্বপুরুষ বলা যেতে পারে। তখন গ্রীক সামাজ্র ও রোমান সাম্রাজ্যের হাত ধরে নগর সভ্যতা বিকশিত হচ্ছে। যিশু খ্রিস্ট্রের জন্মের এক শত বছর আগে রোমান সম্রাট হার্ডিয়ান প্রকাশ্যে নিজের সমকামী সত্তাকে প্রকাশ করেন। নিজের বয়ফ্রেন্ডের স্মৃতির জন্য মিশরের একটি গ্রামকে নগরে পরিনত করে নাম রাখেন এন্টিনোপোলিস। নির্মান করেন মন্দির। খ্রিস্টান ধর্ম এবং পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটে এই অঞ্চলগুলোতে। মন্দির গুলো মিশে যায় ধূলোয়। কিন্তু এন্টিনোপোলিস এখনো টিকে আছে। এখনো বর্ণনা করছে এক অমর প্রেমের গল্প।

রোমান সাম্রাজ্রে রোমান পুরুষেরা স্বাধীনভাবে অন্য পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতো। এক্ষেত্রে তাদের কোন ধর্মীয় বা সামাজিক বাঁধা ছিলো না। তবে তাদেরকে পেনেট্রেটিভ বা টপ রোল প্লে করতে হতো। বটম রোল প্লে করলে তাদের পুরুষত্ব কিংবা সামাজিক মর্যাদা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো। অধিকাংশ সমলিঙ্গিক যৌনক্রিয়া গুলো তারা বন্দী, দাস অথবা পুরুষ পতিতাদের সংগে করতো। অবশ্য পতিতারা স্বাধীন নাগরিক ছিলো না। তারা দাস ছিলেন। রোমান পুরুষেরা ১২ থেকে ২০ বছরের কিশোর ছেলেদের যৌন সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করতো। অনেকক্ষেত্রে পতিতাদের বয়স বেশী হতো। এটা তাদের দেহ সৌকর্য্যের উপর নির্ভর করতো। প্রাচীন রোমান নারীদের মাঝে সমকামিতা সম্পর্কিত সেরকম কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

রোমান সাম্রাজ্যে মুক্তভাবে জন্ম নেয়া একজন পুরুষ সামাজিক ভাবেই একজন নারী বা পুরুষের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারতো। নারী এবং কিশোর ছেলে উভয়ই ছিলো কামনার বস্তু। কিন্তু বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে একজন পুরুষ শুধুমাত্র দাস অথবা পতিতাদের সাথে যৌনকর্ম সম্পাদন করতে পারতো। অন্য কোন রোমান নাগরিকের স্ত্রী, তার বিবাহযোগ্যা কন্যা, অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্র, অথবা তার সাথে যৌনকর্ম করা রোমান নীতি অনুসারে অমানবিক কাজ হিসেবে গণ্য হতো। তবে মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে তার দাস দাসীদের সঙ্গে যৌন ক্রিয়া বৈধ ছিলো।

আজ এই পর্যন্তই থাক। আশা করি জানতে আগ্রহীদের ভালো লাগবে। আগামীতে হিন্দুধর্মে সমকামিতার শাস্তি নিয়ে রেফারেন্সসহ একটা লেখা লিখবো। হিন্দু বন্ধুদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলছি। হিন্দু হয়ে মনুশাস্ত্রের কথা নিশ্চয় তুমি ফেলে দিতে পারবে না।


চিত্রঃ মৃত্তিকা নির্মিত তৈলবাতিদানে খোদাই করা দুজন মল্লযোদ্ধার যুদ্ধ অথবা পুরুষের যৌনক্রিয়া দৃশ্য। আমি মনে করি এই পটে শিল্পীর সুতীব্র বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটেছে।

-----------------------------------------------------------------