blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

দক্ষিণ আফ্রিকার এক তরুনের করুন কাহিনী।

ছেলেটির বয়স ২০ বছর। নাম কি ছেলেটার? নাম না হয় অজানাই থাক। গাঁয়ের রঙ বলে দিচ্ছে সে নিগ্রো। দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকা হচ্ছে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ। পৃথিবীর হীরার খনি। পৃথিবীর সব থেকে বেশী বর্জপাত হয় আবার এই দক্ষিণ আফ্রিকায়। ছেলেটি পড়ার জন্য চলে এসেছে রাশিয়া। রাশিয়ার একটি শহরের নাম বেলগ্রেড। সে পড়ত বেলগ্রেডের শুখভ স্টেট টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে।

কালো ছেলেটি সমকামী ছিলো। তোমরা অনেকেই জানো রাশিয়ায় সমকামী বিদ্বেষ কতটা মারাত্মক। পুতিনের দেশ রাশিয়া ঘৃণা করতেই ওস্তাদ। তারা কালোদের ঘৃণা করে, তারা মুসলমানদের ঘৃণা করে, তারা সমকামীদের ঘৃণা করে। তাদের ঘৃণার অন্ত নাই। এই রাশিয়ায় এসে  নিগ্রো ছেলেটি ভূক করে এক ফাঁদে পা দিয়ে বসেছে।  সে ১৫ বছর বয়সের একটি ছেলের সাথে সাথে তার আলাপ হয় ইন্টারনেটে। দেখা করার জন্য একদিন সরল বিশ্বাসে ছেলেটি তার ফ্লাটে যায়।  আসলে সেখানে ১৫ বছর বয়সের কোন ছেলে ছিলো না। ছিলো রাশিয়ার একটি এন্টি গে গ্রুপ। তারা কৌশলে ছেলেটিকে ঐ ফ্লাটে নিয়ে আসে। সেখানে ছেলেটিকে তারা হেনস্তা করে একটি ভিডিও তৈরী করে। পরে ভিডিওটি তারা রাশিয়ার সামাজিন মিডিয়া ওয়েবসাইট ভিকে তে ছেড়ে দেয়। ভিডিওটিতে দেখা যায় তারা ছেলেটিকে তার যৌন পরিচয় নিয়ে জেরা করছে। তাকে দিয়ে স্ট্রিপ নাচ নাচাচ্ছে। জোর করে তাকে ন্যাঁড়া করে দিলো। এরপর একটা তরমুজ নিয়ে তাকে নাচতে  হচ্ছে। একপর্যায়ে তরমুজটি তার মুখের উপর ভেঙে ফেলল। ছেলেটির হাত দিয়ে তার মুখে এক নাগাড়ে চড় থাপ্পড় মারা হলো। তার গাঁইয়ের রঙ নিয়ে বারবার বিদ্রুপ করা হচ্ছে। দলের এক মহিলা সদস্য ছেলেটাকে বিড়ালের সাথে যৌনমিলন করার পরামর্শ দিলো।

অনলাইনে ভিডিওটি প্রকাশ হুয়ার পরে শুখভ স্টেট টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি ছেলেটি তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে। এখন খুব সম্ভবত ছেলেটিকে কোন ডিগ্রি ছাড়াই তার নিজের দেশে ফিরে যেতে হবে।


বাংলাদেশে  সমকামী বিদ্বেষ চোখে পড়ার মত। যদিও এখানে এখনো সেভাবে কোন এন্টি গে গ্রুপ গড়ে ওঠেনি। গড়ে না উঠুক এই আমাদের প্রত্যাশা। তবে যারা অনলাইনে পরিচয়ের পর সাক্ষাৎ করতে যাও তাদেরকে বিশেষ সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি। 

ইতালীয় যুবকের আত্মহত্যা।

২৭ অক্টোবর ২০১৩। রোমের পুরাতন একটি পাস্তা ফ্যাক্টরির ১২ তলায়  দাঁড়িয়ে আছে সাইমন। ইতালিয় উচ্চারন সিমোন। সাইমনের বয়স ২১ বছর। সে মেডিকেলের ছাত্র। ইতালির সর্ববৃহৎ সরকারী হাসপাতাল পলিকিলিকো আমবারতো তে সে ইন্টার্নশিপ করছে। পৃথিবীটা আজ সাইমনের কাছে বড় অসহ্য মনে হচ্ছে। মানসিক কষ্ট  তাকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। সে সুইসাইড হটলাইনে অন্তত দশবার ফোন করেছে। কোন কিছুতে সমাধান না পেয়ে সে পাস্তা ফ্যাক্টরির ১২ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। বড় অভিমান করে সে পৃথিবীকে ছেড়ে গেলো। রোমের রাস্তায় সেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালোবাসতো। দলবেঁধে পাস্তা খাওয়ার স্মৃতি নিয়ে টিকে আছে নাস্তার টেবিলগুলো।

৬ নভেম্বর ২০১৩। ইতালীয় পুলিশ সাইমনের আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন করতে পেরেছে। সাইমন এন্টি-হোমোফোবিয়া যোগাযোগ কেন্দ্রকে জানিয়েছিলো, “যারা সুইসাইড করেছে আমি তাদের কষ্টগুলো অনুধাবন করছি।”

সাইমনের ফোন কল গুলো গত দুই মাসে ধারণ করা হয়েছে। একটিতে সে জানিয়েছে, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমি যখন করিডোর দিয়ে হেঁটে যাই, আমার সহপাঠীরা আমাকে ফ্যাগট (বিদ্রুপ অর্থে সমকামী) বলে ক্ষেপায়। আমাকে নিয়ে তারা কৌতুক করে।”

আরেকটি ফোনকলে সে জানায়, “আমি এই সব কৌতুক আর বৈষম্যে হতাশ। আমার স্কুল জীবন থেকেই এটা শুরু হয়েছে। হাই স্কুলেও এটা ঘটেছে এবং এখন বিশ্ববিদ্যালয়েও একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হচ্ছে।”

মৃত্যুর আগে সাইমন সুইসাইড নোটে লিখে গেছে, “ আমি সমকামী। ইতালী একটি মুক্ত দেশ কিন্তু এখানে হোমোফোবিয়া (সমকামীদের ঘৃণা করা) আছে। যাদের মধ্যে এই আচরণ আছে তারা অবশ্যই তাদের বিবেকের সাথে বোঝাপড়া করা উচিত।”

রোমের পুলিশ অভিযুক্তদের ধরার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেইতালীয় পত্রিকা “কুরিয়েরে দেল্লে সেরা” জানিয়েছে , প্রকৃত অভিযুক্তদের ধরা অনেক কঠিন একটি কাজ।


সাইমন ঠিক লিখে গেছে। বিবেক দিয়ে মানুষের বোঝা উচিত। অন্যের কষ্টগুলো। অন্যের ব্যাথার জায়গাগুলো। আমাদের সামান্য মজার কারনে যেন অকালে সাইমনদের ঝরে পড়তে না হয় পৃথিবী থেকে।  আমাদের বাংলাদেশে রাতুলেরাও ঝুলে পড়ছে ফ্যানের সিলিং এ। কবে দূর হবে বৈষম্য? কবে প্রতিষ্ঠিত হবে সমধিকার!