blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

দাম্পত্য

শুভ্র চুটিয়ে প্রেম করেছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে। এখন তারা একসাথেই থাকে। বছর তিনেক হয়ে গেলো। বাংলাদেশে যদি সম-বিবাহের সুযোগ থাকতো তবে অবশ্যই তারা বিয়ে করে ফেলত। শুভ্র সবসময় আদিত্যকে বোঝানোর চেষ্টা করে দ্যাখো, সমাজের দৃষ্টিতে সেক্স টা অপরাধ হলে হতে পারে কিন্তু কোন সমাজ কোন ভালোবাসাকে অপরাধ বলতে পারে না। তাহলে সেই সমাজের সমজপতিদের বলতে হয় অবশ্যই মাথায় সমস্যা আছে।
                 
শুভ্র আদিত্যকে অসম্ভব ভালোবাসে। সেদিন আদিত্যের ফেসবুক পাতায় কিছু আনিউজুয়্যাল এক্টিভিটি দেখেছে। যদিও শুভ্র আদিত্যের ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড জানে। তারটাও আদিত্য জানে। তাদের বোঝাপড়া ভালোই। কোন লুকোছাপা নেই। কিন্তু শুভ্র কখনো আদিত্যের একাউন্টে লগ ইন করে না। ভালোবাসি বলে যে সব সময় আদিত্যের কাঁধে চেপে থাকতে হবে তার কোন মানে নেই। আদিত্যকে কিছুটা পারসোনাল স্পেস দিতে হবে। অধিকাংশ ভালো রিলেশান ব্রেক আপের পেছনে থাকে বাইন্ডিংস, এর সাথে কথা বলতে পারবে না, ওর সাথে মিশবে না, ওকে আজই এক্ষুনি ব্লক করো ইত্যাদি। আরে ভাই ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তবে তোমার গোয়ালের গরু ঠিকই তোমার গোয়ালে ফিরবে, পাশের বাড়ীর গোয়ালে যাবে না।

যাহোক সময়ের আবর্তনে হোক আর বিবর্তনে হোক শুভ’র মনে হচ্ছে আদিত্য পরকীয়া করছে নাতো। হিন্দী সিরিয়াল কি তার মাথাটা খেয়ে ফেললো নাকি। সেও দেখি হিন্দী সিরিয়ালের বউদের মত ভালোবাসার মানুষটিকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। যাই হোক একটু সচেতন হতেই হয়। কথায় আছে না, কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাশ ঠাশ।

আদিত্য নামী একটা কোম্পানীর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। অফিস আর শুভ্রর খিঁটিমিটি নিয়ে তার জীবন ভালোই কেটে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলো। আজ দেখি শুভ্র আগেই ফিরেছে অফিস থেকে। শুভ্র’র অফিসটা ঢাকার বাইরে। প্রতিদিন যেতে আসতে তার বেশ কষ্ট হয়। ছেলেটা যে তার জন্য এত কষ্ট স্বীকার করে, তাকে পাগলের মত ভালবাসে, ভাবলে গর্বে আদিত্যের বুকটা ভরে ওঠে। আদিত্য শুভ্রকে একটা লাভ কিস দিয়ে কাপড় ছেড়ে চেয়ারের উপড় ছুড়ে দিয়ে শাওয়ার নিতে ঢুকে গেলো।

শাওয়ার নিয়ে বের হওয়ার পর দেখে শুভ্র তার শার্ট হাত নিয়ে বসে আছে। থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। বোঝা যাচ্ছে রেগে আছে। ইন্তু কেন হঠাৎ এই মুড চেঞ্জ তা আদিত্য বুঝতে পারলো না। সে বোঝার বৃথাই চেষ্টা করলো। সে শুভ্র’র কাঁধে হাত রেখে বলল, কি হয়েছে জান?

শুভ্র আদিত্যের হাত টা ছূড়ে ফেলে দিলো। আদিত্য অসহায় বোধ করল। শুভ্র কিছুক্ষন পর মুখ খুললো, “আদিত্য তুমি কি স্ট্রেইট লাইফে ফিরে যেতে চাও! ফিরে যেতে চাইলে ফিরে যেতে পারো, আমি বাঁধা দেব না

আদিত্যঃ এসব কি বলো জান এতদিন পর! আমি কি এমন করেছি যে তুমি এইসব বলবে।

শুভ্র আদিত্যের শার্ট থেকে একটা লম্বা ছুল তুলে ধরে বলল, “এটা কি আদিত্য। তোমার শার্টে মেয়েদের চুল কিভাবে এলো। ডেটিংয়ে গেছিলা নাকি আজ?”

আদিত্য হতবাক হয়ে গেলো। কোন জবাব খুঁজে পেলো না। কোন জবাব নাই তার। সে নিজেও জানেনা কোথা থেকে এলো এই চুল।

পরদিন অফিস থেকে শুভ্র আবার আদিত্যের শার্ট সার্চ দিলো। কিন্তু আজ লম্বা চুল পেলো না। কয়েকটা ছোট চুল। সে আদিত্যকে বলল, “জানু আজ কি কোন ছেলের সাথে ডেটিং করে এলে।”

আদিত্যঃ জান তুমি আমাকে অযথা সন্দেহ করছ। তোমার কি হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না। কে তোমাকে কি বলছে আমি জানি না। আমার দিক থেকে ক্লিয়ার আছি, এ কথা আমি শপথ করে বলতে পারি। এটা আমার চুল ছাড়া আর কিছু নয়। আর তুমিতো বলো তুমি আমার গন্ধ শুকে আমার অস্তিত্ব বলে দিতে পারো। তবে গন্ধ শুকে বলো এটা আমার চুল কিনা।

আদিত্য কিছুটা বিরক্ত না হয়ে পারলো না। অফিস থেকে টায়ার্ড হয়ে বাসায় ফেরার পর এই ক্যাচাল কার ভালো লাগে। শুভ্র রাতে অনেক ভাবল। আসলেই তো , সে কোন প্রমান ছাড়া তার ভালোবাসার মানুষটিকে অপমান করতে পারে না। অবিশ্বাস আর সন্দেহ করা পাপ। ভালোবাসার মানুষটিকে নিঃশর্ত বিশ্বাস না করতে জানলে ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।

আদিত্যও খুব টেনশানে আছে। শুভ্রকে আঘাত করে কোন কথা সে বলে না। শুভ্র এমন করছে কেন। শুভ্র তো অন্যদের মত নয়। সে আলাদা টাইপের একটা ছেলে। হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায় ঠিক, কিন্তু সে ফানি একটা ছেলে। অনেকটা টক ঝলা মিষ্টি আঁচারের মত। ফেসবুকে শুভ্রর স্ট্যাটাস পড়ে তো হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যায়। একজন মানুষের মুড এত চেঞ্জ হয় কিভাবে তা বোঝাই দুষ্কর। কিন্তু সে তো জানে তার জান পাখিটার মুড। ফেসবুকের শুভ্র আর বাস্তবের শুভ্র’র মাঝে এক আকাশ ব্যবধান। শুভ্রকে বোঝা একটু কষ্টকর, কিন্তু কঠিন কিছু নয়। শুভ’র ফেসবুকে অনেক গুলো ফ্রেন্ড আছে, ফারহান, শুভ, গিয়াস, বাপ্পী, মারুফ, রাজ আর আছে কিছু ভাই মাইনুল, আকাশ, রিজু, রুদ্র, রাকিব, অনিরুদ্ধ চাকমা। ওদের নিয়েই তো ওর দিন কেটে যায়।

পরদিন আদিত্যে অফিস থেকে ফিরে এসে বলে, দ্যাখো জানু আজ কোন চুল পাও কিনা।


শুভ্র আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “কেনো জান, তুমি কি আজকাল টেকো ছেলেদের সাথে প্রেম করছ যে চুল নেই।” সে আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরল। আদিত্য না হেসে পারলো না। “তুমি আর মানুষ হলে না” । এই হলো শুভ্র। চেনা শুভ্র। যে সবকিছু নিয়ে ফান করতে পারে। আদিত্য আর শুভ্র চুমুর রাজ্যে হারিয়ে গেলো। ওহ! একটা কথা বলা হয়নি। ফেসবুকে শুভ্র’র বন্ধুরা শুভ্রকে চুমুখোর বলে পঁচায়। বলার পেছনে কারণ টা ক্লিয়ার না হলেও বন্ধুরা বলে, আদিত্য আর শুভ্র তাদের বাসর রাতে নাকি শুধু চুমু খেয়ে রাত ভোর করে ফেলেছিলো।