blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

দ্যা হাজব্যান্ডস

চুরি করে যে বেশ্যার ভাত খায়, তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয় ...
- বাউল সম্রাট লালন শাহ ।

বাতাসে ছিলো সাগরের গর্জন । শংখ ধ্বনির মত কানের কোটরে এসে বাতাসেরা একটানা শিষ দিয়ে চলেছেছোট ছোট ঢেউগুলো অবিরাম তীরের দিকে ছুটে আসছে অজানা কোন আকর্ষণে। বালির উপর আছড়ে পড়ে আবার পেছন পানে ছুটে চলছে । এই ছুটে চলা নিরন্তর্। আকাশে মেঘের নিচে কয়েকটি গাংচিল উড়ে বেড়াচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে ছিলো ধ্রুব। ধ্রুব কক্স বাজারের ছেলে। গ্রামের বাড়ি টেকনাফের ওদিকেসাগর তীরে সে মাঝে মাঝে আসেই। সাগর তাকে সবসময় টানে। সাগরের বালুতে পা ডুবিয়ে বসে থাকলে সে যেন প্রাণ ফিরে পায়।

ধ্রুব রুপালী ব্যাংকে চাকুরি করে। মাঝারি উচ্চতার মানুষ। পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। গায়ের রঙ ফরসা , গোলগাল  গুল্টু গুল্টু চেহারা। তবে যে জিনিসটা দিয়ে তাকে সহজে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায় তা হচ্ছে তার টানা টানা কাজল কালো চোখ। চোখের দিকে তাকালে তোমার মনে কেমন যেন একটা মায়া জন্মে যাবে। তুমি টেরই পাবেনা। ব্যাংকাররা সাধারনত কম কথা বলে। ধ্রুব আরও কম কথা বলে। বিয়ে করেছে বছর পেরিয়ে দুই বছর হতে চললো। এখনো বাচ্চা কাচ্চা নেয়নি ।  ছাতার নিচে চেয়ারে শরীর বিছিয়ে শুয়ে আছে সে। দূরে কোন ফল বিক্রেতার সাউন্ড বক্সে বাজছে সাঁইজির বিখ্যাত গান , জাত গেলো জাত গেলো বলে একি আজব কারখানা।  বাম হাত খানা চোখের সীমানায় উঁচু করে ধরে সে রিস্ট ওয়াচে সময় দেখে।

আবিরকে আসতে দেখা যাচ্ছে।পরনে হাফপ্যান্ট । বোতাম খোলা হাওয়াই শার্ট বাতাসে উড়ছে। আবিরের শারীরিক গঠন চমৎকার্। তার উপর নিয়মিত জিম করার মাসল হয়েছে দেখার মত। আর সেটা দেখানোর জন্য সুযোগ পেলেই আবির দেহ বাড়ির সদর দরজা খুলে রাখে হাট করে।  সি বিচে আবিরের আসার কথা বিকেল পাঁচটায়। সাহেব আসছেন এখন ছয়টার সময়। আবিরকে আজ আচ্ছামত বকা দেবে বলে ঠিক করলো ধ্রুব। কিন্তু ধ্রুব ভালো ছেলে। কাউকে বকা ঝকা সে করতে পারে না। সি বিচের এই চেয়ার গুলোর ভাড়া আগে ঘন্টাপ্রতি ৩০ টাকা ছিলো। আজ চাচ্ছে ৫০ টাকা। যে হারে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে সে হারে বেতন তো আর বাড়ে না। আবির মৃদুমন্দ ছন্দে হেঁটে আসছে। আবির ধ্রুবর কাছে এস আশপাশের মানুষকে সচকিত করে দিয়ে চিৎকার করে উঠলো, “হোয়্যাটস আপ ম্যান”



ধ্রুব উঠে বন্ধুকে জাপটে ধরলো। এখনো বাংলার মানুষ বন্ধুকে বুকের সাথে জাপটে ধরলে অন্য কিছু মিন করে না। ধ্রুবের কথায় কক্সবাজারের আঞ্চলিক টান।
-ভাল আছি। এই তোমার আসার সময় হলো?
- আরো আগেই বেরোতে চেয়েছিলাম ডারলিং। কিন্তু আসার আগের মুহূর্তেই এক ক্লায়েন্ট এসে হাজির। গাড়িতে তার বকর বকর শুনতেই এলাম। তাকে নামিয়ে দিয়ে তবে এলাম।
- গুল মারো মিয়া। এই ড্রেসে তুমি অফিসে গেছিলা।
- মাইরি বলছি বস।  আর তুমি তো জানো আমার গাড়িতে রাখা সুটকেসে কিছু কাপড় রাখাই থাকে।  বাপ শালা দিন দিন শুধু টাইট দিতাছে। একটু মন খুলে মজা করবো তার সুখ নেই। তাও রক্ষে বউ দারোগা বাপের বাড়ী আছে।

আবিরের বাবার গোটা পাঁচেক ইন্ডাস্ট্রি আছে। বাবার অফিসে বসে সে। বয়স ধ্রুবর কাছাকাছি। আঠাশ , সাড়ে আঠাশ। গত বছর বাউন্ডুলে ছেলেকে ঘরমুখো করতে প্রায় জোর করে আবিরের মা তাকে বিয়ে দিয়েছে। কাজের কাজ আবির করেছে একটা। বছর ঘোরার আগেই বউ প্রেগন্যান্ট, এখন বাবার বাড়ি রাউজানে আছে।  বউটা আবিরকে সারাক্ষণ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। ঘড়ি ঘড়ি ফোন না করলে যেন তার পেটের ভাত হজম হয় না। সেদিক থেকে ধ্রুব বেশ লাকি। তার ওয়াইফ একটা স্কুলে পড়াই। নিজে বেশ ব্যস্ত থাকে। তাই ধ্রুবকে সেভাবে খবরদারীর ঝক্কি সামলাতে হয় না।

আবির আর ধ্রুব এক শহরের মানুষ হলেও তারা পরস্পরকে চিনতে পেরেছে ফেসবুকের কল্যাণে। শরীরের তাগিদেই তারা দুজন দুজনকে খুঁজে নিয়েছে। তা বছর চারেক হবে। প্রথম দিকে কিছুটা দুরত্ব তৈরী হয়েছিলো। কিন্তু কর্মজীবনে ঢোকার পরে তারা এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে নতুন ফুলের মধু খোঁজার সময় পায় না। কখন যে একে অন্যের পরিপুরক হয়ে উঠেছে তা তারা দুজনের কেউই টের পায় নাই। ইদানিং যে সমপ্রেম বলে একটা কথা প্রচলনের চেষ্টা করছে কিছু বাঙালি সমকামী সেই প্রেম ট্রেম তাদের মধ্যে আছে বলে মনে হয় না । সপ্তাহ শেষের দিনটি তাদের কামনার রঙে রঙিন হতে লাগলো । গভীর রাতে  কখনো আবিরের মার্সিডিজের সিটে, ধ্রুবর ফ্লাটে আবার কখনো বা নির্জন সমুদ্র তীরে তাদের দুটি শরীর এক হয়ে যেতে থাকলো। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সাগর তীরের বালুতে আদিম রোমান্সে মেতে ওঠা তাদের কাছে নেশার মত। একবার এক রাতে আরেকটু হলে তো তারা ধরাই পড়ে যেত। বিয়ের আগ পর্যন্ত ভালোই চলছিলো। বিয়ের পরে তারা আর এত সহজে মিলিত হতে পারত না। সন্ধ্যা রাত বৌয়ের জিম্মায় হাওলা করে দিতে হয়েছে।

একটু একটু করে দিনের সূর্য্য সাগরের জলে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। চেয়ারে পাশাপাশি শুয়ে দুজন সুর্যাস্ত দেখতে লাগলো। সাগরপাড়ে মানুষের ভীড় লেগেই থাকে। তাও ভালো দুজন ছেলেকে পাশাপাশি শুয়ে থাকতে দেখলে এদেশের মানুষ এখনো বন্ধুত্ব ভাবে। ইউরোপ আমেরিকা হলে ভিন্ন চোখে দেখত। দূর থেকে কেউ কেউ অনুচ্চ স্বরে ফ্যাগট বলে বিরক্তি প্রকাশ করত। ধ্রুব মানুষের চোখ এড়িয়ে আবিরের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আবির জিজ্ঞেস করলো ,

- বউ কোথায় ?
- স্কুল ছুটি। বাবার বাড়ি গেছে গতকাল।
- তাহলে আজ আমার বাসায় যাচ্ছো?
- বাসায় বলে আসিনি।
- ফোন করে বলে দাও।  অনেক দিন কিন্তু সেভাবে মজা করে মাস্তি করা হয় না। এভাবে পুতু পুতু করে পাঁচ মিনিটে কাজ সারতে আমার ভালো লাগে না।
- ওকে ডিয়ারবলে দেবো। চল আজ বাইরে ডিনার করি।
-  হুম। করা যায়। কোথায় খাবে আজ ?
- আজ আমি খাওয়াবো। রাখাইন মার্কেট থেকে কিছু দূরে এগিয়ে গেলে একটা রেস্টুরেন্ট হয়েছে। একদিন এক কলিগের সাথে লাঞ্চ করেছিলাম। ওদের রুপচাঁদা ফ্রাই টা জোশ লেগেছিলো। ওখানেই যাই চলো।
- রুপচাঁদা ফ্রাই। ইয়াম্মি। সাথে কিন্তু লইট্যা শুটকির ভর্তা নিতে হবে।
- অবশ্যই।
- আজকাল কলিগদেরকে সময় দিচ্ছো নাকি!
- আবার পুরোনো ইয়ার্কি শুরু করলে!
- স্যরি মাই ডিয়ার। এই তোমার কান ধরছি।
-  ওকে বাবা। এখনি যাবে।
- কি বলো। মাত্র সাতটা বাজে। প্রথম ডোজটা না হয় ঝাউবনে হোক। আর দেরী সহ্য হচ্ছে না।
- ধ্যুর । এগুলা কি বলো। চারি দিকে মানুষ গিজ গিজ করছে।  তোমার কিন্তু সাহস বেড়ে যাচ্ছে। ধরা পড়লে পত্রিকায় ছবি ছাপিয়ে দেবে। সাংবাদিকগুলার আজকাল খেয়ে দেয়ে কোন কাম কাজ নেই। কেউ ঠুস করে পাদ দিলে সেটা নিয়েও দেখবা নিউজ ছাপবে।
- আরে গিয়েই দেখি না। কোন কিছুতে থ্রিল না থাকলে মজা কিসের। আপত্তি আছে ?
- নাহ। আপত্তি কিসের চলো যাওয়া যাক।

দুজন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যেতে লাগলো। বালির উপর তাদের পায়ের চিহ্নের কালো কালো ছোপ পড়তে লাগলো। বাতাস তখনো শঙ্খধ্বনি বাজিয়ে চলেছে। চাঁদের আলো ছড়িয়ে আছে দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের উপর্। ছোট ছোট ঢেউয়েরা ছুটে আসছে বেলাভূমে। সাঁইজির গান থেমে গেছে। কিন্তু তার রেশটুকু রয়ে গেছে ওই ঝাউবনের চাঁদের আলো ফাঁকি দেয়া আঁধারের গহবরে। যেখানে একটি দেহ আরেকটি দেহের মাঝে সমাজ নিষিদ্ধ এক বন্ধনে মিলিত হচ্ছে।


চুরি করে যে বেশ্যার ভাত খায়, তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়, সবই দেখি তা না, না না।