blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

পরিবার

আজকাল মতিঝিলের দিকে বেশ যাওয়া হয়। ওখানকার একটা রেস্টুরেন্টে গরুর শিক কাবাব খেতে জুড়ি নেই। কাবাবের লোভেই মূলত যাই। আর যাই আসিফের সাথে আড্ডা দেয়ার লোভে। আসিফ মজার মানুষ। আমাদের কমিউনিটির লোক। মজার মজার গল্পে মাতিয়ে রাখে পুরোটা সময়। মধ্যবয়সী সুদর্শন একজন মানুষ আসিফ। চেহারা দেখে অবশ্য বোঝা যায় না যে সে পঞ্চাশ পার করেছে অনেক আগেই। শারীরিকভাবে সে বেশ শক্ত সামর্থ্য পুরুষ। তার সাথে রমণে আগ্রহী কিউট ছেলেরা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারো। আমি আসিফের সাথে মিলিয়ে দেব। একদিন আসিফ এলো , চেহারায় তার বিমর্ষ ভাব। বোঝা গেলো কিছুটা মাতাল অবস্থায় আছে। ঘাটাবো কি ঘাটাবো না বুঝতে পারলাম না। ইতঃস্তত করলাম খানিকখন। বয়সের তফাৎ হলেও আমরা দোস্ত মানুষ। তার সমস্যা আমার শোনা উচিত। কাঁধে হাত রেখে বললাম, দোস্ত, কোন সমস্যা।

আসিফ চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো। মদের প্রভাবে চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। শোনা যায় না প্রায় এমন স্বরে বলল, দোস্ত আমি গে হতে পারি কিন্তু আমার সন্তান গে হবে কেন! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিতা হয়ে পুত্রের গে হওয়াটা তো আমি মেনে নিতে পারিনা। গে জীবন কি সুখের জীবন। ছদ্ম সুখের অভিনয় করে যেতে হবে স্ত্রী পুত্রের সাথে সারাজীবন। আমার ছোট ছেলে আজ আমাকে জানালো সে গে। তার থেকে ও স্ট্রেইট হয়ে জন্মালো না কেন!

মাতালকে সান্তনা দেয়া আর না দেয়া সমান কথা । আমি চুপ করে রইলাম।

পরের সপ্তাহে আসিফ একই অবস্থায় এলো। আমি  একই ভাবে তার কাছে কারণ জানতে চাইলাম। আসিফ জানালো, আজ দুপুরে সে জানতে পেরেছে তার বড় ছেলেও সমকামী। আমি পুরো বোকাচুদা হয়ে গেলাম। অনেক কষ্টে হাসি দমন করে তাকে বললাম, দোস্ত তোমার ফ্যামিলিতে তাহলে তো মেয়ে পছন্দ করে এমন কেউ নেই।

আসিফ দুদিকে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, না আছে। তিনি আমার স্ত্রী।

{ এই জোকস উৎসর্গ করলাম আমার একজন  ভালো মনের ম্যাচিউরড বন্ধুকে যার ফেসবুক নাম আসিফ তাসিন। যদিও গল্পের সাথে তার ব্যক্তিজীবনের কোন মিল নেই। সে বিবাহিত। সে জন্যই তার নাম বেছে নিতে ইচ্ছে করল। }


পুত্র গর্ব

খুলনা পাবলিক কলেজের গেটে এসে নামলাম। মধ্যবয়সে এসে আরো একবার সেই কৈশরের অনুভূতি ফিরে এলো। কৈশরে এসেছিলাম বাবার হাত ধরে। আমি গ্রামের ছেলে। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাবলিকে এসে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাই। দারোয়ানকে পরিচয় দিতে  একাদশ শ্রেনীর ক্লাসে পাঠিয়ে দিলো। চারপাশে অচেনা সব নতুন মুখ। এতদিনে স্কুলের অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন বিল্ডিংও হয়েছে একটা। পুরাতন ভবন আজো আছে। আজকেও অধিকাংশ মুখ অচেনা। আজ রিইউনিয়ন। বিভিন্ন ব্যাচের ছেলেরা এসেছে। চেহারা দেখে আর চেনার জো নেই। নিজের ব্যাচের ছেলেদের অনেককেই চিনতে পারলামআবার অনেকের নাম শুনে চেনার চেষ্টা করেও পারছি না। কি ছিলো আর কি হয়ে গেছে। তারপরও নস্টালজিক একটা দিন কেটে গেল। খুব কাছের চার বন্ধু গোল হয়ে বসলাম সেই পুরোনো সেই ক্লাস রুমে। এখানেই আলাল স্যার, লতিফ স্যার, ইউসুফ স্যার, বদু স্যার, টিপি ম্যাডাম কত ক্লাস নিয়েছেনরিইউনিয়নে টিপি ম্যাডামও এসেছেন। রিটায়ার্ড করেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ এলেও সাজগোজে তিনি এখনো অনেক স্মার্ট, হেব্বি ফিটফাট। আমাকে ডেকে বলল, ঐ শুভ্র , তুই কি এখনো সেই রকম লাজুক আছিস নাকি!

এই প্রথম কেউ তুই বলল, ভালো লাগলো। বন্ধুরা প্রায় সবাই তুই থেকে তুমি তে উঠে গেছে।  সৌমিত্র, সাজু, রাসেল আর আমি গিয়ে বসলাম আমাদের সেই ক্লাসরুমে। আমরা ছিলাম বি গ্রুপের। এখন তো দুই শিফটে স্কুল চলে। আমাদের সময়ে একটাই শিফট ছিলো। ডে শিফট। গল্পের পর গল্পের তুবড়ি ছুটছে। এই বয়সের বাপদের একটা প্রব্লেম আছে। গল্পের মাঝে নিজের ছেলে মেয়েদের কথা তুলবেই। আমার বোর লাগে। আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করতে লেগে গেলাম। স্ট্যাটাসের বন্যা বইয়ে না দিয়ে আমি আবার বের হতে পারিনা।
সৌমিত্র তার ছেলের প্রশংসা করে বলছে, আমার ছেলে বড় চাকরী করে তো জানো। সে তার বন্ধুদের প্রতিও অনেক কেয়ারফুল। গত মাসে তার ক্লোজ এক বন্ধুকে সে তাদের কোম্পানীতে উচ্চ বেতনে চাকরী পাইয়ে দিয়েছে।

সাজু বলল, আরে আমার ছেলেও অনেক বন্ধুবৎসল। গত মাসে তার বন্ধুকে বিএমডব্লিও গিফট করেছে।

নাজমুল আরেক কাঠি সরেস। সে বলল, আরে আমার ছেলে পারলে তো তার জানটাই বন্ধুর জন্য দিয়ে দেয়। গতমাসে সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে গুলশানে একটা বাড়ী কিনে দিয়েছে।

এবার আমার বলার পালা। আমি চুপ করে আছি। তিনজনে আমার দিকে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছে। নিজের সাফল্য বন্ধুদের থেকে ছাড়িয়ে গেলে আমরা সবাই অন্যরকম একটা তৃপ্তি অনুভব করিযদিও কখনোই সেটা মুখে স্বীকার করব না। তাদের মুখের রেখায় সেই ধরণের একটা ছায়া আমি দেখতে পেলাম।

সৌমিত্র বলল, কিরে তোর মাথা থেকে এখনো ফেসবুকের পোকা নামেনি! মার্ক জ্যুকারবার্গ শুনলাম ফেসবুক ব্যবহার করে বোর হয়ে গেছে। তাই সে এখন ট্যুইটার ইউজ করে।

আমি বললাম, আমার ছেলেটা গ্রাজুয়েশন করার পরে ভালোই আছে। তোমরা মনে হয়  জানো না আমার ছেলে সমকামী। সেটা নিয়ে প্রথমে আপত্তি করেছিলাম। এখন মেনে নিয়েছি। তবে তোমরাও স্বীকার করতে বাধ্য হবে আমার ছেলের বন্ধুভাগ্য অনেক ভালো। আমার ছেলে গতমাসে তার তিন বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে ভালো বেতনের চাকুরী, বিএমডব্লিউ গাড়ী আর গুলশানে বাড়ী পেয়েছে।  তার তিন বয়ফ্রেন্ডের ছবিও আমার কাছে আছে। দেখবে। 


ছবি দেখার পর তিন গর্বিত পিতা চুপসে গেলো। কেন ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমার ছেলে সমকামী এটা স্বীকার করেছে বলে তোমরা ছি ছি করছ, তোমাদের সোনার চাঁন , পিতলা ঘুঘু গোপনে কি করে তার কোন খবর রেখেছ কখনো! 

চাপাবাজি

এ কথা সবাই স্বীকার করবেন যে চট্টগ্রামের লোক একটু বেশী চাপাবাজ। যদিও তারা বিছানায় চাপার বদলে চাপ খেতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে কিন্তু তাদের মুখের চাপাবাজির জন্য জগৎবিখ্যাত। চট্টগ্রামে আমার কয়েকটা ভালো বন্ধু আছে। ঈদের ছুটি কাটানোর জন্য ভাবলাম যাই চট্টগ্রাম থেকে একটা ট্যুর দিয়ে আসি। যদিও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত হলুদ দিয়ে রান্না তরকারী খেতে আমার জান বেরিয়ে যায়। কিন্তু ওদের হাতে তৈরী শুটকি টা অওসাম লাগে খেতে। হোটেল থেকে বেরিয়ে পতেজ্ঞা সি বিচে যাচ্ছি হাওয়া খেতে। বেরোনোর ঘন্টা খানেক আগেই বাপ্পী আর ধ্রুব কে ফোন করে দিয়েছিলাম। ওরা নিশ্চয়ই এসে গেছে। বাপ্পী এখানকার লোকাল। সে কবিতা টবিতা লেখে প্রায়ই। কবিতা লিখে ফেসবুক ওয়ালে বন্যা বয়ে দেয়। ধ্রুব কক্সবাজারের ছেলে। সে কবিতা টবিতা লিখতে পারেনা। তার দ্বারা শুধু টয়লেটে হিসু করেই বন্যা বইয়ে দেয়া সম্ভব। তবে বাপ্পীর একটা খুব ভালো গুন আছে। তার এলাকায় গেলে তার বাসায় থাকা খাওয়া এবং আরো অনেক কিছুই ফ্রি। প্লিজ কোন ত্যাদোড় পাবলিক অনুগ্রহ করে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না আমি ধ্রুব’র বাসায় কয়বার গেছি এবং এক বাক্যে প্লিজ ও অনুগ্রহ একই সাথে ব্যবফার করেছ কেন। ধ্রুব এবং বাপ্পী খুব ভালো বন্ধু। তারা আবার বংশ গরীমা নিয়ে ভালই নাক উঁচু স্বভাবের। আমি দূর থেকে দেখতে পেলাম দুই বান্দা বিচে আগে থেকে হাজির।

আমি হাত নেড়ে ইশারা করলাম। দুই বান্দা খেয়ালই করল না। প্রকাশ্যেই দুই বান্দা আবার লাগালাগি শুরু করে দিয়েছে। তাদের উচ্চকন্ঠ শোনা যাচ্ছে। ধ্রুব’র কথায় আঞ্চলিক টান আছে। সেদিক থেকে বাপ্পীর কথা অনেক পরিষ্কার। লাগালাগি বলায় অন্য কিছু ভেবে বসেননি তো। আরে এটা আমাদের আঞ্চলিক কথা। ঝগড়া করাকে আমাদের এলাকায় বলে লাগালাগি। আর আপনারা যেটাকে লাগালাগি বলেন আমাদের এলাকায় ওটাকে বলে চু******। বাপ্পী বলছে, “ঐ যে পোর্ট টা দেখতে পাচ্ছিস। জানিস ঐ পোর্ট এলাকা প্রথম কারা আবিষ্কার করে! জানবি কিভাবে মুর্খ ছেলে। আমাদের বংশের পূর্বপুরুষেরাই এই এলাকার পত্তন করে। ”

বলেই সে এমন এক খানা ভাব নিলো যে সে ধ্রুবকে হারিয়ে দিয়েছে। কিন্তু চাপাবাজীতে কি কক্সবাজারের লোক কম যায়! ধ্রুব গলার স্বর আরো উচ্চগ্রামে বাড়িয়ে বলল, “আরে রাখ তোর পোর্ট। প্রথম সেক্স কারা আবিষ্কার করে জানিস। (বুকে চাপড় মেরে বলল) এই ধ্রুব’র পুর্বপুরুষেরাই প্রথম সেক্স আবিষ্কার করে। ”

আমি দুইটার কথা শুনে পুরাই টাশকি খায়া গেলাম। কয় কি পাবলিকে! আমার বংশ তাহলে আইলো কই থিকা। বাপ্পীর উপস্থিত বুদ্ধি বেশ প্রখর। সে পালটা বান মারল, “ আমি স্বীকার করছি যে তোরা সেক্স আবিষ্কার করেছিস। কিন্তু একথা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবি না যে মেয়েদের সাথে সেক্স করা যায় এটা প্রথম আবিষ্কার করেছে আমার বংশের লোক।”


{কি বন্ধু কেমন মজা পাইলা এই পর্বে? ভালো মন্দ লিখে জানাও। আজকের পর্বটি উৎসর্গ করলাম আমার দীর্ঘ দিনের দুই ফেসবুক কবি বন্ধু সুপার্ব বাপ্পী এবং গ্যাস্ট্রিক ধ্রুব তারা কে। }