blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

প্রথম প্রেম

মুহিবুল হাসান খোকন। বছর বাইশের এক তাগড়া যুবক। ইদানিং বাসায় ফিরেন কম্পিউটারে বসা তার একটা নেশার মত হয়ে গেছে। কি এক অজানা আকর্ষণ তাকে চুম্বকের মত টানে। খোকনের গ্রামের বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে। কপোতাক্ষ নদের তীরে  খেলা করে কেটেছে বাল্যকাল।  কৈশোরের দিন গুলো তার জন্য খুব সুখময় ছিলো না। বাবা  মাকে হারিয়ে জীবনের কঠিন পাশটা সে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছে কাঁচা বয়সেইআবেগ টাবেগকে সে প্রথম দিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি কখনোযৌবনের শুরুতে জীবিকার তাগিদে সে যশোর থেকে পাড়ি জমায় ইট পাথরে মোড়া এই ঢাকা শহরে। যশোর রেল স্টেশান থেকে শুরু হওয়া জার্নি বাই ট্রেন শেষ হয় কমলাপুরের প্লাটফর্মে। শুরুর দিন গুলো কি কঠিনই না ছিলো। ক্ষুধায় পেট মোচড় দিয়ে ওঠে। পকেটের অবস্থা সংগীন। খাবারের দোকান গুলোতে বাহারি খাবার থরে থরে। সাজিয়ে রাখা। খাবারের ঘ্রাণ বাতাসে চড়ে ধাক্কা খায় নাকের বারান্দায়। আর সেই ধাক্কার রেশ গিয়ে পৌঁছায় মস্তিষ্কে। ক্ষুধাটা তখন চাগিয়ে উঠেফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে সরে যেতে হয়েছে। কত বেলা যে অভুক্ত কেটে যেত তার খোঁজ কেউ রাখে নাই। রাখার সময়ও ছিলো না। রাত যত দীর্ঘই হোক না কেন একটা সময় প্রভাত হয়খোকনের জীবনেও প্রভাত আসে। অনেক কষ্টের পরে আসে সোনালী সেই ভোর। সে নিজের প্রচেষ্টায় ছোট খাট একটা কোম্পানী দাঁড় করিয়ে ফেলে। মতিঝিলে একটা ফ্লাট কেনার চেষ্টা করে স্বপ্ন দেখে সোনালী এক সুদিনের।  

২০০৫ সালের কথা। খোকনের জীবনে নতুন কিছু ঘটে যায়। খোকন প্রেমে পড়েতাও একটা ছেলের প্রেমে। তার নিষ্ঠুর পৃথিবীতে এক চিলতে সুখের বাতাস বয়ে যায়। এটাকে ঠিক প্রেম বলা যায় কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। ছেলেটার সাথে এখনও দেখা হয় নাই। সামাজিক যোগাযোগ সাইট Hi5 এ পরিচয়।  হাই ফাইভে খোকনের নাম নিও অরটন। আর সেই ছেলেটার নাম নীল রোহিত।  নীল লোহিত হলে নামটা অর্থপূর্ণ হত। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনিলের ছদ্মনাম নীল লোহিত। ছেলেটার আসল নাম হয়তো রোহিত। হয়তো বলছি এজন্য যে আজকাল ইন্টারনেটের অধিকাংশ মানুষ ছদ্মনামের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে।

রোহিত এবার ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। তার বাসা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে। ছেলেটার কথা বার্তা রহস্যময়। কোন কিছুই খোলসা করত না। হেঁয়ালি ভরা কথা বার্তায় থাকত অন্যরকম এক সরলতা। আর এটাই খোকনের খুব ভালো লাগত। রোহিত সব সময় খোকনের খবর নিত। কি খেয়েছে, কখন খেয়েছে। এত এত প্রশ্নে সে মোটেও বিরক্ত হত না। নিষ্ঠুর পাষাণ এই শহরে সে এক মুঠো ভালবাসা খুঁজে পেয়েছে কম্পিউটারের ভিতর এক অজানা রাজ্যে। আর এটাই মূলত নেশার কারণ।  রোহিত খোকনকে বলত তার মতই কাউকে সে এতদিন খুঁজছিলো। এত দিনে সে খুঁজে পেয়েছে মনের মানুষ। খোকনকে সে অনেক অনেক ভালোবাসবে। চিরকাল খোকনের পাশে থাকবে। খোকন সমকামিতার স্বাদ পেয়েছে অনেক আগেই। কোন এক দুর্বল মূহূর্তে পরিচিত কারো দ্বারা। সমকামিতা সম্পর্কে খোকনের ধারণা অন্যরকম ছিলো। দুজন পুরুষ জৈবিক তাড়নায় একে অন্যের সাথে মিলিত হয় এটা সে বোঝে। শুক্রাণু ক্ষরণের পরেই সে তাড়ণা মিলিয়ে যায়। দুজন দুজনের জগতে ফিরে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুজন পুরুষে ভালোবাসা সম্ভব এটা কিছুতেই তার মাথায় ঢুকতো না। দুজন পুরুষে আবার কিভাবে ভালোবাসা সম্ভব।  কিন্তু পাথরে ফুল ফুটিয়েছে রোহিত। খোকন সত্যি ভালবেসে ফেলেছে রোহিতকে। অনেকে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে। আর সে না দেখা কল্পনার মানুষটির প্রেমে পড়েছে।

রোহিতের সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা হয়। কত কত বিষয় নিয়ে তারা গল্প করে তার ইয়ত্বা নেই। কথায় কথায় রাগ, অভিমান, কথাকাটাকাটি সবই চলতে থাকে। বিছানায় শুয়ে কথা বলে খোকন। তার চোখ থাকে ঘরের সিলিং এর দিকে। কিন্তু সে চোখ কিছুই দেখে না। সে না দেখা রোহিতের মুখকে কল্পণা করে। যে মানুষের কথা এত সুন্দর, এত সাজানো গোছানো সেই মানুষটি কেমন দেখতে! কথায় কথায় সারা রাত কেটে যায়। ভোরের আলো ফোঁটে। ফোনের ব্যালেন্স ফুরিয়ে যায়। এক্সট্রা রিচার্জ কার্ড কিনে রাখে খোকন। রোহিতের সাথে কথা না বলতে পারলে তার কিছুই ভালো লাগে না। বুকের ভেতর আঁকুপাকু করে। মতিঝিল থেকে ক্যান্টনমেন্ট খুব বেশী দূরে নয়। সে একেকদিন বাসে করে চলে  যায় ক্যান্টনমেন্টে। রোহিতকে ফোন দেয়। রোহিত আসবে বলে। রাস্তা ধরে পায়চারি করে শক্ত মনের মানুষ সে। তবু হার্টবিট বেড়ে যায়। হালকা ঘাম ফুঁটে ওঠে কপালে। রোহিতের জন্য অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়তবু রোহিতের দেখা মেলে না। ফোনে ফোন দেয়। রোহিত ফোন রিসিভ করে না।  যে ছেলে ফোনে , চ্যাটিং এ ভালোবাসার কথার ফুলঝুরি ছোটায় সে সামনে কেন আসে না এটাই খোকন বুঝতে পারে না।  ভগ্ন হৃদয়ে সে নিজের ঘরে ফিরে আসে। খুব বিমর্ষ লাগে। মনে হয় ঘুমে দুচোখ বুজে আসছে। কিন্তু ঘুম আসে না। রোহিতকে সে আবার মেসেজ পাঠায়। রোহিত মেসেজের উত্তর দেয়। আবার কথা শুরু হয়। কথার পিঠে কথা হয়। লাভ চ্যাটে রাত ভোর হয়।

খোকন আবার ক্যান্টনমেন্টে যায় রোহিতকে এক নজর দেখার আশায়। কিন্তু রোহিত দেখা দেয় না। হয়তো রোহিত তার পাশে দিয়ে হেঁটে গেছে কিন্তু সে চিনতে পারে না। এরকম বেশ কয়েকবার হলো। রোহিত কথা দিয়েও কথা রাখে নাইখোকন অপেক্ষা করে করে ফিরে এলো। শেষ দিন খোকন দুঃখ কষ্ট সহ্য না করতে পেরে রাগে ক্ষোভে একটা মেসেজ দিলো রোহিতকে, “আমাদের আর কোন দিন দেখা হবে না”

gay superman, gay cartoon



তাদের আর কোন দিনই দেখা হয় নাই। রোহিত সেই মেসেজের উত্তর দেয় নাই। খোকনও রোহিতকে আর কোন মেসেজ পাঠায় নাই। অনেক দিন কেটে যায়। রোহিত হারিয়ে গেলো। খোকন জানে এই শহরেই আছে। কিন্তু বের করতে পারে না মানুষটিকে। কিন্তু রোহিতকে দেখার উগ্র বাসনা খোকনের মনে আজো সুপ্ত রয়ে গেছে। হাই ফাইভের চল এখন আর নেইফেসবুকের পাতায় পাতায় এখনো সে রোহিতকে খুঁজে ফেরে। রোহিত নামে কোন আইডি দেখলে সে ঢু মারে তার প্রোফাইলে।  ছবি দেখে। চেনার চেষ্টা করে।

২০১৪ সাল। তরতর করে অনেকটা সময় কেটে গেছে। অনেক কিছুই বদলে গেছে। খোকন আর আগের মত উগ্র ভালোবাসার কাঙাল নেই। বিয়ে করে স্থির হয়েছে। যদিও সমকামী জীবনকে সে ছাড়তে পারে না। খোকন এখন দুই সন্তানের জনক। ছেলেরা বড় হচ্ছে। এখন এসব ছাড়া উচিত বলে মনে করে সে।  তার সেই ছোট্ট কোম্পানী এখন বেশ বড় হয়েছে। অনেক লোক সেখানে কাজ করে। ইত্তেফাকের মোড় পেরিয়ে কিছু দূরে তার ফ্লাট। পাঁচতলায় দক্ষিন মুখো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সে এখনো রোহিতের কথা ভাবে। প্রেম! প্রেম সে অনেক গুলোই করেছেঅনেক রোহিত এসেছে তার জীবনে। কিন্তু স্থির হতে পারেনি কারো সাথে।  খোকন আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আছে অনেক দিন হলো। হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে তাকে আলাদা করে দেখার মত কিছু পায়নি আমি। প্রথম সে আমার নজরে আসে ২০০৯ সালের দিকে। তখন আমি সেন্ট মার্টিন সি বিচে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত দিনের শিক্ষা সফরে এসেছি। আমি বরাবরই ফেসবুকের পোকা। যেখানেই যাই না কেন ফেসবুক আমার সাথে থাকে। সিবিচে বসে ফেসবুক গুতাই। দেখতে পেলাম খোকন তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে হানিমুনে এসেছে। কালার ম্যাচ করা পোশাক পরে তারা অনেক ছবি আপলোড করেছে। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করছে। পেছনে বঙ্গোপসাগরের নীল ক্যানভাস। আকাশে সাদা সাদা মেঘ।  আমি একটার পর একটা ছবি দেখে যাই। কিছুটা আফসোস বোধ করি। ইশ! আমার যদি কেউ থাকত। এভাবে ছবি তোলার সৌভাগ্য কি কখনো হবে আমার! আমি খোকনকে নক করিনি। কিন্তু মাথার ভেতর তার হানিমুনের ছবিগুলো গেথে গেছে। যদিও খোকন খুব বেশী বন্ধু বৎসল নয় তবু একটা সময়ে খোকনের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব তৈরী হয়।  রোহিতের গল্প শুনে আমিও রোহিতকে দেখার আগ্রহ বোধ করি। রোহিত কি আমার লেখা এই গল্প পড়বে কোন দিন!

টিনেজ ছেলেদের প্রতি আক্রোশ বোধ করে সে। কিছুদিন প্রেম করার পরে সে তাদের ছ্যাঁকা দেয়। টিনেজদের ছ্যাঁকা দিয়ে এক অসুস্থ আনন্দের স্বাদ পায় সেছ্যাঁকা খেয়ে কিশোর ছেলেগুলো কান্নাকাটি করে, ঘ্যান ঘ্যান করে। চাপা উল্লাসে ফেটে পড়ে তার মনমাঝে মাঝে নিজেকে তার স্যাডিস্টিক মনে হয় মনে হয় সে যা করছে সেটা উচিত নয়।  তবুও সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে না। এই জগত থেকে বেরিয়ে যেতে চায় । কিন্তু পারে না। রোহিত কে দেখার ইচ্ছে গুমরে মরে। শুধু একবার দেখতে ইচ্ছে করে সেই ছেলেটিকে। নিশ্চয়ই এখন সে অনেক বড় হয়ে গেছে। একবার তাকে জিজ্ঞেস করতে চায়। শুধু একবার “ভালো যদি নাই বাসবে তবে ভালোবাসা জাগালে কেন ?


কত প্রশ্ন যে নিরুত্তর রয়ে যায়। উত্তর দেবার মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। 

পুনশ্চঃ গল্পটি আমার এক বন্ধুর অনুরোধে তার নিজের জীবনের কাহিনী অবলম্বনে রচিত। তার আশা এই গল্পটি পড়ে রোহিত যদি তার কাছে ফিরে আসে। কি বিচিত্রই না মানুষের প্রত্যাশা!

চিটাগাইঙ্গা এক পোলা

অনেকদিন পর আবার কলম ধরলাম নিজের কথা লিখব বলে। যখন আর কোন কিছু ভাল লাগেনা তখন আমি কলম ধরি নিজের কথা লিখতে। নিজেকে ভূলিয়ে রাখতে চাই জীবনের অব্যক্ত ইতিহাস আওড়ে। আজ আমি বলব চিটাগাইঙ্গা এক পোলার গল্প।

প্রথম মেসেজঃ প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর ফেসবুকে ঢোকা আমার নেশা হয়ে গেছে। নোটিফিকেশান আর মেসেজ চেক করি টয়লেট আর দাঁত ব্রাশ করার মাঝে। সেদিন একটা মেসেজ পেলাম, অনুপম তোমার বায়োডাটা অসম্ভব সুন্দর ( আমি নিজেও জানি আমার বায়োডাটা টা ইউনিক। অনেকেই কপি পেস্ট মেরে নিজের করে নিয়েছে। তবে সব থেকে মজার ব্যাপার হল, তারা আমার বয়স, উচ্চতা পর্যন্ত কপি করেছে।) আমি নিয়মিত তোমার স্ট্যাটাসগুলো পড়ি। (আমি মনে করার চেষ্টা করলাম আমার স্ট্যাটাসগুলোতে এই পোলার কোন কমেন্টস দেখেছি কিনা। নাহ।) আমার খুব ভাল লাগে। আমি তোমার ভাল বন্ধু হতে চাই।

এরকম মদন মার্কা মেসেজ আমি মাঝে মাঝে পাই। আজকেও একটা পেলাম।  তাই পাত্তা দিলাম না। আসলে বলে কয়ে কখনো বন্ধুত্ব হয়না এই বেসিক জিনিসটা মদনগুলো কেন বোঝেনা সেটা আমি নিজেই বুঝিনা। ভদ্রতা করে মদনটাকে লিখে পাঠালাম, অবশ্যই আমরা ভাল বন্ধু হতে পারি।

মন্তব্য বন্যাঃ এর পরের ঘটনা খুবই সাধারণ। আমাদের মেসেজ আদান-প্রদান চলতে থাকলো। আমি স্ট্যাটাস দিলে সেখানে তার সরব উপস্থিতি। আমার স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড কথাবার্তা আর ওপেন মাইন্ডেড মেন্টালিটি নিয়ে মূহূর্মূহু প্রশংসা পেতে লাগলাম। এটা আমার ফেসবুক জীবনে খুব সাধারণ একটা ঘটনা। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এরকম অনেক গুলো বন্ধু এখনো আছে। প্রতিদিন সকালে এসে যাদের মন্তব্য আমি প্রত্যশা করতাম। ঝগড়াঝাটি কথা কাটাকাটি সব হত কমেন্টস বক্সে। তাদের অঙ্কেই এখনো আমার ভালো বন্ধু। কিন্তু তাদের মন্তব্য আর পাই না। হয়তো তারা ব্যস্ত থাকে অন্য কারো স্ট্যাটাসে। এটাই জীবনের নিয়ম। এক জিনিস মানুষের খুব বেশীদিন ভাল লাগে না।

ফোনালাপঃ ফেসবুক ব্যবহার করি ২০০৭ থেকে। ফোন নাম্বার নিয়ে মাঝে মাঝে বিড়ম্বণার শিকার হতে হয়। সেজন্য আমি আলাদা একটা নাম্বার নিয়েছি শুধুমাত্র ফেসবুক বন্ধুদের জন্য। তাই কেউ চাইলেই আমি নাম্বার শেয়ার করি। নাম্বার শেয়ার করা নিয়ে ন্যাকামো করা আমার একদম পছন্দ নয়। ছবি শেয়ার করার ব্যাপারে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উলটো।

তার সাথে ফোনে কথা হতে থাকলো। সে আমার ভয়েসের ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগলো। আমি মনে মনে চরম বিরক্ত হলাম। আসলে আমার ভয়েজ টোন কিছুটা চিকন। সেজন্য আমাকে সারাজীবন হাফ লেডিস, হিজড়া এই ধরণের উপহাস শুনতে হয়েছে। ইদানিং কোন ব্যাপারে বিরক্ত হলে আমি সরাসরি বলি যে আমার বিরক্ত লাগছে, আমি এই ব্যাপারে কথা শুনতে আগ্রহী নই। আগে বলতে পারতাম না।

প্রেমপ্রস্তাবঃ প্রেমের প্রস্তাব পাবো আমি এই ব্যাপারে শিওর ছিলাম। মাস না পেরুতেই পেয়ে গেলাম। অনেক তো দেখলাম ভাই। কিভাবে ফেসবুক ভালবাসায় আস্থা রাখি বলো! ঠিক ফিরিয়ে দিলাম না। আমার সেই তথাকথিত মুখস্থ ডায়ালগ টা মারলাম, দেখ ফ্রেন্ডস, আমি আসলে প্রেম ট্রেম বিশ্বাস করি না। আমি বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। আমি ফেসবুকে আসি বন্ধুত্ব করার জন্য, ভালবাসার মানুষ খোঁজার জন্য।

এই কথাগুলো অন্য মানুষ কতটা বিশ্বাস করে জানিনা। কিন্তু আমি নিজে খুব একটা বিশ্বাস করি না। তবে একথা সত্য আমি এখন সেক্সের জন্য ফেসবুক  ব্যাবহার করিনা। ফেসবুক আমার কাছে ফাকবুক নয়। আমি ফেসবুক ব্যবহার করি কারণ এটা অনেকটা নেশার মত হয়ে গেছে। ফেসবুকে না আসলে ভালো লাগেনা। টাইম পাস এখন আমাকেই পাস করে।

দীর্ঘ বিরতিঃ তারপরের ঘটনা আরো সিম্পল। আমার স্ট্যাটাস, ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে সে যেন হারিয়ে গেলো। তার কথা আমিও ভূলে গেলাম। খুব একটা মনে রাখার মত কেউ সে নয়। তারপরও মাঝে মাঝে পাম্প দেয়া কথা গুলো মনে পড়ে। পাম্পে কে ফোঁলেনা বলো! হাসিনা-খালেদারা পর্যন্ত পাম্প লাইক করে। আর আমিতো কোন ছার।

সশরীরে সাক্ষাতঃ সেপ্টেম্বর মাসের কোন একদিন সকালে চট্টগ্রামের বাসে চেপে বসলাম। পথে আমি স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু করলাম এটা ক্রস করছি, সীতাকুণ্ডের পাহাড় আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ইত্যাদি। রাস্তায় বেরুলে স্ট্যাটাস মারা আমার বহু পুরোনো রোগ। অনেকে বলে এভাবে আমি পার্টনার খুঁজি। এভাবে কেন পার্টনার খুঁজবো আমি বুঝিনা। যাদের খুজতে হবে তারা এমনিতেই তো আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে। আজব মানুষের মেন্টালিটি। ভেবেছিলাম রঞ্জু, গিয়াস, মিল্টন, বাপ্পী, সঞ্জয় এদের কেই না কেই আমাকে ফোন করবে। কিন্তু কেউ করলো না। এটাই হলো ফেসবুক বন্ধুত্ব আর বাস্তব জীবনের বন্ধুত্বের পার্থক্য। তুমি তাদের যেভাবে ফিল করছো তারা তোমাকে সেভাবে ফিল করে না।

আমাকে ফোন করলো দুজন। পদ্মা নদীর মাঝি আর সেই ছেলেটা। তারা দুজনেই দেখা করতে চায়। কিন্তু আমার হাতে সময় ছিলো না। সন্ধায় ফিরতে হবে। আমি ছিলাম জিইসি মোড়ে। পদ্মা নদীর মাঝি চাচ্ছিলো আমি তার সাথে আন্দরকিল্লায় গিয়ে দেখা করে আসি, আর সেই মদন চাচ্ছিলো মিনি বাংলাদেশের সামনে যাই। আমি দুজনকেই জিইসি মোড়ে আসার প্রস্তাব দিলাম। পদ্ম নদীর মাঝি আসতে রাজী হলো না। আমারও যাওয়ার সময় ছিলো না। সে বিরক্ত হয়ে আমাকে উলটা পালটা কিছু অপ্রিয় কথা শুনিয়ে দিলো।
একজন বয়স্ক মানুষের কাছে এধরণের ছেলে মানুষি আশা করা যায় না। আমি তাকে অবলীলায় ব্লক করে দিলাম। তাকে ব্লক করার পেছনে অন্য কারণ ছিলো। সে কথা পরে একদিন লিখবো। যাই হোক, কলিগদের সাথে চিটাগং এসেছি। তাদের সামনে কারো সাথে মিট করার সাহস পাচ্ছিলাম না। তবু রাজী হলাম। এমনিতেই হাতে সময় নেই। তারপরো সেই ছেলেটা এক ঘন্টা লেট করে এলো। হাই হ্যালো হলো। কিছুটা নার্ভাস লুক। বুঝলাম না কেন।

মাঝারী হাইটের, গোলগাল চেহারা। গায়ের রংটা কালোর দিকে পড়ে। ঘন্টা খানেক সময় হাতে আছে। রিক্সা নিলাম। কারো সাথে দেখা হলে তার জীবনের কষ্টের গল্পগুলো শুনতে হয়। না চাইলেও শুনতে হয়। তাই আমি মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড ছিলাম। কিন্তু মদনটা কোন কষ্টের গল্প শুরু করলো না। সে শোনালো তার জীবনের প্রেমের গল্প। একজনের সাথে তার লাভ এফেয়ার চলছে সেই গল্প। এরপর আমার দিকে চাইলো। আমার সেই বিখ্যাত ছবিটার সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। দেখেশুনে বলল, আমার বিশ্বাস হয় না ওটা তোমার ছবি। আমি বললাম, তোমার বিশ্বাস তোমার কাছে, ওটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নাই। তুমি কি মনে করো ১৭ বছরের ছবির সাথে ২৬ বছরের এই আমির মিল থাকবে। সে বলে কিন্তু তাই বলে এতটা চেঞ্জ কিভাবে হয়!

আমি তাকে ২০১০ সালে তোলা কিছু ছবি দেখালাম। এগুলো কি আমার ছবি বলে মনে হয়। সে বলে, খুব একটা মিল নেই। আমি বললাম, চেহারা চেঞ্জ হলে আমার কি করার আছে বলো। দুই বছর আগের ছবির সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছো না। তাহলে ১০ বছর আগের ছবির সাথে মিল খুঁজে পাবে কিভাবে। নিশ্চয় আমার চেহারায় এখন কচি ভাব খুঁজে ফেরা বাহুল্য।

শেষঃ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। শেষ করি। ফিরে আসার পরদিন সে আমার স্ট্যাটাস ওয়ালে ভূয়া, ফ্রড, অন্যের ছবি চোর ইত্যাদি লিখে ভরে ফেললো। আমি রিমুভ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। আমি একমাত্র বাবা মা তুলে স্লাং না দিলে কাউকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে রিমুভ করি না।  তাকে মেসেজ এ লিখলাম, এগুলো বাদ দাও। নিজের পথে চলো, আমাকে রিমুভ করে দাও। ব্যাস।  সে কিছু অপ্রিয় উত্তর পাঠালো। আমার মেজাজ তো গরমই থাকে। আরো গরম হয়ে গেলো। সে স্ল্যাং লিখে পাঠালো। আমি হুমকি দিলাম, এরকম করলে তোমার ফটো ফেসবুকে আপলোড করে দেবো। সে পালটা হুমকি দিলো আমার ফটো আপলোড করে দেবে। আমি লিখলাম যোগ্যতা থাকলে দাও।

এবার সে নরম হলো, স্যরি বললো। লিখল, আমি জানি তুমি খুব ভালো ছেলে। তুমি কখনোই এটা করবে না। প্লিজ আমার ছবিগুলো ডিলিট করে দাও। আমিতো তোমার কোন ক্ষতি করিনি। আমি খুশী হয়ে তাকে ব্লক করে দিলাম।

পূনশ্চঃ ফেসবুকে আজো সে আমার ব্লকলিস্টে। ফেসবুকে তো যোগাযোগ করতে পারেনা।  আমার যে পেজটা আছে ওখানে সে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে মাস খানেক পরে, অনুপম, তোমার স্ট্যাটাস ছাড়া আমার ওয়াল খাঁ খাঁ করে, প্লিজ আমাকে আন-ব্লক করো।

দুষ্টু গরুর চেয়ে শুন্য গোঁয়াল অনেক ভালো। আমি তার মেসেজের উত্তর দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি কখনো।



রাতুলের কথা

রাতুলের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় রাজলক্ষী মোড়ের বামপাশের মার্কেটটার সামনে। ২০১১ সালের জুন মাস। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে ঢাকা এসেছি চাকুরীর সন্ধানে। উঠেছি উত্তরা সেকশান তিনে বন্ধুর মেসে। উত্তরা আমার বেশ পছন্দ হয়ে গেল। সাজানো গোছানো পরিচ্ছন্ন। নিজের মাথা গোঁজার জন্য মেস খোঁজা আর চাকুরি খোঁজা দুটোই চলতে থাকলো। ফেসবুকে আমার মনের গোপন বাসনা পাখা মেলে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি অনেকটা খোলসের ভিতরে লুকিয়ে কাটিয়েছি কচ্ছপের মত। অজানাকে আমার অনেক ভয়। এখন একটু সাহস বাড়ছে। ভাবলাম দেখা করি সবার সাথে।

মধ্যজুনের এক সন্ধ্যায় রাতুল আমাকে ফোন করে। “কিরে, ঢাকা আসছিস, আমার সাথে দেখা করবি না?”
-     দেখা করতেই চাই।
-     কবে দেখা করবি।
-     আমি তো সবসময় ফ্রি আছি। তুই বল।
-     আগামীকাল বিকেলে?
-     সমস্যা নাই। কোথায়?
-     সেকশানে পাঁচে আয়।
-     সেকশান পাঁচ চিনিনা। বুঝিস তো এখনো নতুন।
-     সমস্যা নাই । কোন জায়গা চিনিস?
-     রাজলক্ষীর মোড়।
-     ওকে আমি চলে আসব।

পরদিন সন্ধ্যার কিছু আগে আমাকে ফোন দিলো রাতুল। বিবর্ন রাতুল। দেখা হলো। হ্যান্ডশেক হলো। চা খেলাম। রাতুলের ব্যবহার আন্তরিক। চেহারাটা সাধারণ। হৃষ্টপুষ্ট স্বাস্থ্য। গাত্রবর্ণ শ্যামলা। রাতুল বলল, চল ফ্রেন্ডস ক্লাবের মাঠে গিয়ে বসি। আমি রাজি হলাম।

অন্ধকার রাতের চাদরে ঢাকা পড়েছে মাঠ। ঘাসের উপর বসলাম দুজন। অনেক কথা হলো। বেশিরভাগ কথা রাতুলই বলেছিলো। সব কথা আজ মনে নেই। আমি নতুন পরিচয়ে সাধারনতঃ কথা কম বলি। যদিও এখন এই সমস্যাটা আমি অনেক কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।  রাতুলের দুইটি কথা আমার এখন মনে পড়ছে।  সে তার রোল বলেছিলো মেইনলি টপ কিন্তু হ্যান্ডসাম ম্যানলি কাউকে পেলে সে বটম রোল প্লে করে। আরেকটি কথা বলেছিলো মাঠে এসে ব্যায়ামরত পঁয়ত্রিশোর্ধ এক ব্যক্তিকে দেখিয়ে যে লোকটা বটম। আমি বলেছিলাম লোকটা বটম তাতে আমাদের কি। রাতুল আমার কথা শুনে অনেক হেসেছিলো। আমি তখন বুঝিনি। পরে বুঝেছিলাম। সে মূলত আমার প্রিফারেন্স বের করতে চেষ্টা করছিলো। যাই হোক আধা ঘন্টা আড্ডা দেয়ার পর সে চলে যায়। অন্যরকম এক ভালোলাগা আমাকে আচ্ছন্ন করে। এই প্রথম কোনরকম কামনা বাসনা ছাড়াই আমি কারো সাথে দেখা করলাম। রাতুলের ব্যবহার অনেক ফ্রেন্ডলি ছিলো। সে ক্লাস মেইনটেইন করতে জানত। আর সুন্দরের প্রতি ছিলো তার অদম্য আকর্ষণ।

রাতুলের সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হয় একটি মার্কেটে। আমাকে একবার অবশ্য ও গ্রুপ সেক্সের প্রস্তাব দিয়েছিলো। আমি যাওয়ার হিম্মত করে উঠতে পারি নাই। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে রাখতে এক ধরণের মানসিক বাঁধা তৈরী হয়েছে আমার। আমি নিজেকে কারো সামনে প্রত্যক্ষভাবে উন্মুক্ত করতে পারিনা।

২০১৩ সাল। দুই বছর পেরিয়ে গেলো। রাতুলের সাথে আর দেখা হয় নাই। ফেসবুকে যোগাযোগ হত। একদিন শুনলাম রাতুল সুইসাইড করেছে। খবরটা সত্য বলে মানতে ইচ্ছে করছিলো না। গুজব হলেই খুশী হতাম। একদা রোহানের সাথে রাতুলের অনেক সখ্য দেখতাম ফেসবুকে। আমি তার ওয়াল চেক করে দেখলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম। অজানা কোন কারণে রাতুল নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। এরকমটি না হলেই ভালো হত। রাতুলেরা কেন হারিয়ে যায়। সামান্য যেটুকু স্মৃতি আছে সেটুকুই আমাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলে মাঝে মাঝে। মিস করি প্রথম মিট করা মানুষটিকে।

যেখানে আছিস , ভালো থাকিস রাতুল।






স্বপ্ন ভেঙে যায়

এক দিন এক শীতের বিকেলে
তোমার গালের ছোট্ট তিলে
কাঁপন জাগায় আমার দিলে।

অপলকে চেয়ে থাকি
ভাবনায় ছবি আঁকি
তুমি আমি দুটি পাখি।

ভাসছি সুখ সায়রে
দুজনার বাহুডোরে
জড়িয়ে ধরেছি জোরে।

স্বপ্ন ভেঙে যায়
নতুন কিছু নয়
বারবার এই হয়।

আবার নতুন কাউকে দেখে
চোখ দিয়ে নেই চেখে
কল্পনার মসলা মেখে।

তরুন, তুমি আছো দূরে
মন আমার ভবঘুরে
চায় যে শুধু তোরে।

 -----------------------------------------------------------------------------------------------------



ডাক্তারের চেম্বারে

সৌম্য, আমাদের খুইল্লের ছেলে। আইয়ে ক্লাসে পড়ে। টেনেটুনে প্রতিবছর পাশ করে যায়। ইংরেজী সে ভালোই বোঝে। কিন্তু ইশকুলের ছারেরা সবাই তারে গাঁধা বলে। ইংরেজীর ই ও নাকি তার পেটে নাই। কয়েক সপ্তাহ ধরে তার পেটের অবস্থা ভালো না। বয়রা মোড়ের ইসলামী হাসপাতালে বিদেশী ডাক্তার আসে। তার কাছে বেশী টাকা ভিজিট দিয়ে গত সপ্তাহে পরামর্শ নিয়ে সেই মত কাজ করল। কিন্তু কিছুই হলো না। সে আজ আবার গেলো হাসপাতালে।

আধাঘন্টা বসার পরে সে ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকার চান্স পেলো। লাল মুলো চেহারার ডাক্তার। কিড়মিড় করে ইংরেজী বলে। বলুক। আমাদের সৌম্য কি ইংরেজী কম বোঝে নাকি।

ডাক্তার জিজ্ঞেস করলঃ Are you properly taking 3 meals a
day as I advised?
সৌম্যের মাথায় বজ্রাঘাত হলো। সে মিনমিন করে বললোঃ My god I heard 3
males per day..



gay romancegay passionate kiss
gay kiss, gay love, gay sexgay kiss, gay love, gay sex

ভালোলাগা উপাখ্যান

সজল! না, ছেলেটার চোখে কোন জল নেই। তবু তার নাম সজল আহমেদ। বাবা মায়ের রাখা নাম। আসলে তার নামটি রেখেছিলেন তার আম্মুর নানা।  চোখে তার চাপা দ্যুতি। পৃথিবীটা যে আনন্দময় তা সজলের চোখ দেখলে বোঝা যায়। সদা হাস্যময় লাস্যময় এক যুবা।  অতি সিরিয়াস সময়ে সে রসিকতা করে পরিবেশ হালকা করার ক্ষমতা রাখে। সজল খুলনার ছেলে। খুলনা টাউনের নয়। মেইন টাউন থেকে বেশ দূরের এক গ্রামে তার বেড়ে ওঠা। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। হলে থাকার কথা। কিন্তু সে থাকে মিরপুরে।
                  
অনেকক্ষণ শাহবাগে দাঁড়িয়ে থাকার পরে একটা বাস পেলো। সিট নাই। সিট আছে, কিন্তু একটাও খালি নাই। পেছনে একটা সিট খালী হলো। কিন্তু পাশের দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি অতি দ্রুত শূণ্যস্থান পূর্ণ করে ফেলল। লোকটি ছোট খালে খুব সম্ভবত চেয়ার সিটিং খেলায় এলাকায় চ্যাম্পিয়ন হতসজল বাসের রড ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুসময় পরে কয়েকব্যক্তির ঘাড় পেরিয়ে একটা ছেলের দিকে চোখ পড়ে গেলো। ছেলেটার ঠোঁট এবং নাকের গঠন অনন্য। একবার চোখ পড়লে আরেকবার সে ফিরে তাকাবেই। সজলও দ্বিতীয়বার চোখ তুলল। চোখাচোখি হয়ে গেলো। প্রথম প্রথম অন্য ছেলেদের চোখে চোখ রেখে তাকাতে সজল লজ্জা বোধ করত। ক্রমে ক্রমে সেটা এখন দূর হয়ে গেছে। এখন সে আর শরমিন্দা হয় না। সজল হালকা একটা হাসি দিলো। ছেলেটা চোখ ঘুরিয়ে সামনে তাকালো।

কৈশোরে সুন্দর মেয়েদের দূর থেকে দেখার মাঝে একটা আলাদা থ্রিল আছে। এ অনেকটা বাগানে ফোঁটা সেরা ফুলটা দেখার মত। ধরা বা ছোঁয়ার দরকার নেই। দূর থেকে জাস্ট তার সৌন্দর্য্য সুধা উপভোগ করা। তাদের চূড়ির রিনিঝিনি ঝংকার, কাপড়ের খসখস শব্দ এক অন্যরকম শিরশিরানী এনে দেয় বুকের ভিতর। এটা গেলো আর দশজন সাধারণ ছেলের কথা। সজলের কিন্তু অন্য কেস। সুদর্শন ছেলে দেখলে তার বুকের ভিতর শিরশিরে কাঁপন জাগে। দ্বিতীয়বার তাকাবার অদম্য বাসনা তাকে পেয়ে বসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে, ক্যান্টিনে, আমগাছের নিচে যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়, দূরের কোন সুন্দরী অপ্সরীকে দেখে সবাই লোভনীয় মন্তব্য করে। সেও তাদের সাথে তাল দেয়। কিন্তু সে মুখ ফুঁটে বলতে পারে না ঐ অপ্সরীর সাথে থাকা ছেলেটাকে দেখে তার অনুভূতির কথা। এমন এক সমাজে, এমন এক দেশে জন্মেছে যেখানে সে নিজে থেকেই শিখেছে কোন কোন বিষয় গোপন রাখতে হবে। কেউ তাকে নিষেধ করেনি। কিন্তু সে জানে যখনি সে মুখ খুলবে তখনই ধর্ম , সমাজ, পরিবার তার মুখ চেপে ধরবে। সত্যি বলতে কি সজল এখনো জানেনা সে সমকামী কিনা।

কৈশোরে সে প্রথম এর স্বাদ পায় পাশের বাড়ীর ভাইয়ার কাছে। বাড়ীতে গেস্ট থাকায় সে ঘুমোতে গেছিলো পাশের বাড়ী। ভাইয়া তার থেকে বছর পাঁচেকের বড় ছিলো। সম্পূর্ণ অচেনা এক জগৎ তার সামনে হাজির হয়। ভালোলাগা মন্দলাগা তাকে কুরেকুরে খেতে থাকে। পাপবোধে সে কোন কিছুতেই মন বসাতে পারে না। মসজিদে বসে চুপি চুপি কাঁদে। আল্লাহর কাছে মাফ চায়। হে আল্লাহ, তুমি আমাকে আদ, সামুদ, লুতের কওমের মানুষের মত শাস্তি দিয়ো না। আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করো।

সজল সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছে কিনা আমি বলতে পারব না। তবে সে সমকামিতার পথে পুরোপুরি ছেড়ে যেতে পারে নি। আবার ধরেও থাকেনি। আরো কয়েকবার সে ইচ্ছে অনিচ্ছায় গেছে ভাইয়ার বিছানায়। আর সুন্দর ছেলে দেখলে সে যে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তার মর্ম বুঝতে পেরেছে। এটাকে যে ক্রাশ খাওয়া বলে সেটা সে জানতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। ক্রাশ সে বহুবার খেয়েছে। কারো ফিগার দেখে, কারো ঠোঁট দেখে, কারো চোখ দেখে কারোবা বাঁকা হাসি দেখে। কাছের বন্ধুরা কেউ কেউ খেয়াল করে দেখেছে। জিজ্ঞেস করেছে, কি দেখিস। সে মিথ্যা বলেছে। আমি মানুষের হাঁটা দেখি। খেঁয়াল করে দেখ। একেকটা মানুষের হাঁটার স্টাইল একেকরকম। কেউ দুলে হাঁটে, কেউ নাচের ছন্দে হাঁটে আবার কেউ পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে হাটে। হাঁটাকে একধরণের শিল্প বলা চলে। বন্ধু খেয়াল করে দেখে আরে আসলেই তো।

সজল মিরপুর দশে এসে নামে। এক কাপ চা খাওয়া গেলে মন্দ হবে না। সে মফিজ চাচার দোকানে গেলো। দোকান বলতে রাস্তার ফুটপাতের উপর কাঠের তৈরী অস্থায়ী দোকান। মফিজ মিয়ার বাড়ী নোয়াখালী। নোয়াখালীর মানুষ সবজায়গায় পাওয়া যায়। আমেরিকা, লন্ডন, মিডল ইস্ট, এমনকি চাঁদে গেলেও নোয়াখালীর লোক পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস। মফিজ মিয়ার দোকানে কয়েক আইটেমের চা পাওয়া যায়। লাল চা, দুধ চা, আদা চা, লেবু চা। মফিজ মিয়া অবশ্য দুধ চা বলে না। বলে  সাদা চা। লাল চা যখন আছে তখন সাদা চা ও থাকা উচিত। আর চায়ের নাম কেন শুধু দুধের নামে হবে। চায়ে তো চিনিও থাকে। কেউ তো কখনো বলে না চিনি চা। মফিজ চাচার সাদা চায়ের মজাই আলাদা। এক কাপ খেলে আরেক কাপ খেতে মনে চায়। সজল চায়ের অর্ডার দিয়ে বেঞ্চে বসল। বেঞ্চের চার পায়ার কোন একটা ছোট আছে। নড়ছে। বসে আরাম পাওয়া যাচ্ছে না। মফিজ মিয়ার পোষা কালো বিড়ালটা মফিজ মিয়ার ছোট ক্যাশ বাক্সের পাশে বসে আছে। সজলের চোখের দিকে বিড়ালটা তাকিয়ে আছে। একটা মজার কথা কি জানো বিড়ালের চোখে চোখ রেখে তাকালে সে খুব লজ্জা পায়। সে কিছুতেই তোমার চোখে চোখ রাখবে না। মুহূর্তেই চোখ ফিরিয়ে নেবে। মানুষ এরকম কুচকুচে কালো বিড়াল কেন পোষে! কালো বিড়াল নাকি ভূতের বাহন। কয়েকবছর আগে শোনা গিয়েছিলো কালো বিড়ালের মাথায় নাকি ম্যাগনেট থাকে। মহামূল্যবান সেই ম্যাগনেট নাকি চড়া দামে আমেরিকা কিনে নেয়। মফিজ চাচা ম্যাগনেটের লোভে কালো বিড়াল পুষেছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে সে শুধু হাসে।

চা শেষ করে সে ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকলো। ফুরফুরে বাতাস বইছে। ভালোই লাগছে। বাতাসে শীতের আমেজ। বাতাসটাকে ভালোভাবে উপভোগ করতে সে ওভারব্রিজের উপর গিয়ে দাঁড়ালো। বাতাসটা আসছে মিরপুর -১ এর দিকের রাস্তা ধরে। আজকাল বাতাসেরাও গাড়ীর মত রাস্তা ধরে চলাফেরা করে ঢাকা শহরে। রাস্তার বাইরে গেলে বড়বড় বিল্ডিং এ বাড়ী খেতে খেতে বাতাসেরা নাকাল হয়ে যায়। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। গাড়ীর এই প্যাপু শব্দ কান ঝালাপালা করে দেয়। যান্ত্রিক কোলাহলকে পাশ কাঁটিয়ে সে বাতাসের শীতলতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে। বাতাস তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছিলো অন্য কোথাও। পথচারীর অন্যমনস্ক ধাক্কায় সে সম্বিত ফিরে পেলো। ধাক্কা দেয়া লোকটা মিষ্টি করে বলে স্যরি। সজল খেয়াল করল সেই ছেলেটা। বাসের ভিতর যাকে দেখে সাময়িক ক্রাশ খেয়েছিলো। ছেলেটা দেখতে আসলেই অওসাম। ফরসা। মাঝারী হাইট। কানে হেডফোন। ছেলেটা পাশে দাঁড়িয়েছে। তার দিকে তাকালো। আবার সামনে চোখ ফেরালো। ওভারব্রিজের রেলিং বেয়ে ছেলেটার হাত সজলের হাত স্পর্ষ করল। সজল পুলকিত হলো। ছেলেটা নিশ্চয়ই তার মত কেউ। ছেলেটাকে স্মার্ট বলতেই হয়। চোখ দেখেই সে তার মনের কথা পরে ফেলতে পেরেছে। ছেলেটার চোখ রাডারকে হার মানিয়ে দেবে নিশ্চিত।

ছেলেটা কোন কথা বলছে না। সজলও কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না। একসময় ছেলেটা কানের পাশে মুখ এনে বলল, ভাই যাবেন? সজল একটু টাশকি খেলো। সে নিশিকন্যাদের দেখেছে ঢাকা শহরের রাস্তায়। নিশিপুত্রদের কথা মাঝে মাঝে শোনা যায় ফেসবুকের পাতায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলো ভূয়া থাকে। কারো সাথে সমস্যা হলে দেখা যায় একজন আরেকজনের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অমুক টাকা নিয়ে সেক্স করে। তার সাথে সেক্স করতে চাইলে এই নাম্বারে ফোন দাও ইত্যাদিএগুলো আসলে অতি জঘন্য মানসিকতার কাজ। ফেসবুক যারা ব্যবহার করে তারা সবাই মোটামুটি শিক্ষিত। বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষিত মানুষেরা এই কাজগুলো কিভাবে করে সজল বুঝতে পারে না।

সজল কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, কত দিতে হবে? ছেলেটা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, একবার করলে ৫০০ টাকা , দুইবার করলে ৭০০ টাকা। ব্লোজব নিলে ২০০ টাকা।  সজল জিজ্ঞেস করল, কি করো তুমি? ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো, একবার সেক্স করতে কি এগুলা জানা আর্জেন্ট আপনার?

সজল আর কথা বাড়ালো না। ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে চলল। ছেলেটা এই হ্যালো বলে তাকে ডাক দিলো। সে পেছনে ফিরে তাকালো না। তার বুকের ভেতরের ভালোলাগাটা এখন বিমর্ষতায় পরিণত হলো। বুকের ভেতর একটা ফাঁকা অনুভূতি তৈরী হয়েছে। পৃথিবীর আর সব পথ কি ছেলেটার জন্য রুদ্ধ হয়ে গেছে? নাকি সে টাকা উপার্জনের সব থেকে সহজ পথটাকে বেছে নিয়েছে। খোদা তায়ালা তাকে রূপ দিয়েছে দেহ ভরে। আর ছেলেটা সেটাকেই পুজি করেছে। সজল তার ফ্লাটের দরজায় পৌঁছে গেছে। রোড লাইটের আলো পেরিয়ে অনেক দূরের আকাশে তারার মেলা। তারা অবাক চোখে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা সজলের চোখে কি জল থাকা উচিত?


******************** *********************

two gay boy sitting in field and touch each other, gay love

******************** *********************

gay kiss

******************** *********************

চুমু কাব্য

একটি চুমুর জন্য
একটা সময় আমি,
অনেক বেশী তৃষিত ছিলাম।
বড় বেশী আকাংখিত এক চুমুর প্রতিক্ষায়
সকাল দুপুর পার করে দিয়েছি
ভাবনার সমুদ্রে।

আপন বাহূতে এঁকেছি চুমু
নিজ ঠোঁটে,
চুমুর স্বাদ ছিলো না তাতে
ছিলো এক রাশ অনুভূতি।
কামনায় ছিলো একজন মানুষ
আর এক জোড়া ঠোঁট।
যে ঠোঁটে মেলাবো আমার ঠোঁট।

ঠোঁটে ঠোঁট রাখার সুযোগ
অবশেষে এলো এমনি এক শীতের রাতে
মন চাইছিলো চুমু
যে চুমু নিয়ে আমরা মুঠোফোনে
কথা বলেছি ঘন্টার পর ঘন্টা।
সেই চুমু এলো
বড় বেশী আকাংখিত চুমু।

ঠোঁটে আমার সাহারার উত্তাপ
বুকে সুনামী দেহে ভূমিকম্প
থর থর করে কেঁপেছি আমি
তুমি ভাবতে পারো নাটক
তবে সত্যি ছিলো সেই কাঁপুনি
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কেঁপেছিলাম
আশ্চর্য্য এক অনুভূতিতে।
তুমি ভয় পেয়ে
জাপটে ধরেছিলে আমায়।

একসময় কাঁপন থামে
অনুভূতি ক্লান্ত হয়
রক্তে আবার জোয়ার আসে
আমাদের দুটি ঠোঁট সারা রাত এক হয়ে ছিলো
সেই রাতে।

এই জগতের চেনা সুরে
তুমি হারিয়ে গেছো পরের অন্তরায়,
তোমাকে আমি হারাতে চাইনি
কিন্তু তুমি চেয়েছিলে হারাতে
তাই ধরে রাখতে পারিনি।
নিরবে ফেলেছি চোখের জল
একটি ভূল মানুষের জন্য।
এখন আমার পাশে অনেক ঠোঁট
আমি চাইলেই চুমু আঁকতে পারি
ঠোঁটের তুলিতে।
কিন্তু ভালোবাসাহীন ঠোঁটে আর চুমু আঁকিনা আমি
সেই উত্তপ্ত ঠোঁট আজ বড় বেশী ঠান্ডা
মৃতের শীতলতা আজ সেই কমলা কোয়া ঠোঁটের গায়ে।