blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

রাতুলের কথা

রাতুলের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় রাজলক্ষী মোড়ের বামপাশের মার্কেটটার সামনে। ২০১১ সালের জুন মাস। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে ঢাকা এসেছি চাকুরীর সন্ধানে। উঠেছি উত্তরা সেকশান তিনে বন্ধুর মেসে। উত্তরা আমার বেশ পছন্দ হয়ে গেল। সাজানো গোছানো পরিচ্ছন্ন। নিজের মাথা গোঁজার জন্য মেস খোঁজা আর চাকুরি খোঁজা দুটোই চলতে থাকলো। ফেসবুকে আমার মনের গোপন বাসনা পাখা মেলে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি অনেকটা খোলসের ভিতরে লুকিয়ে কাটিয়েছি কচ্ছপের মত। অজানাকে আমার অনেক ভয়। এখন একটু সাহস বাড়ছে। ভাবলাম দেখা করি সবার সাথে।

মধ্যজুনের এক সন্ধ্যায় রাতুল আমাকে ফোন করে। “কিরে, ঢাকা আসছিস, আমার সাথে দেখা করবি না?”
-     দেখা করতেই চাই।
-     কবে দেখা করবি।
-     আমি তো সবসময় ফ্রি আছি। তুই বল।
-     আগামীকাল বিকেলে?
-     সমস্যা নাই। কোথায়?
-     সেকশানে পাঁচে আয়।
-     সেকশান পাঁচ চিনিনা। বুঝিস তো এখনো নতুন।
-     সমস্যা নাই । কোন জায়গা চিনিস?
-     রাজলক্ষীর মোড়।
-     ওকে আমি চলে আসব।

পরদিন সন্ধ্যার কিছু আগে আমাকে ফোন দিলো রাতুল। বিবর্ন রাতুল। দেখা হলো। হ্যান্ডশেক হলো। চা খেলাম। রাতুলের ব্যবহার আন্তরিক। চেহারাটা সাধারণ। হৃষ্টপুষ্ট স্বাস্থ্য। গাত্রবর্ণ শ্যামলা। রাতুল বলল, চল ফ্রেন্ডস ক্লাবের মাঠে গিয়ে বসি। আমি রাজি হলাম।

অন্ধকার রাতের চাদরে ঢাকা পড়েছে মাঠ। ঘাসের উপর বসলাম দুজন। অনেক কথা হলো। বেশিরভাগ কথা রাতুলই বলেছিলো। সব কথা আজ মনে নেই। আমি নতুন পরিচয়ে সাধারনতঃ কথা কম বলি। যদিও এখন এই সমস্যাটা আমি অনেক কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।  রাতুলের দুইটি কথা আমার এখন মনে পড়ছে।  সে তার রোল বলেছিলো মেইনলি টপ কিন্তু হ্যান্ডসাম ম্যানলি কাউকে পেলে সে বটম রোল প্লে করে। আরেকটি কথা বলেছিলো মাঠে এসে ব্যায়ামরত পঁয়ত্রিশোর্ধ এক ব্যক্তিকে দেখিয়ে যে লোকটা বটম। আমি বলেছিলাম লোকটা বটম তাতে আমাদের কি। রাতুল আমার কথা শুনে অনেক হেসেছিলো। আমি তখন বুঝিনি। পরে বুঝেছিলাম। সে মূলত আমার প্রিফারেন্স বের করতে চেষ্টা করছিলো। যাই হোক আধা ঘন্টা আড্ডা দেয়ার পর সে চলে যায়। অন্যরকম এক ভালোলাগা আমাকে আচ্ছন্ন করে। এই প্রথম কোনরকম কামনা বাসনা ছাড়াই আমি কারো সাথে দেখা করলাম। রাতুলের ব্যবহার অনেক ফ্রেন্ডলি ছিলো। সে ক্লাস মেইনটেইন করতে জানত। আর সুন্দরের প্রতি ছিলো তার অদম্য আকর্ষণ।

রাতুলের সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হয় একটি মার্কেটে। আমাকে একবার অবশ্য ও গ্রুপ সেক্সের প্রস্তাব দিয়েছিলো। আমি যাওয়ার হিম্মত করে উঠতে পারি নাই। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে রাখতে এক ধরণের মানসিক বাঁধা তৈরী হয়েছে আমার। আমি নিজেকে কারো সামনে প্রত্যক্ষভাবে উন্মুক্ত করতে পারিনা।

২০১৩ সাল। দুই বছর পেরিয়ে গেলো। রাতুলের সাথে আর দেখা হয় নাই। ফেসবুকে যোগাযোগ হত। একদিন শুনলাম রাতুল সুইসাইড করেছে। খবরটা সত্য বলে মানতে ইচ্ছে করছিলো না। গুজব হলেই খুশী হতাম। একদা রোহানের সাথে রাতুলের অনেক সখ্য দেখতাম ফেসবুকে। আমি তার ওয়াল চেক করে দেখলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম। অজানা কোন কারণে রাতুল নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। এরকমটি না হলেই ভালো হত। রাতুলেরা কেন হারিয়ে যায়। সামান্য যেটুকু স্মৃতি আছে সেটুকুই আমাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলে মাঝে মাঝে। মিস করি প্রথম মিট করা মানুষটিকে।

যেখানে আছিস , ভালো থাকিস রাতুল।






-----------------------------------------------------------------