blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

কনডোমের ছেঁড়া প্যাকেট

শেষ বিকেলের রোদের ছায়া বিছিয়ে আছে পিচ ঢালা কালো রাস্তার উপর্। টুংটাং ঘন্টা বাজিয়ে রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে কুলফি ওয়ালা। রাস্তার ফুটপাত ধরে পায়চারি করছে সুদর্শন এক কিশোর্। বয়স চৌদ্দ পনেরোর মত হবে। গায়ের রঙ পাকা আঙুরের মত । হলুদাভ আভা মন ছুঁয়ে যায়। টানা টানা দুই চোখে অদ্ভুত এক কামুক আহবান। চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে আমি ছেলেটাকে দেখছিলাম। দেখছিলাম না বলে রুপ সুধা গিলছিলাম বললেই ভালো হবে। চলার পথে অচেনা মানুষের রুপ দেখা আমার বহু পুরাতন অভ্যেষ। কারো চোখ, কারো ঠোট, কারো কোমরের গঠন মনে সুড়সুড়ি জাগিয়ে যায়। ছেলেটার মধ্যে, " আমাকে সবাই চায়, " টাইপের একটা ভাব আছে। তার ভাব দেখে আপন মনেই হাসছি।

সাদা একটা টয়োটা এসে থামলো। ছেলেটা হাসিমুখে এগিয়ে গেলো। মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক বসা ড্রাইভারের সিটে। হাত বাড়িয়ে তিনি দরজা খুলে দিলেন। ছেলেটা একটু মেয়েলি ভঙ্গিতে হেঁটে গাড়িতে উঠে বসলোআমার সামনের রাস্তায় পড়ে থাকা কিছু  শুকনো পাতা উড়িয়ে গাড়িটি সামনের মোড়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।

বসন্ত বিকেলে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। দোকানের রেডিওতে কি একটা গান বাজছে। শিল্পী খুব সম্ভবত এস ডি বর্মন। মনে পড়ে রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে কত যে ডেকেছি গানটায় এক কিশোরের অব্যক্ত ভালোলাগা ফুটে ওঠে প্রতিটি কলিতে। আমার এই ভালোলাগাও কি সেই ভালোলাগার মত। দোকানে আমরা দুজন। আমি এবং চা দোকানী লিটু ভাই। অনেক দিন চা খাওয়ার ফলে লিটু ভাইয়ের সাথে বেশ আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সমকামী হওয়ার দরুন অন্য মানুষের চোখ দেখে সহজে বুঝতে পারি সে সমকামী কি না! লিটু ভাইয়ের চোখে অন্যরকম এক উদাসীনতা থাকে সব সময়। তবু আমি বুঝতে পেরেছি লিটু ভাই সমকামী ছিলেন। মাঝে মাঝে টুকটাক কথা হয়। ছেলেটাকে দেখে বলল,

- কত জনের সাথে যে গেলো এই পোলা!
- চেন নাকি তারে ?
- চেহারায় চেনা। প্রায়ই নিত্য নতুন লোকের সাথে গাড়িতে করে চলে যায়।
- পার্ট টাইম কাজ টাজ করে নাকি ?
- পার্ট টাইম দেহ বেঁচা কাজ করে বলে মনে হয়।
- আচ্ছা লিটু ভাই , তুমি সমকামী জগৎ থেকে কিভাবে বের হয়ে গেলে ?
- সে এক লম্বা কাহিনী।
- বলা যায় ?
- হুম। বলা যায়। আর কিছু না হোক জীবনে কিছু শিখতে পারবে আমার কাছ থেকে
- বলো।
- আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। দুই বোনের পর আমি একমাত্র ছেলে হওয়ায় অনেক যত্নে মানুষ হই। তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি । বড় দুলা ভাইয়ের ছোট ভাই নাসির বেয়াই  আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। রাতে এক সাথে ঘুমাতে হলো আমাদের দুজনকে। সেদিন রাতে হঠাৎ বৃষ্টি এলো। কাঁথা ছিলো না। ঠান্ডায় কুকড়ে শুয়ে রইলাম। নাসির বেয়াই আমাকে জড়িয়ে ধরে।  আমার বেশ আরাম লাগে। এক পর্যায়ে নাসির বেয়াই আমার সাথে সেক্স করে। সত্যি বলতে কি অনেক ব্যাথা লেগেছিলো। কিন্তু আমি বাঁধা দেইনি। পরের রাতে আমরা দুজন আবার মিলিত হয়। এভাবে কয়েক দিন হওয়ার পর নাসির বেয়াই চলে যায়। আমি নিজের ভিতর অন্যরকম এক শূন্যতা বোধ করতাম।

কলেজে পড়ার সময় আমি পুরোপুরি সমকামী দুনিয়ার রাস্তা চিনে যাই। বেশ ডাগর চেহারা ছিলো আমার্। সবাই পছন্দ করত। বাপের বয়সী বুইড়া খাটাস গুলা টাকা দিয়ে সেক্স করত। হাত খরচের টাকা পেতাম। আমিও প্রতিদিন কারো না কারো সাথে চলে যেতাম। বড়লোকের বিশাল বাঙলো বাড়িতে কিংবা হোটেলের অন্ধকার ঘরে পরপুরুষের হাতে নিজেকে সঁপে দিতাম। চিপে চুষে সবাই শেষ টাকাটি উসুল করা পর্যন্ত আমাকে ভোগ করত। পাপ তাপ এসব নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। নিজে যে প্রস্টিটিউট হয়ে গেছি সেটকুও বুঝতাম না। চোখে রঙিন চশমা। দুহাতে টাকা ওড়াতাম প্রচুর ।

আগেই বলেছি যে যেভাবে খুশী আমাকে ভোগ করত। আমি বাঁধা দিতাম না। একবার শুধু বাঁধা দিয়েছিলাম। দুজন বিশাল দেহী যখন এক সাথে পুশ করার চেষ্টা করেছিলো। খদ্দেরদের অধিকাংশই সেক্স করার সময়ে কন্ডোম ব্যবহার করতে চাইত না। তাদের ধারণা কন্ডোম পরলে মজা কমে যায়। এটা কিন্তু ভুল ধারণা। তখন এগুলো বুঝিনি। বোঝার চেষ্টাও করতাম না।

একটা সময় শরীরের মাঝে  কিছু পরিবর্তন হতে লাগলো। আমি কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। নিত্য নতুন লোকের সাথে সেক্স করতাম। তোমাদের এখন যেমন দেখি দু চারজন বন্ধু থাকে আমার সেরকম কেউ ছিলো না। হাজার পুরুষের সামনে কাপড় খুলেছি। এমনও হয়েছে যে একজন আমাকে করছে আর অন্যরা চেয়ে দেখছে। তখনও লজ্জা পাইনি। কিন্তু লজ্জা পেতাম ডাক্তারের কাছে এগুলো বলতে। ডাক্তারের কাছে বলতাম অনেক কিছু লুকিয়ে চুরিয়ে। ডাক্তার রোগ ধরতে পারত না। ভুল ওষুধ দিত। আমি ডাক্তারকে দোষ দেই না।

একটা সময় শরীর ভাঙতে শুরু করলো। আপেলের মত ফোলা গাল চুপসে আমসি হয়ে গেলো। যৌন রোগের শিকার হলাম। একি এভাবে তাকাচ্ছো কেন ! এইডসের কথা ভাবছো? না। এইডস না। এইডস ছাড়াও অনেক রোগ আছে। সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি।



আইয়ে পাশ করেছিলাম শেষ পর্যন্ত। অনেক চেষ্টা তদবির করে রোগ সারলো কিন্তু শরীর আর সারলো না। দুর্বল লাগে। বুক ধুকপুক করে। অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাই। আমাকে আর কেউ গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় না। আব্বা আম্মার সঞ্চয় অনেকটা খরচ হয়ে গেছে আমার পেছনে। বাড়ি খানা ছাড়া আর কিছু নেই।

- ইন্টার পাশে তো চাকরি বাকরি কিছু একটা জোগাড় করতে পারতে ? চায়ের দোকান দিলে কেন ?
- চাকরি। হুম। চাকরি একটা জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য করতে পারিনি সেটা। আব্বা মারা গেলো। একটা কিছু তো করা লাগত। নাসির বেয়াই এই দোকানটা করে দিয়েছে ।
- নাসির , তিনি কি করেন।
- নাসির বেয়াই এখন অনেক টাকা পয়সার মালিক। অনেক দুর লেখা পড়া করে বড় চাকরি পায়। গাড়ি বাড়ি করেছে সে। ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে আছে। কলেজে পড়ার সময়ে নাসির বেয়াই অনেকবার আমার পিছে ঘুরেছে। আমি তখন তাকে পাত্তা দেই নি। অথচ আজ তার দয়ায় আমার দুইবেলা খাবার ব্যবস্থা  হয়েছে। জীবন এরকমই। কাল কি হবে তা আমরা কেউ বলতে পারি না। তাই অনিরাপদ সেক্স করে  ভুল করবা না।

সন্ধ্যার চাদরে মুড়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। সামনের গলি থেকে একটা কুকুর ছুটে এলো। আমাদের পাশ কাটিয়ে সে দৌড়ে চলে গেলো। এবার উঠতে হবে। ঘরের পথ ধরলাম। দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো সেই গাড়ি । কিশোর ছেলেটা নেমে চলে গেলো। মধ্য বয়স্ক লোকটা গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, মামা চা হবে ? লিটু ভাই চা বানাচ্ছে এক মনে। চেহারায় সেই উদাস ভাব। বসে যাওয়া ফর্সা গালে কেটলির ভাপ লাগছে। মাথার ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। হেড ফোন লাগিয়ে নিলাম কানে। কানের ছিদ্র দিয়ে মাথার ভেতর কিছু গান ঢোকানো যাক।

ফরিদা পারভীন গেয়ে উঠলো লালন গীতি,


দিন থাকতে দিনের মর্ম কেন বুঝলে না, সময় গেলে সাধন হবে না।

-----------------------------------------------------------------



9 টি মন্তব্য:

সাইদুর রহমান, কুড়িগ্রাম [প্রতুত্তর]

চমৎকার। সচেতনতামূলক গল্প। এরকম গল্প আরো বেশী বেশী লেখা উচিত।

বিঞ্জুলাল সমাদ্দর [প্রতুত্তর]

অনিরাপদ যৌন সঙ্গম করা আর নিজ হাতে বিষ পান করা সমান কথা।

রুবেল রাজবাড়ী [প্রতুত্তর]

কিছু কিছু মূর্খ মানুষ বিশ্বাস করে কনডম ব্যবহার করলে সেক্সের সময় পূর্ন মজা পাওয়া যায় না। এটা কিন্তু ভ্রান্ত ধারণা। কন্ডোম সেক্সের ক্ষেত্রে মজা কমিয়ে দেয় না।

বিকাশ কুমার রায় [প্রতুত্তর]

ধুর বাল। যদি সেক্স করতে কনডোম এত আর্জেন্ট হত তবে বানানোর সময় ভগবান ধোনে পার্মানেন্ট কনডোম লাগিয়ে দিত।

রাজীব মৃধা [প্রতুত্তর]

পোলা পোংটাইলে এইরকমই হবে। যত সব নরকের কীট।

রিংকু [প্রতুত্তর]

সেক্স যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এসব নিয়ে যারা বাজে মন্তব্য করে তারা আসলেই মানসিক ভাবে অশিক্ষিত।

কল্লোল কুমার [প্রতুত্তর]

সমকামীদের মধ্যেই এইডসের প্রবনতা বেশী থাকে। তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়াই ভালো।

খোকন [প্রতুত্তর]

আমি কখনোই কনডোম ছাড়া আমার নিজের বিএফকে নেই না। আমাদের সম্পর্ক ৫ বছরের। সে মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়। কিন্তু আমি রিস্ক নেই না।

রেজোয়ান খান [প্রতুত্তর]

যে যত তর্কই করুক না কেন, কন্ডমের বিকল্প নাই।