blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

লাইফ উইদাউট লাভ - পর্বঃ ০৮

খাটের উপর পাশাপাশি দুজন লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। কোন টা কে বোঝা যাচ্ছে না দুজনের সাইজ একই রকম। মনে হলো খাটের এই পাশের জন মিয়া ভাই । কাছে গিয়ে ডাকলাম মিয়া ভাই, ও মিয়া ভাই। দুজনের কারোই নড়াচড়া নাই। মিয়া ভাইয়ের ঘুম খুব গাঢ়সে মনে হয় সারাদিন ঘুমাতে পারে। বিছানায় সারাক্ষন টিকটিকির মত লেগে থাকে বলে ফুফু তাকে টিকটিকি বলে খেপায়। মা হেসে বলে ভাইয়া হওয়ার পর ফুফু নাকি সারাক্ষন তাকে দোলনায় দোল দিয়ে ঘুম পাড়াত। সেই জন্যই ছেলেটা এত ঘুম কাতুরে।

আমি ভাইজানের গায়ে হাত গিয়ে সামান্য নাড়া দিয়ে আবার ডাকলাম , ও মিয়া ভাই।
ভুল হয়ে গেলো। লেপ থেকে মুখ বের করলো ভাইয়ার ফ্রেন্ড। আমি থতমত খেয়ে গেলাম । কিন্তু ভাইয়ার ফ্রেন্ড মন জুড়ানো একটা হাসি দিয়ে বলল, কি ছোট মিয়া ?

আমাকে কেউ ছোটমিয়া বলে ডাকে না। তবে তার লালচে ঠোঁটের হাসিটি আমার ভালো লাগলো।

‘ উঠেন ভাই। আম্মা খেতে ডাকছেন।

‘ হুম। উঠবো। কয়টা বাজে?

‘ দুইটা বেজে গেছে।

আড়মোড়া ভেঙে , হাই তুলে ভাইয়াকে ডাকলো, এই সজল ওঠ।



মিয়াভাইয়ের নাম তো শাহ জালাল। সজল হলো কবে। তবে ভাইয়া কি শহরে গিয়ে নাম বদলে রেখেছে! ভাইয়া একটু হা হু করে আবার পাশ ফিরে শুলো। মিয়া ভাইকে তুলতে না পেরে সে নিজেই উঠে পড়লো। গোল গলা গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরা । অসম্ভব সুন্দর তার দেহের গঠন। মিয়া ভাইয়ের কাছে জিমনেসিয়ামের গল্প শুনেছিলাম মিয়া ভাই পড়াশুনা বাদে আর সকল কাজে মহা অলস। সে তো জিম করে না। কিন্তু দীপ্ত ভাইয়া করে বলে মনে হচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম , ভাই আপনি কি জিম করেন ?

সে লুঙ্গি পরতে পরতে বললো কেন ?

আমি কিছু না বলে হাসি দিলাম এক খান ।

‘ হুম। মাঝে মাঝে যাই। তোমাদের টয়লেট কোন দিকে যেন । ভুলে গেলাম।

‘ শহরে টয়লেট নাকি ঘরের সাথে থাকে।

‘ হুম। এটাচড থাকে।

আমাদের টয়লেট বাড়ির পেছনে বাগানের ভেতরগ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পায়খানা কিন্তু আমাদের বাড়িতে পাকা পায়খানা আছে। পুকুর থেকে বালতি ভরে পানি এনে রাখলাম টয়লেটের সামনে।

দ্বীপ্ত ভাইয়া গোছল সেরে উঠলেন। অর্ধনগ্ন শরীর দেখে আমি সার্টিফিকেট দিয়ে দিলাম তিনি অনেক সুন্দর একজন মানুষ। এত সুন্দর মানুষ আমি আগে কখনো দেখিনি।

‘ ছোট মিয়া শোন।

‘ বলেন ভাই।

‘ তুমি আমাকে ভাই না বলে ভাইয়া বলে ডাকবেআমার আপন কি চাচাতো মামাতো কোন ভাই বোন নেই। আমি একা। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে আমার একটা ছোট ভাই থাকুক। আমাকে ভাইয়া বলে ডাকুক।

এই সময়ে মিয়া ভাই গামছা কাঁধে পুকুর পাড়ে এসে হাজির

‘ কিরে দ্বীপ্ত , গোছল শেষ ?

‘ হুম। তুই তো ওঠার নাম করিস না। কতক্ষন শুয়ে থাকা যায়। সেই ফুফু কই যিনি বলেন শুয়ে শুয়ে তোর পিঠ তক্তার মত সমান হয়ে গেছে।

‘ ফুফু কে দেখে এলাম রান্নাঘরে। তুই দাঁড়া । আমি একটা ডুব দিয়ে নেই।

ভাইয়া পুকুরের ঘাট থেকে ঝুপ করে লাফিয়ে পড়লেন। তারপর এক ডুবে মাঝ পরতো সাঁতরে গিয়ে ভূস করে ভেসে উঠলেন।

দুপুরে বাড়ির সবাই এক সাথে খেতে বসেছি। সবাই বলতে বাড়ির ছেলে সদস্যরা। আব্বা দীপ্ত ভাইয়ার খবরাখবর নিলেন। মিয়া ভাই আব্বাকে জমের মত ভয় পায়। এখনো সেই ভয় রয়ে গেছে তারযদিও আব্বা আগের মত অত কড়া নেই। হুটহাট রেগে যান না। দ্বীপ্ত ভাইয়ার পুরো নাম সুদীপ্ত রহমান  ঢাকার গুলশানে তাদের বাড়ি আছে। দেশের বাড়ি ময়মনসিং এ । তার বাবা নেই। মা সরকারী চাকুরি করেন।

বিকেলে মিয়া ভাই তার বন্ধুকে নিয়ে গ্রাম ঘুরতে বের হলো। আমি আব্বার সাথে গঞ্জের হাঁটে গেলাম। রাতে বাড়ির ছাদে আড্ডা বসেছে। ভাইয়া কাঠে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিলো। আমরা আগুনকে ঘিরে গোল হয়ে বসলাম। মুরুব্বি বলতে শুধু ফুফু আছে আমাদের সাথে। ছাদে আগুন জ্বালালে ছাদ ফেটে যাবে এই নিয়ে তিনি কিছুক্ষন গজগজ করলেন। আমরা কিন্তু সেটাকে পাত্তা দিলাম না। এভাবে আগুন জ্বালানোকে ক্যাম্পফায়ার বলে। এই প্রথম ক্যাম্পফায়ায়ের স্বাদ পাচ্ছি। হোক না সেটা আমাদের ঘরের ছাদে। তবু তো নতুন কিছু

এরই মধ্যে রহিম বলে উঠলো, সাদা খেরেস্তানেরা এইরাম আগুন জ্বালায়ে নাকি কালো কুত্তা পুড়ায়ে খায়!

সবাই তার কথা শুনে হেসে উঠলো। দ্বীপ্ত ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো , কে বলেছে তোমাকে ?

সে বুঝতে পারলো না তার কথায় কোন ভুল হয়েছে কি না। আমিও বুঝতে পারছি না। কুকুর বললেই পারত। কালো কুকুর বলার কি আছে। মনে ভয় পাচ্ছি। বলদটা না শেষে আবার আমার নাম বলে দিয়ে প্রেস্টিজ পাংচার করে দেয় রহিম আর আমি এক ঘরেই থাকি। পড়ার ফাঁকে মাঝে মাঝে আমি তার কাছে দেশ বিদেশের নানান গল্প বলে জ্ঞান জাহির করি। অনেক বিষয় আছে যা আমার নিজের কাছেই পরিষ্কার না। তাতে দুই চার লাইন নিজের মত বসিয়ে দিয়ে বিষয়টাকে সরল করে নেইএখানে ভুল হলে তো আর রসায়নের স্যার কলমের খোঁচা মেরে নাম্বার কেটে নেবেন না। কুকুর পুড়িয়ে খাওয়ার গল্প আমি গত সপ্তাহে করেছিলাম।

-----------------------------------------------------------------