blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

লাইফ উইদাউট লাভ - পর্বঃ ১০

মাথার ভেতরে অজানা অচেনা এক অনুভূতি সুড়সূড়ি দিয়ে যাচ্ছে সারাক্ষণদীপ্ত ভাইয়াকে আমার অন্যরকম ভালো লাগছে। যদি প্রশ্ন করা হয়, কি রকম ভালো? বিলক্ষণ আমি উত্তর দিতে পারবো না। আমি নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তবে তার কথা ভাবতে ভালো লাগছে। এটুকুই শুধু বুঝতে পারছি দুপুরে খাওয়ার পর থেকে তার কথা ভাবছি। ভাবছি তো ভাবছি। ভাবনার কোন শুরু নেই, শেষও নেইনিজের মত করে কাহিনী সাজাচ্ছি। সেখানে মূল চরিত্রে থাকছে সে আর আমি।

আজ আমাদের বাসায় পিঠা বানানো হবে। অন্যান্য সময় পিঠা বানানোর খবর শুনলে আমি আনন্দ বোধ করতাম। বিড়ালের মত চাল কোটা থেকে শুরু করে পিঠা বানানো পর্যন্ত আমি আম্মার পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করতাম। ফুফু বলতেন, নে একমুঠ চালের গুড়া খেয়ে নে। আজ আমি কোন কিছুতেই উৎসাহ পাচ্ছি নাপড়ার টেবিলে বসে আছি।

কি একটা প্রয়োজনে একবার বাইরে এলাম। ঢেঁকিঘরে মা, ফুফু চাল কুটছেকাজের মেয়েটা একই ছন্দে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে যাচ্ছেফুফু মাঝে মাঝে হাত দিয়ে নোটেরভেতরের চাল এলেদিচ্ছে। মা তার পাশে বসে টুকনি (ছাঁকনি) দিয়ে গুড়ো টুকে (ছেঁকে) আলাদা করে ধামায় রাখছেনমা বললেন, “যা তো ছোট খোকা, দোকান থেকে দুই সের সয়াবিন তেল নিয়ে আয়।

আমার একদম যেতে ইচ্ছে করছে না। রহিম গরু গুলোকে গোঁয়ালে তুলে ফিরছে। আমি রহিমকে পাঠিয়ে দিতে বললাম। রহিমের কোন কাজে বিরক্তি নেই, আলস্য নেই। সে বোতল হাতে বেরিয়ে গেলো।

এশার আজান হচ্ছে মসজিদে। মিয়াভাই এবং তার বন্ধু গ্রাম ঘোরা শেষ করে ফিরে এলেন। অন্ধকারে পুকুরে পা ধুতে গিয়ে তার বন্ধু পা ফসকে পানিতে পড়ে গেছে। আব্বা বললেন, বাতি নিয়ে গেলে না কেন? ব্যাথা পাও নি তো?

দ্বীপ্ত ভাইয়া লাজুক হেসে বলে, আছাড় খাইনি তো আংকেল। পানিতে পড়ে ভিজে গেছি এই যা।

আব্বা বললেন, যাও ভিজে কাপড় বদলে ফেলো। ঠান্ডা লেগে যাবে।  

আম্মার ডাকে রান্নাঘরে এলামরান্নাঘরের বারান্দায় মর্জিনা মাদুর বিছিয়ে রেখেছে। আমরা সবাই লাইন দিয়ে বসে পড়লাম রান্নাঘরের মেঝে এবং বারান্দা পাকা করা। উপরে গোলপাতার ছাউনি। আব্বা গোলপাতার ছাউনি বদলে টিনের চাল দিতে চান। কিন্তু আম্মা রাজি হন না। আম্মা বলেন টিনের চালের রান্নাঘর অনেক বেশী গরম হয়ে যায়।


আজ তিন ধরণের পিঠা বানানো হচ্ছে। কুলি পিঠা, পান পিঠা, আর রসে ভেজানোর জন্য চিতই পিঠা। আগামীকাল বানানো হবে পাটিসাপটা। পিঠা বানানোর দিন প্রথম তৈরী করা পিঠাটা আমার চাইই চাই। আমাকে না দেওয়া হলে মুখ ভার করে বসে থাকতাম। মেজাজ দেখিয়ে বলতাম, “খাবো না আমি পিঠা”। অবশ্য সেই রাগ বেশীক্ষণ স্থায়ী হত না। আজ আমি প্রথম পিঠা চাইলাম না। চুপ করে বসে আছিমা তার অভ্যেষমত প্রথম পিঠাটা আমাকে দিলেন। দ্বিতীয়টা দিলেন রহিমকে।

আব্বা বসেছেন বড় ঘরের দাওয়ায়। রহিম আব্বাকে এক বাটি কুলি পিঠা দিয়ে এলোভাইয়া আর দীপ্ত ভাইয়া পিঠা খাচ্ছেন। পিঠা খাওয়ায় দীপ্ত ভাইয়ার চোখে মুখে আনন্দের ছায়া ফুটে উঠছে। বেশ তৃপ্তি নিয়েই তিনি পিঠা খাচ্ছেন। মিয়াভাই পিঠা খেতে খেতেই জানালো যে, আমাদের উত্তরের একটা জমি নিয়ে মামলা চলছে কয়েক বছর। মিয়াভাইকে সেই কারনে আগামীকাল খুলনা টাউনে যেতে হবে। দীপ্ত ভাইয়া একটু হতাশ হলো। সেও মিয়াভাইয়ের সাথে যাবে বললমিয়াভাই তাকে নিরস্ত করলো। ওখানে গিয়ে সারাদিন উকিল সাথে কথা বলতে হবে, আদালতের বারান্দায় দিন কেটে যাবে। বেড়াতে এসে কোট কাচারি ঘুরে তার বোরিং লাগবে। দিন তিনেকের তো মামলা। এখানেই থাকুক সে। শুভ্র আছে। সেই সংঘ দেবে।

সকালে উঠে রসে ভেজা পিঠা খেয়েই মিয়াভাই আব্বার সাথে যাত্রা শুরু করলো। সাতটার লঞ্চে তারা খুলনা যাবে। রাতের লঞ্চেও যাওয়া যেতকিন্ত আব্বার একটু ঠান্ডার ধাঁত হয়েছে। তাই রাতে গেলেন না। কয়েকদিন স্কুলে যাওয়া হয় না। আমিও স্কুলের পথ ধরলাম।

দীপ্ত ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন, স্কুলে থেকে কখন ফিরবে?

বিকেলে আমার সাথে বেড়াতে বের হবেনআমার তখনি মনে হচ্ছিলো, আজ আর ইস্কুল যাওয়ার দরকার নেই। চলেন এখনি বেড়াতে যাই। অতিকষ্টে লোভ সামলালাম। ক্লাসে কোন মনযোগ দিতে পারলাম না। প্রশান্ত স্যার তো বলেই বসলেন, “ক্লাসে বসে শুভ্র কোন আনারকলির কথা ভাবছো? পড়ায় মনযোগ নেই কেন!  পড়ায় ধ্যান দাও”বিকেলে ৪ টায় স্কুল ছুটি হয়। আমি ঘড়ির কাটা দুইটা ছুতেই স্কুল থেকে শরীর ভালো লাগছেনা বলে শর্ট লিভ নিয়ে চলে এলাম। এসে দেখি দীপ্ত ভাইয়া দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমি তার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় রইলাম। মাঝে মাঝে তার ঘরে গিয়ে উঁকি মেরে দেখে আসছি তার ঘুম ভাঙলো কিনা।


মিয়াভাই আমাকে বলে গেছেন, সে আসা না পর্যন্ত আমি যেন দীপ্ত ভাইয়ার সাথে এই ঘরে থাকি। আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নাই। সেজন্য শহরের মেহমানকে একা থাকতে দেয়া হয় না আমাদের অভ্যেষ হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন যারা আসে তারা খুব বিপাকে পড়ে যায়আমি দীপ্ত ভাইয়া যে ঘরে থাকেন সেখানে গেলাম। দরজা হালকা ভেজানো। শব্দ না হয় এমন ভাবে দরজা খুললাম। ভাইয়া ঘুমিয়ে আছেন। আমি আস্তে করে খাঁটের কোনায় বসলাম। প্রতিটি ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে নিষ্পাপ লাগে। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ঘরের পাশের নিমগাছে কুহু কুহু স্বরে একটা কোকিল ডাকছে। শীতকালে কোকিল পাখি ডাকে কেন! 

-----------------------------------------------------------------



2 টি মন্তব্য:

Ntx Hadi [প্রতুত্তর]

plz golpo ta somopremi akare sajaien.jodi somokami vab chole ase tahole sobar kase valo lagle o amar valo lagbe na.tasara somopremi golpo gola sobai like kore.asa kori request ta rakhben...

Onjon Roy [প্রতুত্তর]

Vhalo laglo kharap to chilo na... hmm teenage love....mon khali udhas hoye jai :p

Teenage love tate sudhu abeg e thake....are amar mone hoi true love ta teenage ar somoy e dora dei...but abeg ar boshe setake dore rakha jai na