blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

লাইফ উইদাউট লাভ - পর্বঃ ১৩

বাড়ির নিচের ব্যাড়ের নিচ থেকে শুরু হইছে বিল। পাথরখালি খাল পেরিয়ে সেই বিল শেষ হইছে ওয়াপদা রাস্তার গায়ে গিয়ে। সিলেট এলাকার বিল এবং খুলনা’সাতক্ষীরা এলাকার বিলের মাঝে বিস্তর পার্থক্য আছে। আমাদের এলাকায় ফসলের মাঠকে বলা হয় বিল। ব্যাড়ের নিচের বিলে নাড়া গাদা করে রাখা হয়েছে। আটি বেঁধে রাখা নাড়ার উপর বসে আছি আমিআমার পাশের আটির উপর বসে আছে দ্বীপ্ত ভাইয়া। আমাদের মাথার উপর বিকেলের মিঠে রোদ। দ্বীপ্ত ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকিয়ে আছি দক্ষিণের বিলের দিকে। একদল মহিলা কাঁখে কলস নিয়ে সরকার পুকুরে পানি আনতে যাচ্ছে। এই বিল ধরে হেঁটে গেলে পাথর খালির খাল পড়বে। সেই খাল পেরিয়ে কিলোমিটার খানের পরে ওয়াপদার রাস্তা। তার পরে বড় গাঙ। সেই গাঙের অন্য পারে সুন্দরবন। আমাদের ভাষায় বাঁদা। দ্বীপ্ত ভাইয়া আমার নাম ধরে ডাকলেন,

‘শুভ্র’

‘ জ্বি, বলেন’

‘আমার দিকে তাকাও’

‘ তাকালাম। এবার বলেন’

‘ কি হয়েছে তোমার?

‘ কি হবে? কিছু হয় নাই। আপনার হঠাৎ কি হলো? আপনি তুই থেকে তুমিতে উঠে গেছেন কেন?

‘ তুমিও তুমি থেকে আপনি তে উঠে গেছো’

‘ তুমি বললেই কি আর আপনি বললেই বা কি!’

‘ সত্যি করে বলবে কি হয়েছে তোমার?

‘ বলছি তো কিছুই হয় নাইআপনি জোর করে হওয়াবেন নাকি

‘ আমি গত রাতের ঘটনার তোমার কাছে জন্য মাফ চাইছি’

‘ মাফ চাচ্ছেন কেন?
‘ দেখ, গত সন্ধ্যায় যা ঘটেছে কেন ঘটেছে, কিভাবে ঘটেছে আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আমি নিজে থেকে এসব চাইনি...’

‘ তাহলে করলেন কেন?

‘ সেজন্যই মাফ চাচ্ছি’

‘ ধর্ষণের জন্য কেউ ক্ষমা চায় না। আর আপনি চুমু খাওয়ার জন্য মাফ চাচ্ছেন! আমি তো এটাতে কোন অপরাধ দেখছি না’

‘ তোমার বয়স অল্প। তুমি কি বুঝবে সব কিছু?’

‘ বুঝিয়ে বললেই বুঝবো। মাথা খারাপ না আমার। প্রতিবার ক্লাসে ফার্স্ট হই। এবারও হয়েছি’।

‘ শুভ্র, এটাকে সমকামিতা বলে। এটা ধর্মে নিষিদ্ধ। ইসলামে নিষিদ্ধ, পৃথিবীর সব ধর্মে নিষিদ্ধ’

‘ জানি’

‘ জানো?

‘ হ্যাঁ’

‘ জানার পরেও তোমার ভেতর পাপবোধ কাজ করছে না?’

‘ না। করছে না’।

‘ কেন করছে না?

‘ আমি অনেক ভেবেছি। এর এক মাত্র কারণ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি দ্বীপ্ত ভাইয়া’

‘ এত দ্রুত কিভাবে আমাকে ভালোবেসে ফেললে তুমি?

‘ আমি জানিনা। আর ভালোবাসতে সময় লাগে না। পরস্পরকে বুঝতে সময় লাগে’।

‘ এটাকে ভালোবাসা বলে না শুভ্র। এটা মোহ। মোহ কেটে গেলে তখন তোমার মনে হবে আমি পৃথিবীর সব থেকে খারাপ মানুষ। যে তোমাকে ভূল পথে, পাপের পথে টেনে এনেছে’

‘ মনে হবে না। আমি কখনো তোমাকে দোষারোপ করবো না। কথা দিচ্ছি’।

‘এটা তো কথার কথা। ভবিষ্যতে কি হবে তা তুমি এখনই বলতে পারো না। তখন তোমার এই মোহ কাজ করবে না’।

‘ আপনি কি পাপবোধে ভুগছেন?

‘ হ্যাঁ। ভুগছি’।

‘ জাহান্নামের আগুনে পোড়ার ভয় পাচ্ছেন? হাবিয়া দোযখে আপনাকে কৈ মাছ ভাজার মত করে ভাজা হবে সেই ভয়?’

‘ সমকামীদের জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে এই কথা আল কোরআনের কোথাও লেখা নেই। কোরআনে বলা হয়েছে তাদের প্রতি লানত বর্ষিত হোক’

‘ তাহলে কিসের পাপবোধ?



‘ তুমি আমার বন্ধুর ছোট ভাই। প্রিয় বন্ধুর ছোট ভাই। তোমাকে আমি কখনো কোন ভূল পথে টেনে নিয়ে যেতে পারিনা। আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে পারি না’।

‘ আপনি কোথাও আমাকে টেনে নিচ্ছেন না। আমি নিজেই নামতে চাচ্ছি। আর আমি আপনার বন্ধুর ছোট ভাই। আপন ভাই না। প্রেম করার ইচ্ছে থাকলে করতে পারেন। আমাকে পছন্দ না হলে ভিন্ন কথা। আমি জোর করবো না’।

‘ আচ্ছা বাদ দাও। তুমি কি কখনো প্রেম করেছ আগে?

‘ না।  করি নাই। সুযোগ পাই নাই’।

‘ মেয়েদের প্রতি আকর্ষন বোধ করো?

‘ কিরকম আকর্ষন?

‘ এই ধরো, সেক্সুয়াল ফিলিংস!’

‘ হুম। করি’।

‘ ছেলেদের প্রতি?

‘ আগে করতাম না। এখন করি। আপনাকে দেখার পর থেকে’

‘ কিন্তু কেন?

‘ আমি জানি না। আমার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর নেই’।

‘ তুমি আমাকে সমকামিতার জগতে টেনে নামাতে চাও?

‘ না। একতরফা কিছুই হয় না। গতরাতে আমরা দুজনেই চুমু খেয়েছি। কেউ জোর করে নি। কেউ বাঁধা দেয়নি। আমাদের দুজনের তাতে সায় ছিলো’

‘ তুমি তো বেশ কথা বলতে পারো। আমি তোমার সাথে কথায় পারবো না’।

‘ কথা বলতে পারবো না কেন! বোবা ছাড়া সবাই কথা বলতে পারে’

‘ আমি গুছিয়ে কথা বলার কথা বলছি’

‘ কথা কিভাবে গোছায়?

‘ বাপস! আমি তোমার সাথে কথায় পারবো না। যাও তোমার জিত’

‘ হার জিত দিয়ে আমি কি করবো’

‘ তুমি কি আমার উপর ক্ষেপে আছো?

‘ না’

‘ রেগে আছো?

‘ না’

‘ কষ্ট পেয়েছ?

‘ না’

‘ কাল সারা রাত ঘুমাও নি কেন?

‘ ঘুম আসে নি তাই’

‘কাঁদছিলে কেন?

‘কাঁদবো কেন! কে বললো?

‘ তোমার বাহন রহিম বলেছে’

‘ মিথ্যা বলার কি দরকার। তুমিও তাহলে সারারাত জেগে ছিলে’

‘ হুম। জেগে ছিলাম’।

‘ এরকমটি কেন করলে?

‘ আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না’

‘ এখন বুঝেছ?

‘ জানিনা। শুভ্র, তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসো?

‘আমাকে নয়, নিজেকেই জিজ্ঞেস করো। উত্তর পাবে। এবার বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা?’

দ্বীপ্ত ভাইয়া উত্তর দেয়ার আগেই ব্যাড় থেকে ফুফুর গলা ভেসে এলো, ‘ছোট খোকা বাড়ি আয় তো। মজিদ সরদারের বাড়ি যাতি হবে। ধাক্কুরি (জলদি) আয়’


আমার মন এখন ভালো হয়ে গেছে দ্বীপ্ত ভাইয়া ভালো না বাসুক, আমাকে ঘৃণা করে না। আমি ছুটে গেলাম। একটি বারের জন্য পেছন ফিরে তাকালাম না। কিন্তু আমি জানি, একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক চোখে। যে চোখে আমি ভালোবাসা দেখেছি নির্ভেজাল ভালোবাসা।  

-----------------------------------------------------------------