blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

লাইফ উইদাউট লাভ - পর্বঃ ২২

৯ ফাল্গুন, ২১ শে ফেব্রুয়ারী। মহা ভাষা শহীদ দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবস বাঙালীর আত্মত্যাগের , এই দিবস বাঙালীর আত্মত্যাগের্। এই একটি দিনে আমরা হিন্দু , মুসলমান, খ্রিস্টান হয়ে নয়, বাঙালী হয়ে পৃথিবীর বুকে ইতিহাস তুলে ধরিখালি পায়ে বসন্তে ফোঁটা সজীব পুষ্পমাল্য হাতে, প্রভাতফেরীর সারিতে  প্রভাত সংগীতে সব বাঙালী ছূটে যাই শহীদ মিনারে। আমাদের সেই মিছিলে যোগ দেয় পৃথিবীর নানান ভাষাভাষী মানুষ।

একুশে ফেব্রুয়ারীর প্রভাত ফেরীর অনুষ্ঠান ছিলো স্কুলে। সকালে চলে গেলাম এক গোছা ফুল নিয়েপথে দেখা হলো ওপাড়ার মেজ দাদির সাথে। পাড়া সম্পর্কীয় এই দাদিকে আমি বরাবরিই অপছন্দ করি। কথা লাগানো , কুটনামি ইত্যাদিতে তার জুড়ি মেলা ভার্। সকালে দুটো খেয়ে একটা পান মুখে পুরে সে পাড়া বেড়াতে বের হয়। ফেরে দুপুরের আগে। বলতে গেলে সবার হাঁড়ির খবর তার জানা। তাই সেভাবে কেউ ঘাঁটায় না । আমাকে দেখে বলে, কই যাও ছোড খুকা। শহীদ পূজো কত্তি ? মোচলমানের ছাবাল হয়ে তুমরা সব ক্যান যে হিন্দু গো লাহান পুজো করো। ক্লাসের বইতে এইসব ল্যাহা থাহেনি?

আমি কথা বাড়াই না। গতবছর আমি এই বিশিষ্ট তর্ক বাদীকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছি। তার ব্যাপারটা এরকম, আমি ঘুমিয়ে আছি, কেমন পারো আমাকে জাগাও দেখি।

রাস্তার পাশে পলাশ গাছ গুলোয় যেন আজ আগুন লেগেছে। সকালের রবি কিরণে লাল বর্নের ফুলগুলো জ্বলজ্বল করছে। স্কুলে এসে দেখি বিলাস, সৌমিত্র, সাজ্জাদ, আরমান, কিশোর, অনিক, রুদ্র , সুস্মিতা, ছোয়া , ফারজানা সবাই এসে হাজির খালি পায়ে স্কুলের পোষাকে । সবার হাতে এক গোছা ফুল। ফারজানার হাতে কয়েকটা গোলাপ। এক গোলাপের সাইজ এত বড় যে আমরা প্রায় সবাই লক্ষ্য করেছি। কিশোর গোলাপ টা হাত করার জন্য ফারজানাকে পটানোর চেষ্টা করলো। ফারজানা কিছুতেই রাজি হয় না। শহীদদের উদ্দ্যেশ্যেই সে বাগানের সব থেকে বড় গোলাপটা আজ নিজ হাতে ছিড়েছে। ছিড়তে গিয়ে বামহাতের অনামিকা ছড়ে গেছে গোলাপ কাটায়। কিশোর মনোক্ষুন্ন হয়ে গজগজ করে। তোর  আঙুলে আজ মরিচ বাটা লাগুক। তোর গোলাপ ঝাড় উইপোকায় কাটুক। ফারজানা বদদোয়া শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে যায়। সে হাতের ফুলের গোছা ছুড়ে মারে কিশোরের মুখের  উপর্। কিশোর বড় গোলাপ টা কুড়িয়ে নিয়ে তাতে নায়ক রাজ্জাকের মত ভাব নিয়ে চুমু খায়। আমরা সবাই হেসে উঠি। ফারজানা গটগট করে চলে গেলো। সাজ্জাদ বলে, ওই কই যাস? সে উত্তর দেয় না। ছোঁয়ার সাথে ফারজানার সম্পর্ক ভালো না। তারা দুজন ছয়মাস কথা বলে তো বাকি ছয়মাস বলে না। ফারজানা ঠোঁট বাকিয়ে বলে, দ্যাখ, টাইগারের স্যারের কাছে নালিশ করতে গেছে।



কিছু পরে ঘন্টার টুংটুংটুং শোনা গেলো। অফিস ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পিয়ন চিৎকার করে সবাইকে শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হতে বললো। স্কুলের গেট থেকে ঢুকে বাদিকে শহীদ মিনার্। শহীদ মিনারের পেছনে বড় দুটো শিমুল তুলোর গাছ। শিমুলের ফুল পাতায় শহীদ মিনার জঞ্জাল হয়ে থাকে। আজ সব সাফ সুতরো করে রাখা হয়েছে। হেডস্যার সব শিক্ষকদের নিয়ে প্রথমে পুষ্পার্ঘ অর্পন করলেন। বাংলা স্যারের তত্বাবধানে বিভিন্ন ক্লাসের মেয়েরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়ে গাইছে ফেব্রুয়ারীর থিম সং

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভূলিতে পারি...


একে একে আমরা সবাই ফুল দিলাম। কিশোর ফারজানাকে কোথা থেকে ধরে এনেছে। ফারজানার হাতে ফুলের গুচ্ছে শোভা বাড়িয়েছে সেই গোলাপ। ফুল দিয়ে বাইরে এসে দেখি গোলাপটি ফারজানা কিশোরের হাতে গুঁজে দিলো।আমারও ইচ্ছে করছে আমার জান পাখিটার হাতে একটা টকটকে লাল গোলাপ ধরিয়ে দিতে। আমার জান পাখিটা এখন কোথায় ? শাহবাগে নাকি শহীদ মিনারের প্রভাত ফেরীর মিছিলে! নাকি বন্ধের দিন বলে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছে করছে ঢাকা যেতে।

-----------------------------------------------------------------