blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

নিষিদ্ধ গল্প লেখা


নিষিদ্ধ গল্প লেখা যে চাট্টিখানি কথা নয় সে আমি কলেজ জীবনেই টের পেয়েছি। কিভাবে সে গুল্প বলার আগে বলি কিভাবে আমার লেখালেখি শুরু হলো। আব্বুর ছাত্রজীবনের গোটা দশেক বই লুকিয়ে পড়ার মাঝ থেকেই আমার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। ক্লাশ টেনে পড়ার সময় কবি হওয়ার সখ জানেবাক্যের অন্তমিল ঠিক রেখে কবিতা লিখতাম। যদিও সেগুলো গুনে মানে কোন দিকেই কবিতা হয়ে উঠতো না। তবুও সেই অখাদ্য কবিতাগুলো আমি ধরে বেঁধে অনেককেই শোনাতাম। প্রশংসা পেতাম না কারো কাছে। ভাবতাম সবাই আমার প্রতিভাকে হিংসা করছে। কয়েকদিন পরেই লেখালেখির উৎসাহে ভাঁটা পড়লোএক উঠতি কবি মন কৈশোরেই প্রাণ হারালো।

কলেজে পড়তে খুলনা আসি। পাবলিক কলেজে পড়ার সময়ে চটি সাহিত্যের সাথে আমার পরিচয় হওয়ার কথা আগে এক নিবন্ধে বলেছি। তখনকার কথাই বলতে চাই। ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময়ে বয়রায় বিভাগীয় লাইব্রেরী আমি আবিষ্কার করে ফেললাম হঠাৎ করে। এর আগে লাইব্রেরী জিনিসটার সাথে আমার পরিচয় ছিলো না। লাইব্রেরী মানে ভাবতাম বইয়ের দোকান। কারণ আমাদের এলাকায় অনেক গুলো বইয়ের দোকানের নামের শেষে লাইব্রেরী ছিলো। বিভাগীয় লাইব্রেরীতে থরে থরে সাজানো বই। হাজার হাজার বই। বই পড়ার ঝোঁক আগেও ছিলো। লাজুক টাইপের থাকায় সহসা কারো সাথে মিশতে পারতাম না। বন্ধু কেউ নেই বললেই চলে। মেসের সবাই ছাত্র পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সারাদিন। অচেনা শহরে একলা আমি। প্রায়ই লাইব্রেরীতে সময় কাটাতে লাগলাম। দুই বছরে হাজার খানের উপন্যাস পড়া হয়ে গেছিলো আমার।

থাকতাম দৌলতপুরে। সবুজ সংঘের মাঠের ওদিকটাতে। এমনি সময়ে আমার মাঝে লেখক প্রতিভা জেগে উঠলো। লেখালেখি করতে মন চাইতো। কি লিখি কি লিখি! লেখার কিছুই পেতাম না। জানালার বাইরে তাকালে অনেক গুলো নারিকেল গাছের মাথা, রোদ ছাঁয়া, মেঘ দেখতে পেতাম। এগুলোর বর্ণনা লেখা শুরু করলাম। আস্তে আস্তে আমি কোন বর্ণনাকে লেখার অক্ষরে ফুঁটিয়ে তুলতে সমর্থ হতে শুরু করলাম। সবাই একটু আধটু প্রশংসা করতে শুরু করলো। কেউ কেউ বলতো আমার বর্ণনা পড়ে তারা নাকি বর্ণনাটা চোখের সামনে দেখতে পায়। আমি দ্বিগুন উৎসাহে লেখালেখি শুরু করলাম। প্রতিদিনই লিখতাম। স্কুল লাইফে আমার হাতের লেখা খুবই খারাপ ছিলো। বাংলার স্যার বলতো তেলাপোকার পাঁয়ে কালি মেখে ছেড়েদিলে নাকি এরকম লেখা বের হয়। ক্লাশের ফার্স্ট বয় হয়েও এই অপবাদ আমি ঘোঁচাতে পারিনি। কিন্তু গদ্য লেখা শুরু করার পর থেকে আমার হাতের লেখা ভালো হতে শুরু করে।

একদিন মনে হলো একটা চটি কাহিনি লিখে ফেলি। যেই ভাবা সেই কাজ। রুমের দরজা আঁটকে লিখতে বসে গেলাম চটি কাহিনি। তখন পর্যন্ত আমি চটি কাহিনি বলতে নারী পুরুষের যৌন দৃশ্যের বর্ণনাকেই জানি। গে চটি বলে যে কিছু আছে তার কথা জানাই ছিলো না। তো কাহিনীর লেখা শুরু করলাম। তিন লাইন সবে লিখেছি। মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। হাত কলম ছেড়ে অন্য কিছু ধরে বসেছে। গল্পের প্লট, গল্প বর্ণনা খুব দ্রুত মাথার ভিতরে হতে লাগলো। নায়ক নায়িকারা যার যার রোল ঠিকই প্লে করলো। শুক্রাণু বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হয়ে গেলো মধুরেণ সমাপয়েৎ। খাতায় কিন্তু সেই তিন লাইনই লেখা থাকলো মাত্র। ক্লান্ত শরীরে কি আর গরম গল্প আসে বলো!

এর পরে আমি আরো কয়েকবার চটি গল্প লেখার চেষ্টা করেছি। তবে কামের কাছে হার মেনেছি প্রতিবার। আমার আর চটিলেখক হওয়া হয়ে উঠলো না। আমার নিজস্ব ধারণা হচ্ছে চটি সাহিত্য লিখতে গেলে ভাষা জ্ঞান কোন রকম হলেই হবে কিন্তু লেখকের নিজের নার্ভের উপর কড়া কন্ট্রোল থাকতে হবে। গে চটির সাথে আমার পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে। খুব সম্ভবত সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময়। এই সময়ে আমি মোবাইল কিনি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করা শিখি। তখন বাংলা গে চটি পাওয়া যেতো না। ফোনেরোটিকা নামের একটা সাইটে ইংলিশ চটি পাওয়া যেতো। ঐ সাইটের সব গুলো গল্প আমি পড়ে ফেললাম। এগুলোই আমাকে বেশী টানতো। কেন টানতো সে প্রশ্নের উত্তর বলাই বাহুল্য।

নিজের ছবি টবি দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করার শিক্ষা আমার হয় থার্ড ইয়ারে পড়ার সময়ে। এক সাইকোর পাল্লায় পড়ে। তারপর আমি বুঝলাম যে গে দের কে কখনো রিয়েল আইডিতে নিতে নেই। খুললাম ফেক আইডি। হয়ে গেলাম অনু পম। নামের মধ্যাংশ ভাঙার চল আমার আগে আমি আর কারো কাছে দেখিনি। নিজের ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে নিজেই মুগ্ধ হলাম। টুকটাক লেখা শুরু করলাম। সাহিত্য প্রতিভা বিকশিত হতে লাগলো। ২০১০-১১ সালের দিকে আমি শিখে গেলাম কিভাবে খারাপ শব্দ ব্যবহার না করে ভাবকে প্রকাশ করা যায়। এই সময়ে কেউ একজন প্রায়ই আমাকে ভদ্র চটিলেখক বলে অভিহিত করা শুরু করলো। তার নাম ঠিক মনে নেই। কিন্তু তার উপমাটা আমার মনে আছে। তখনকার সময়ে আমি সেক্স সিন বর্ণনা না করলে তার আগের দৃশ্য পর্যন্ত দক্ষতার সাথে বর্ণনা করতে পারতাম।

২০১৩ সালে অনু আড্ডা লিখে বেশ হাত পাকাই। ২০১৪ সালে লিখি লাইফ উইদাউট লাভ। নিজের নাম ব্যবহার করে লিখতাম বলে অনেকে ভাবতো এটা আমার নিজের জীবনের গল্প। আসলে এটা মোটেও আমার নিজের জীবনের গল্প নয়। আমি কখনোই গ্রামে বড় হয়নি এবং আমার জীবনে এরকম উথাল পাথাল প্রেম আসে নি। তবে পাঠকের আগ্রহ যাতে না কমে সেজন্য কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি তাদেরকে ক্লিয়ার করতাম না যে এটা আসলে আমার নিজের জীবনের গল্প নয়। এই সময়ে আমি বেশ কিছু গল্প লিখেছি। যদিও আমার গল্প গে পাঠকেরা খুব একটা খায় না। কারণ আমার গল্পে পুতু পুতু প্রেমের বড়ই অভাব থাকে। অথচ গে পাঠকেরা এই জিনিস খুবই লাইক করে। বাস্তবতা যেন তাদের বড়ই অপছন্দ। আজকাল অনেক গে লেখক গল্প লিখছেন। দুয়েকজন তো ক্লাসিকাল মানের গল্প লেখেন। যেমন একলা পথিক, আনন্দ ধারা। তবে অধিকাংশ লেখক অনেক স্বপ্ন মাখা গল্প লেখেন। তাদের গল্পের নায়কেরা প্রেমের জোয়ারে ভেঁসে যায়। তারা স্বপ্ন দেখায় পাঠককে। কিন্তু গে জীবনে এটা কোন বাস্তবতা নয়। এটা চরম মিথ্যা। এখানে ভালোবাসা মানেই শারীরিক ক্ষুধা। নগদে পাওয়ার লালসা।


২০১৫ সাল আমি নব উদ্যমে লেখালেখি শুরু করি। সমকামী সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা, ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করি যা এই পৃথিবীর মানুষগুলো বার বার ভূলে যেতে চেষ্টা করেছে। ট্রয় সিনেমায় আকিলিস এবং পেট্রোক্লসকে কাজিন হিসেবে দেখানো হয়েছে অথচ তারা প্রেমিক ছিলো এই কথা ভূলেও উচ্চারণ করেনি কোথাও। সমকামিরাও তাদের ইতিহাস জানতে চায় না। ভূলে থাকতে চায়, বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত একাকী বাস করতে চায়। যেন লুতের কওম এবং তার মাঝে আর কোন সমকামিতার ইতিহাস ছিলো না। সাধারণের কথা বাদ দিলাম যারা সমকামীদের নিয়ে কাজ করে তারাও ইতিহাসের দিকে চোখ বুলাতে চায় না। তারা শুধু বর্তমানকেই চায়। বর্তমানকে বদলে দিতে চাওয়ার প্রচেষ্টা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। পৃথিবীতে সমধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সব মানুষ তার নিজের পছন্দ মত ভালোবাসার মানুষের সাথে জীবন অতিবাহিত করার অধিকার অর্জন করুক।

-----------------------------------------------------------------