blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

আকিলিস এবং প্যাট্রোক্লস

আজ প্রাচীন বিশ্বের ভালোবাসার আরেকটি গল্প শোনাতে চাই। গ্রীকদের গল্প। আমি নিজেও এই ব্যাপারে পড়াশোনা করার আগে বিশ্বাস করতাম প্রাচীন পৃথিবীতে সমকামী ভালোবাসা শুধু গ্রীকদের মাঝে ছিলো। কিন্তু আস্তে আস্তে জানার পরিধি বেড়েছে। গত কয়েকদিনে রোমানদের বেশ কিছু ইতিহাস তোমাদের শুনিয়েছে। সব যে ভালোবাসার তা কিন্তু নয়। গ্রীকদের ক্ষেত্রে বর্ণনাগুলোর একটা ব্যাপার হচ্ছে এরা সব গ্রীকদের বীরদের চরিত্রে দেবত্ব আরোপ করে। সকল বীরদের পিতা মাতা শেষ পর্যন্ত দেবতারা হন। আকিলিস এবং প্যাট্রোক্লসের ভালোবাসা জগৎবিখ্যাত। ট্রয় নামের চলচ্চিত্রে এই চরিত্র দুটি আছে। এই দুজনের মধ্যে কে প্রেমিক আর প্রেমিকা তা নিয়ে গ্রীকদের মাঝে অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু তারা সঠিক কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে নাই। অনেকে ধারণা করেন প্যাট্রোক্লস ছিলেন প্রেমিক কারণ তিনি বয়সে বড় এবং বিজ্ঞ ছিলেন অন্য দিকে আকিলিস ছিলেন বয়সে নবীন এবং লাস্যময় যুবক। বলা হয় বীরদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সব থেকে সুদর্শন।

আকিলিস এবং প্যাট্রোক্লস তরুন বয়সে একে অন্যের প্রেমে পড়েন। তারা একত্রে বেড়ে উঠেছেন। জ্ঞানী পন্ডিত কাইরনের কাছে অধ্যায়ন করেছেন এবং একই সাথে ট্রোজান যুদ্ধে যান। তাদের সম্পর্ক কি ভালোবাসার ছিলো নাকি যৌন সম্পর্ক ছিলো? অধিকাংশ সম্রান্ত গ্রীকদের মত তারা পায়ুকাম থেকে বিরত ছিলেন। আকিলিসের বক্তব্য অনুসারে তারা দুজনের উরুর মাঝে ভালোবাসার খেলা খেলেছিলো। আমি কি বোঝাতে চেয়েছি নিশ্চয় বুঝতে পেরছেন। গ্রীকরা বিছানায় তাদের শক্তি সম্পর্কে অবগত না হলেও তারা কিন্তু তাদের বন্ধুত্বের শক্তি ঠিকই দেখতে পেয়েছে।

সুন্দরী হেলেনকে প্যারিস নিয়ে যাওয়ার পরে ট্রোজান যুদ্ধের সুত্রপাত হয়। সমগ্র গ্রীস ক্ষেপে উঠ। তারা আকিলিসের নেতৃত্ত্বে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ট্রয় নগরী দখলের জন্য নয় বছর ধরে যুদ্ধ চলে। গ্রীক সেনাপতি আগামেনন যখন সুন্দরী ব্রাইসিসকে ছিনিয়ে নেয় তার আকিলিসের কাছ থেকে তখন সে নিজেকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেই। সাহসী আকিলিস যুদ্ধ ক্ষেত্রে না গিয়ে নিজের তাবুতে বসে থাকেন। ওদিকে গ্রীসের বীরেরা ট্রোজান সেনাপতি হেক্টরের নেতৃত্ত্বে আক্রমনে একের পর এক নিঃশেষিত হতে লাগলো। আকিলিস ভ্রুক্ষেপই করলো না। কিন্তু যখন তার প্রাণের বন্ধু, তার ভালোবাসা, তার প্রেমিক মারা গেলো তখন সে যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে গেলো।


আগামেনন আকিলিসকে বারবার অনুরোধ করলো যুদ্ধে ফিরে আসার জন্য। এমনকি ব্রাইসিসকে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতীজ্ঞা করলো। কিন্তু আকিলিস নিশ্চুপ বসে রইলো। ট্রোজানেরা এক পর্যায়ে গ্রীক জাহাজগুলো পুড়িয়ে দিতে উদ্যত হলো। প্যাট্রক্লস আকিলিসের পোষাক পরে যুদ্ধক্ষেত্রে গেলো, মহা বিক্রমে সে ট্রোজানদের তাড়িয়ে নিয়ে গেলো। যুদ্ধের উত্তাপে প্যাট্রক্লস ফেরার কথা ভূলে গেলো। সে ট্রোজানদের ট্রয় ওয়ালের কাছাকাছি তাড়িয়ে নিয়ে গেলো। ট্রোজান প্যাট্রন অপল্লো পেছন থেকে প্যাট্রক্লসকে আঘাত করে। অতঃপর হেক্টর এক কোপে প্যাট্রক্লসকে হত্যা করে।


এই দুঃসংবাদ শুনে আকিলিস ধুলোর মাঝে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। প্যাট্রক্লসের দেহ ফিরিয়ে আনার পর আকিলিস তাকে পোড়াতে দিলো না। লাশের মাথার কাছ বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। স্বর্গ থেকে আকিলিসের মা দেবী থেটিস ছেলেকে সান্তনা দিতে নেমে এলেন।

আকিলিস উঠে নতুন যোদ্ধা সাজে নিজেকে সজ্জিত করে যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে গেলেন। গণহারে ট্রোজানদের কচুকাটা করতে লাগলেন। তিনি ট্রোজান রাজা প্রাইমের বড় সন্তান হেক্টরকে বধ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্যারিস অপোল্লোর নির্দেশ মত আকিলিসের গোঁড়ালিতে বিষাক্ত তীর মেরে তাকে হত্যা করেন। আকিলিস যাতে যুদ্ধে নিহত না হয় সেজন্য তার মা তাকে সাগরে ডুবিয়ে শুদ্ধ করেন। কথিত আছে তিনি পায়ের গোড়ালি ধরে ডুবান বলে এই অংশটি ভিজে নাই। সেজন্য শুধুমাত্র আকিলিসের গোড়ালিতে আঘাত করে তাকে মারা সম্ভব।


আকিলিস এবং প্যাট্রোক্লসের মৃতদেহ ভস্মীভূত করে তাদের ছাই একই কবরে সমাহিত করে গ্রীকেরা। তোমরা যারা চোখ দিয়ে পড়লে তারা শুধু একটা গ্রীক গল্প পড়লে। আর যারা মন দিয়ে পড়লে তারা নিশ্চয়ই দুই প্রেমিকের অমর প্রেমের গল্প পড়লে। যারা শুধু পাশাপাশি বাঁচতে চায় নাই। একজনের জন্য অন্যজন মরতেও পেরেছে। তারপরও কি গে রা ভালোবাসতে জানে না। তারা শুধু দেহসর্বস্ব প্রাণী! এই দুই বীরের জন্য, এই প্রেমিক যুগলের জন্য দুফোঁটা চোখের জল রেখো তোমার মনের কোঠায় যদি তুমি ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করতে চাও।

-----------------------------------------------------------------