blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

চটি

চটি শব্দটার সাথে আমার পরিচয় ছেলেবেলাতেই। চটি পায়ে চটরপটর করে হেঁটেছি কত তার ইয়ত্তা নেই। বাবার চাকরি সূত্রে ছেলেবেলা কেটেছে বারো জায়গার তেরো মানুষের সংস্পর্ষে। তাদের কেউ জুতাকে বলতো চপ্পল, কেউ বা চটি, কেউ বা স্যান্ডেল। আমরা অবশ্য বলতাম জুতো। আরেক জাতের যে চটি আছে তার সন্ধান পাই খুলনা পাবলিক কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময়ে। আমি ছিলাম একাদশ শ্রেণী, বি গ্রুপে। রোল ছিলো... নাহ রোল বলবো না। তো সহপাঠীদের অনেকেই দেখতাম লুকিয়ে ছোট ছোট বই নিয়ে আসতো। ব্যাগের আড়ালে লুকিয়েই পড়তো। এগুলো নাকি চটি বলে!


আমার পাশের বসা ছেলেটা একদিন জিজ্ঞেস করলো, কি চটি পড়েছো? আমি ভাবলাম মফস্বল থেকে এসেছি বলে এরা মনে হয় আমাকে ক্ষ্যাৎ ভাবছে। ক্লাসের ফাঁকে স্যারের অনুপস্থিতিতে এরা কি সব ইংরেজ মেয়েদের নাম বলে বুকের সাইজ বলে, কোমরের সাইজ বলে, কে কয়টা নিয়েছে তার গল্প করে। আমি এই সব মেয়েদের নাম জীবনেও শুনিনি। পর্ণো তারকাদের নাম যে কেউ জানে সেটাই ছিলো আমার কাছে এক মহাবিস্ময়ের ব্যাপার। আমি মিথ্যা করে বললাম, হুম আমি অনেক চটি পড়েছি স্কুল লাইফে। আমার এক স্কুল ফ্রেন্ডের সংগ্রহে প্রচুর চটি আছে!

আমার স্কুল ফ্রেন্ডরা তখন চটির নাম শুনেছে কিনা সন্দেহ। স্কুলে গোবিন্দ নামে একটা ছেলে পড়তো আমাদের সাথে। তার পকেটে একবার এক হিন্দী নায়িকার ভিউ কার্ড পাওয়ায় স্যাররা তাকে এমন ধোনা ধুনেছিলো সে আর বলার মত নয়। আমাকে বারবার আড়চোখে তাকাতে দেখে কলেজের বন্ধুটি জিজ্ঞেস করলো, কি পড়বে নাকি?

আমাকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করতে হলো না। আমি তার গাঁ ঘেঁসে বসে পড়া শুরু করলাম। কি এক অবৈধ সম্পর্কের বিছানায় রগরগে বর্ণনা। চরম গরম গল্প। অন্তত সেই বয়সের জন্য। এক পর্যায়ে তো আমি তার কাছ থেকে বইটা চেয়ে নিয়ে সব কটা গল্প পড়ে ফেললাম। পাঁচ সাত টা গল্প ছিলো। এর মধ্যে একটা গল্প পড়ে খুব ঘেন্না লাগলো। গল্প গুলো যারা লেখে তারা তো মানুষ। তাহলে মা শব্দটাকে নিয়ে তারা এত নোংড়া গল্প কিভাবে লেখে!

ক্লাসের বেশ কিছু ছেলে নিয়মিত চটি নিয়ে আসতো লুকিয়ে। প্রাণী বিজ্ঞানের স্যার বেনিয়াজ জামান আমরা আড়ালে যাকে বেজি স্যার বলে সম্বোধন করতাম একদিন ক্লাসে ব্যাগের আঁড়ালে লুকিয়ে চটি পড়ার সময় ছোট খাঁট এক বন্ধুকে হাতে নাতে ধরে ফেললো। ছেলেটা অনেক সুদর্শন ছিলো। স্যার তাকে পিটিয়ে লাল করে দিয়ে চটি খানা নিয়ে গেলো পকেটে করে। ফিঁচেল এক বন্ধু মন্তব্য করলো, বেজি স্যার বাসায় গিয়ে পড়বে বলে নিয়ে গেলো! পাবলিক কলেজে এই এক ঝামেলা ছিলো। স্কুলের মত বেত পেঁটা করতো। আমি আমার সারা জীবনে একবারই মাত্র কান ধরতে বাধ্য হয়েছি। রসায়নের মলিন স্যারের ক্লাসে। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময়।

এরপর বেজি স্যার পরবর্তী কয়েকদিন ক্লাস নিতে এসে সবার ব্যাগে অপারেশান সার্চ চটি চালাতো। স্যার চলে গেলে সবাই বলাবলি করতাম যে স্যার চটি পড়ে মজা পেয়ে গেছে সেজন্য সবার ব্যাগ সার্চ দেয়া শুরু করেছে। খিক খিক খিক।

-----------------------------------------------------------------