blogger widgets
শুভ্র ভাই এর লেখালেখির জগতে স্বাগতম! Welcome!

টুম্পা ভাবী

গত মঙ্গলবার রাতের শিফটে ডিউটি ছিলো। যথাসময়েই ডিউটিতে ঢুকলাম। সিনিয়র বললেন, শুভ্র এদিকে আসেন। লোকটা পরিশ্রমী কিন্তু ব্যবহার খুবই খারাপ। তাই আমিও লাফ দিয়ে তার কাছে গেলাম। দুইশোর মত পাম্প মোটরের ডাটা মেলাতে হবে। মেলাচ্ছি দুজন মিলে। তিনিই বলছেন আমি লিখছি। দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর উপুড় হয়ে লেখা আমার জন্য কষ্টকর। হাইটের কারণে একটু বেশী ঝুঁকতে হয়। বিরক্তিকর হলেও বিরক্ত প্রকাশের সাহস পেলাম না। এমন সময়ে ফোন বেজে উঠলো। আড় চোখে তাকালাম। আমার ডেস্কে মোবাইল বাজছে। সিম্ফোনির চেনা সুর। সিনিয়র ভ্রুক্ষেপ না করে ডাটা বলে যেতে লাগলেন। আবার ফোন বাজলো। বেজে যেতে দিলাম। আবার বাজলো। সিনিয়র বলে না ফোনটা ধরেন। আমি প্রায় দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটার গলা টিপে ধরলাম। আবার লিখছি। আবার ফোন বাজে। আবার কেটে দিলাম। আবার ফোন বাজে। আবার কেটে দিলাম। আবার ফোন বাজে। আবার কেটে দিলাম। কয়বার হলো! অবশেষে কাজ শেষ হলো। 


প্যান্টের পকেটে হাত চালান দিলাম। অচেনা এয়ারটেল নাম্বার। বলতে গেলে কোন নাম্বারই চিনি না। শুধু যেগুলা সেভ করা থাকে কন্টাক লিস্টে ওগুলোকেই চেনা নাম্বার বলি। মুখস্ত বলতে নিজের, আব্বুর, আম্মুর এবং আমার কলেজ লাইফের এক বন্ধুর একটা নাম্বার মুখস্ত আছে। ছোট ভাইয়ের নাম্বারটাও মুখস্ত হয় নাই। ওগ হ্যাঁ কিশোর চাকমা এবং আরেকজনের নাম্বার মাঝে মাঝে কিভাবে ঠিক বলে ফেলতে পারি। আজিব। ডাবল সিমের ফোন। বাংলালিঙ্ক আর গ্রামীনের সিম লাগানো। দুই কোম্পানীর ফ্রির ম্যাসেজে ইনবক্স দুদিনেই ফিলাপ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় ক্লিন করেছি। দেখি ওয়ান আনরিড মেসেজ। খুলবো না খুলবো না করেও রিড বাটনে চাপলাম। নাহ এটা অফার মেসেজ না। রোমান অক্ষরে এক লাইন লেখা। ‘’ami tumpa’’ । মেমরি সার্চ দিলাম। টুম্পা নামে কাউকে কি চিনি? নাহ। ভার্সিটি লাইফের পর থেকে নারী জাতীর সাথে লেনাদেনা প্রায় চুকিয়েই ফেলেছি বলা চলে।

কে হতে পারে টুম্পা। আমি সব ভূলে গেলেও অনেক কিছুই তো মনে থাকে। নাহ টুম্পা নামে চেনা কারো মুখ মনের গুগলে ধরা পড়লো না। জিপি থেকে এয়ারটেলে ফোন দিলে এত্ত গুলা টাকা কাটে। সাধে কি আর জিপিকে হারামীফোন বলা হয়। দিলাম ফোন। ওয়েটিং।

মিনেট পাঁচেক পরে আবার ফোন দিলাম। স্টিল ওয়েটিং। ধ্যুর। যে হয় হোক। আমি শিফমেটের সাথে গল্প করছি। হঠাৎ ওই নাম্বার থেকে মিসকল এলো। কেয়ার করলাম না। দশ পনেরও মিনিট পরে ফোন এলো। ডিরেক্ট কল। ওপাশ থেকে সুরেলা গলা ভেসে এলো...

- হ্যালো।
- হ্যালো, স্লামালেকুম।
- নমস্কার।
- নমস্কার! আপনি কি নিশ্চিত আমি নমস্কার পার্টি?
- হ্যাঁ।
- কে বলছিলেন।
- ওমা বিয়ে করছেন, বাচ্চা হওয়াইছেন। আর এখন বলেন আমি কে?
- আমি ঠিক বুঝলাম না। আপনি কি বলছেন!
- আমি তোমার বউ।
- আমার বউ? বিয়ে কবে করলাম?
- সেকি বাচ্চা হওয়াইছেন। আর এখন বলছেন বিয়ে কবে করলাম। আমি তোমার বাচ্চার মা!
- আমার বাচ্চার মা! কাম সারছে! আগে ভাবতাম লুঙ্গি বাচ্চার মা দাবী নিয়ে আসবে। এখন দেখি জলজ্যান্ত মানুষ সেই দাবী করে বসছে।
- খিল খিল খিল।
- বেশ মজা পেয়েছেন মনে হচ্ছে। এবার বলেন ভাই আপনি কে? অচেনা কারো সাথে তো সব কিছু নিয়ে মজা করা যায় না।
- এই তোমাকে না খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে।
- রাত দুপুরে স্বামীকে আদর করার ইচ্ছে জাগতেই পারে। দিনের বেলা কি স্বামীর দরকার নাই। এই মধ্যরাতে স্বামী খুঁজতে বেরিয়েছেন। পরিচয় বলেন ম্যাডাম।
- এই আমি তোমার হাত কামড়াবো।
- স্বামী যখন তখন হাত কামড়াবেন কেন। সব কিছুই কামড়াতে পারেন।
- নাহ। শুধু হাত কামড়াবো।
- কিছু আগে ফোন ব্যস্ত পেলাম, তখন কি অন্য কারো হাত কামড়াচ্ছিলেন।
- হ্যাঁ।
- ওহ বেশ পরকীয়া করেন মনে হচ্ছে।
- হ্যাঁ করি।
- বেশ বেশ। পরকীয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সকাল বিকাল পরকীয়া করেন, স্বামীর উপর চাপ কমান।
এর পরে লাইনটি কেটে গেলো। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানি এই সময়ে ফোন কেটে যায় না। ওপাশ থেকে কেটে দেয়া হয়। এর অর্থ এবার ব্যাক করো। ফ্রিতে পিরিতের আলাপ করি। কে না কে। আমি আর ব্যাক করতে গেলাম না। সিম্ফোনিতে সব রেকর্ড হয়ে থাকে। দুই শিফমেট মিলে রেকর্ড শুনি আর হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়ি। শিফমেট থেকে থেকে বলে, এই আমি তোমার হাত কামড়াবো। আবার হাসির হল্লা শুরু হয়।
টুম্পা যেই হোক। আমাদের কিছু হাসির খোরাক দিয়ে গেছে। গতকালও শিফমেট বললো, ভাই তাও ভালো শুধু হাত কামড়াতে চাইছে। অন্য কিছু কামড়ে ধরলে কি হতো। আমি বললাম, কি আর হতো। বউ মানুষ। যা খুশী কামড়াক।
 
 

-----------------------------------------------------------------