দরজায়
করাঘাতের শব্দ সেই সাথে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো, ছোড
ভাই , বেহান বেলা আর কত ঘুমাবে। ওঢো।
আমি
ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না, কে আমাকে ডাকছে। মা ফুফুর
গলা তো এরকম না। শেষ রাতের দিকে বোধহয় ঘুমিয়ে গেছিলাম। দুচোখ ঘুমে বুজে আসছে। ঘুম
জড়ানো স্বরেই জিজ্ঞেস করলাম , কে ?
ওপাশ
থেকে খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ ভেসে এলো।
"বেশ মানুষ তো তুমি! গত রাতে সাথে করে আনলে আর এখন চিনতেই পারছো
না। "
আমি
এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারি নাই। বহুকালের অভ্যেষবশত রহীমের খাটের দিকে তাকালাম।
রহিমের খাট কোথায়? খাটের বদলে সেখানে একটা
টেবিল। টেবিলের উপর একরাশ বই পত্র ঝাঁপ মেরে রাখা। এবার সব ঝাপসা পরিষ্কার হয়ে
এলো। শালিক খালী, সুন্দরবন সব স্বপ্ন হয়ে ফিরে এসেছিলো গত
রাতে। বহু বহুকাল পরে।
আমি
ধরমড় করে উঠে বসলাম। চোখ কচলাতে কচলাতে দরজা খুলে দিলাম। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে
কনা ভাবি। হাতে চায়ের কাপ। হাসি মুখে বললেন, টিকটিকির
ছোট ভাইটিও দেখি ঘুমে কম যায় না। চা তো ঠান্ডা হয়ে গেলো। দেখতো খাওয়া যায় কিনা?
আমি
হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিলাম। বহুদিন পর ঘুম থেকে উঠে এভাবে বেড টি
খাওয়া হয় না। একাকি জীবনে সব নিজেকেই করতে হয়। ঘুম থেকে উঠে চা বানাতে বানাতে আর
বেড টি খাওয়ার মুড থাকে না।
চা
ভালো হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস চা।
‘
চিনি ঠিক আছে। তিন চামচ চিনি।
‘
জি। তিন চামচ চিনি খাই এটা কিভাবে জানলেন ?
‘
গতকালকেই লক্ষ্য করেছি । চিনি বেশী খাও। এত মিষ্টি খাওয়া ভালো না রক্তে সুগার বেড়ে
যাবে।
আমি
হাসি দিলাম। একাকি এই জীবন শুধু অর্থহীন ভাবে টেনে নেয়া। তাতে চিনি বাড়লেই বা কি
আর কমলেই কি ! মজা করে বললাম, বেশী চিনি খাই
যাতে ব্যবহার মিষ্টি হয়। এমনিতেই বন্ধুরা সবাই বলে আমি রগচটা। হঠাৎ করে রেগে যাই।
ঘরে
ছড়ানো ছিটানো বইয়ের দিকে তাকিয়ে কনা ভাবি বললেন, ঘরের এই হাল কেন ? সাপ খোপ বাসা বাঁধে নাই তো
ওই বইয়ের দঙ্গলে ? জলদি বিয়ে করো। বউমা এসে সব জঞ্জাল দুর
করে দিক।
আবার
বিয়ের কথা। এই বিষয়ে উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। কিন্তু আজ আর উত্তর দেয়া লাগলো
না। অক্ষর তার ছোট পা ফেলে দৌঁড়ে এলো।
‘
চাচ্চু কোলে নাও। কোলে উঠবো।
কোলে
নিয়ে তার তুলতুলে গালে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বললাম,
কি ব্যাপার্। এতো সকালে আমার ছোট আব্বু এত ফিটফাট কেন?
‘
চাচ্চু, ইউ ফরগট? আজ
মর্নিং এ না আমরা ওল্ড বাংলার ক্যাপিটাল দেখতে যাবো।
‘
স্যরি আংকেল। একদম মনে ছিলো না। আমি পাঁচ মিনিটেই গুছিয়ে নিচ্ছি।
ভাবীর
দিকে তাকিয়ে বললাম, আচ্ছা ভাবী এত জায়গা থাকতে
সোঁনারগাঁয়ে কেন। সেখানে তো দেখার মত কিছু নেই।
‘
আসলে তোমার ভাইয়া সবসময় অক্ষরের কাছে দেশের গল্প করে। প্রাচীন বাংলার গল্প এত
করেছে যে ছেলের ধারণা সোনারগাঁ অনেক সুন্দর একটা জায়গা। তাকে দেশে আশার আগে
জিজ্ঞেস করেছিলাম , দেশে গিয়ে প্রথম কোন জায়গা
দেখতে চাও। সে বললো পানাম সিটি। তাই আমরাও ট্যুর প্লানে পানাম সিটি রেখেছি সবার
আগে।
‘
ওকে ভাবি আমি রেডি হয়ে নেই। দ্বীপ্ত ভাইয়া উঠেছে ?
‘
সেও তো তোমার পাঁচ মিনিটের দলে। ডেকে এসেছি। এখনো ওঠেনি বলে মনে হয়। আমরা মেয়েরা
নাকি কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে ঘন্টা খানেক লেট করি। তাই সেই অপবাদের আগেই উঠে
পড়লাম। ফ্রেশ হয়ে এসো। নাস্তা করবে ।
‘
নাস্তাও বানিয়েছো।
‘
এসেই দেখো।
‘
কষ্ট করে নাস্তা বানানোর কি দরকার ছিলো।
ভাবি
কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললেন, নিজে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন! আর
আমাদের বলেন, কষ্ট করে নাস্তা বানানোর কি দরকার ছিলো।
তোমার কাজের লোকের রান্নার মুরোদ আমার জানা আছে। যাও কথা না বাড়িয়ে জলদি ফ্রেশ হয়ে
আসো।
।
।
5 টি মন্তব্য:
চমৎকার।
আমি মুগ্ধ। লেখককে ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো।
খুব একা একা লাগে।
খুব ভালো, লেখা কি এখানেই শেষ না আরো পাবো☺👬
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন