নাই
টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে
টেলিগ্রাম ,
বন্ধুর
কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম।
বাংলাদেশ
বেতারে রুনা লায়লার গলার গান আজ আমার দুপুরের হাহাকার বাড়িয়ে দিলো। আজ এক মাস হয়ে
গেলো। দ্বীপ্ত ভাইয়ের কথা আমি সারাক্ষন ভাবি। সেকি একবারও আমার কথা ভাবে না। এক
লাইনে একটা চিঠি লিখে পাঠানোর সময় কি তার হয় না !
শেষ
বিকেলে এলো চিঠি। বাবার পকেটে চড়ে। এক খামে দুটো চিঠি। একটা আব্বার,
আরেকটা আমার্। দ্বীপ্ত ভাইয়া পাঠিয়েছে। তারআনে আব্বা দুটো চিঠিই
পড়েছেন। আমি কাঁপাকাঁপা হাতে চিঠিখানা নিলাম।
নিজের
ঘরে গিয়ে জানালার কাছে আলোয় মেলে ধরলাম চিঠির নীলচে পাতা। ছোট
চিঠি। মাত্র কয়েকটা লাইন তাতে লেখা।
প্রিয়
শুভ্র,
শুভাশিষ নিও। আশা করি বাড়ির সবাইকে
নিয়ে কুশলে আছো। পরসমাচার তোমাদের বাড়ি থেকে আসার পর পরীক্ষার ডেট পড়ে যাওয়ায়
প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তাই তোমাকে চিঠি লেখা হয় নাই। তোমার পড়াশুনা টা কেমন
হচ্ছে ? মন দিয়ে পড়াশুনা করবে।
ভালো
থাকবে। আমার জন্য দোয়া করবে। আর সময় পেলে চিঠি দিও।
ইতি,
তোমার
দ্বীপ্ত ভাইয়া।
পুনশ্চ:
আমার ঠিকানা খামের উপর পাবে।
অল্প
কয়েকটি লাইন। আমি চিঠিখানা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার পড়তে লাগলাম। প্রতিবার চিঠিখানাকে
নতুন বলে মনে হলো। এই কয়টি লাইন আমার সময়কে রঙিন কর দিলো। মনে হচ্ছে দ্বীপ্ত ভাইয়া
আমার সাথে মুখোমুখি কথা বলছে। আজ মন আমার অনেক ভালো। চিঠির অক্ষরগুলো মৌমাছির মত আমার চারপাশে
গুনগুন করতে লাগলো। আমি তখনি চিঠির উত্তর দিতেবসে গেলাম। মনের রাজ্যে হাজার কথার
ভিড়। কোনটা রেখে কোনটা লিখি ! সম্বোধন কি লিখব সেটা লিখতেই কয়েক পাতা নষ্ট হলো। প্রিয়তম,
হৃদয় আমার, জানপাখি বাদ হয়ে শুধু থাকলো
দ্বীপ্ত ভাইয়া।
বাতাসে
ভেসে যেতে লাগলো আমাদের সময়। রাগ অভিমান , প্রেম
ভালোবাসা সব চিঠির কাগজে ডানা মেলত। দুত
হয়ে হাজির হত পোস্ট অফিসের পিয়ন। সপ্তাহে
আমার নামে একটি দুটি চিঠি আসা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেডিওতে
মনির খানের শোনা গানের দুকলি একদিন লিখে পাঠালো দ্বীপ্ত ভাইয়া। আমার খুব হাসি
পেলো। কারো সাথে শেয়ার করতে পারি নাই। তেঁতুল তলায় ওইপাশের বাগানে গিয়ে একা একা হো
হো করে হাসলাম।
চিঠি
লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙ্গা হাতে, প্রদীপ জ্বালাইয়া
নিভাইয়া ...
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন