আইডিবি বিল্ডিং এর থার্ড ফ্লোরে দাঁড়িয়ে ফোন দিলাম পলকে। পলিন পল। আমার যে কজন ভাল বন্ধু আছে তাদের মধ্যে একজন। আমাদের সম্পর্কটাও আন্তরিক। পলকে একটা কারণে আমার বেশ ভাল লাগে। কোন কিছুর পেছনে যে লেগে থাকার অদম্য আগ্রহ থাকে সেটা ওর মধ্যে বেশ ভাল ভাবেই আছে। আমি সেভাবে বলতে গেলে প্রেমে ছ্যাঁকা খাইনি। তারপরও প্রেমের প্রতি, রিলেশানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু কয়েকটা সফল ব্রেক-আপের পরেও নতুন করে ভালবাসার বাঁধনে বাঁধার প্রচেষ্টা আছে পলের ভিতর। এবং সে সফল হয়েছে। একসময় ফেসবুকের পাতায় পল আর তার সাবেক বয়ফ্রেন্ড্রের কাপল ছবি দেখে নিজের মধ্যে শুন্যতা অনুভব করতাম। ভাবতাম ইশ! আমার যদি এরকম একটি ভালবাসার মানুষ থাকত। সেলিব্রেটি লাভ কিন্তু টেকানো খুব কঠিন। পলও টেকাতে পারেনি। ব্রেক-আপ এবং আরেকটি নতুন মানুষ খুঁজে ফেরা। পল সফল হয়েছে। অঘোষিতভাবে পল এখন আমাদের খুলনার জামাই। আমাদের এই জগতের মানুষ গুলোর একটা প্রচন্ড বাজে স্বভাব আছে। অন্যের পারসোনাল ব্যাপারে নাক গলাতে খুবই কিউরিয়াস আমরা। আমি নিজেকে এটা থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করি। তাই আজো জানার চেষ্টা করিনি পলের এই ভালবাসার মানুষটি কে? সবসময় মনেপ্রাণে চাইব, তারা সুখে থাকুক।
আরে ভাই এ কোন লাইনে চলে গেলাম আজ। পল কে নিয়া প্যাঁচাল পাড়া শুরু করলাম কেন! আমি তো নিজের কথা লিখব। যা বলছিলাম, পলকে ফোন দিলাম। বললাম আয়, আড্ডা মারি। ও আমাকে মতিঝিল যেতে বলল। মিরপুরে ফিরতে হবে বলে রাজি হলাম না। বললাম শাহবাগে আয়। ও রাজি হল। ঢাকার পাব্লিক খুব স্লো। এরা টাইমলি আসেনা। অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছে করেই লেট করে। পলেরও টাইম লাগবে ভেবে আমি হোটেল রুপসী বাংলায় ল্যাপটপ ফেয়ারে ঢুকব বলে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। কিন্তু পল টাইমলি পৌঁছে আমাকে ফোন দিল। আর মেলায় ঢোকা হল না। এই পথটুকু একরকম দৌড়ে পার হলাম। শাহবাগে অনেক ভীড়। পলের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল এই শাহবাগে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। সেদিন ওর তাড়া ছিল। ঘন্টাখানেক আমরা একসাথে ছিলাম। জাদুঘরের ভিতর ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। আজ আমাদের দ্বিতীয়বার দেখা। ভাল বন্ধুত্ব মানেই রেগুলার দেখা করতে হবে আমি এরকম কিছু মনে করিনা। পল বলল, কোথায় বসবি? বললাম, চল সোহরাওয়ার্দি পার্কের ভিতরে গিয়ে বসি। সে বলল, আরপিতে যাবি?
আরপি। রমনা পার্ক। গে’রা এটাকে কোড ওয়ার্ড হিসেবে আরপি বলে। আমিও এটার গল্প শুনেছি অনেক। মিগ৩৩’র গে বাংলাদেশ রুমে RP নিয়ে অনেক গল্প শুনতাম যা অবিশ্বাস্য ঠেকত। তাই RP নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল, পলের প্রস্তাবে তাই এক সেকেন্ডের ভিতর রাজী হয়ে গেলাম। আমি জানতাম রমনা পার্ক শাহবাগের এদিকে। কিন্তু ঠিক কোথায় এটার অবস্থান সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। হিমু মাসুম আর আমি একবার প্লান করেছিলাম কোন এক শুক্রবার RP তে বেড়াতে যাব। শুনেছি ওখানে ছিনতাই এর উপদ্রব বেশি। দরকার হলে মোবাইল, মানিব্যাগ বাসায় রেখে শুধু পথ খরচের টাকা নিয়ে যাব। কিন্তু সে প্লান আর বাস্তবায়ন করা হয় নাই।
RP তে ঢুকে মনে হল, আরে এটাই রমনা পার্ক! আমি তো আগেও একবার এখানে এসেছি ঘুরতে। কিন্তু এটাকে সোহরাওয়ার্দি পার্কের অংশ ভেবেছিলাম। এখন বিকেল ৪।৩০ বাজে। এখানে ওখানে কিছু স্ট্রেইট কাপল বসে আছে। যা দেখতে আসলাম তা কোথায়। বিরক্ত লাগছিল। আমরা এ মাথা থেকে ওই মাথা ঘুরে এলাম। কিছুই দেখলাম না। পল বলল সন্ধ্যা হোক, তখন দেখবি। পলের সাথে সময়টা ভালই যাচ্ছিল। পার্কে অনেক মানুষের ভীড়। লেকে কিছু মানুষ গোসল করছে। ছিন্নমূল টাইপের মানুষ। হঠাৎ যুবক একটা ছেলেকে দেখলাম, প্যান্ট খুলে পাড়ে রেখে পানিতে নেমে গেল। সবাই চেয়ে চেয়ে দেখছে। ব্যাপারটা প্রথম পলের চোখে পড়ে। আমি দেখার আগেই ছেলেটা পানিতে নেমে গেল।
সন্ধ্যার আঁধার নামতে শুরু করেছে। কঞ্ছির মত গড়ন একটা ছেলেকে দেখলাম সিগ্রেট ফুঁকছে। স্মার্ট বলা চলে। কিন্তু হাত নাড়ানোর ভঙ্গি আর হাটার স্টাইল দেখে মনে হল পুরা সিসি টাইপ। পল আর আমি চোখাচোখি হতেই হেসে ফেললাম। সন্ধ্যার আধারে হাটছি। ল্যামপোস্টের মাথায় আলো আর পোকাদের খেলা। গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ পল বলল, এই ছেলেটা গে। আমি থমকে গেলাম। কিভাবে বুঝলি?
দেখলি না সংকেত দিল।
কিসের সংকেত। আমি তো কিছুই দেখলাম না।
তুই তো কানা, কিছুই দেখবি না। এদের নিয়ম হল প্রথমে তোর চোখে চোখ রেখে তাকাবে, তারপর তাকে ক্রস করে দাঁড়িয়ে থাকবে। তোর দরকার হলে এগিয়ে যাবি।
আমরা কথা বলতে বলতে বেশ এগিয়ে গেছি। আগ্রহ তখন আমার চরমে। আমি পলকে বললাম, ফিরে চল। এটাকে পটাই। দেখি কি করে। আমি আর পল গল্প করার ভঙ্গিতে আবার সেই জায়গাটাকে ক্রস করলাম। দেখলাম একটা বেঞ্চের সামনে মালটা দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দিকে ডাইরেক্ট তাকিয়ে আছে। আর হাত দিয়ে প্যান্টের উপর বিশেষ জিনিসটাকে মাস্যাজ করছে। আমি আর পল সেই বেঞ্চ টার উপর গিয়ে বসলাম। তাকে ইশারা করলাম বসতে। সে মাঝখানে এসে বসল। দুজনের কাঁধে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। মনে হচ্ছিল কত চেনা। আমাদের ফিগার মাশাল্লাহ মন্দ না। সে তো গলে গলে পড়ছিল। এসব ব্যাপারে আমি কিছুটা আনইজি ফিল করি। নিজের মাঝে শিটিয়ে গেলাম। কিন্তু পল স্মার্ট গাই। সে তাল দিতে থাকল। তার বাসা মালিবাগে। সে প্রতি সপ্তাহে এখানে একবার হলেও আসে। এখানেই কোন আলো –আঁধারীর ফাঁকে কাজ সেরে বাসায় ফেরে। এক পর্যায়ে সে পলের প্যান্টের ভিতর হাত ঢোকাতে শুরু করল। পল বলল, ভাইজান, আপনি যে লাইনে এগোচ্ছেন আমি সে লাইনের না।
তিনজন টপ হলে কথা আর এগোয় কিভাবে। সে চেন খুলে নিজের ডিকটা বের করে ঝাকাতে শুরু করল। তার দেহের সাইজের তুলনায় এটা অনেক বড়। পল বলল, দোস্ট একবার ধরে দেখ, বিনে পয়সায় এই সুযোগ বার-বার পাবিনা। আমি জানি এরা আনসেফ। যতই কনডম ইউজ করুক। প্রতিদিন নিত্য নতুন মানুষের সাথে সেক্স। এই জিনিস টাচ! ইমপসিবল।। ভাবলেই তো গা শিউরে ওঠে। তার উপর এর কাছে যে গল্প শুনলাম। মোটা মতন একটা ছেলেকে দেখিয়ে তার ফ্যাঁসফেসে গলায় বলল, গত শীতে এটাকে তারা দশজন মিলে ফাক করেছে। একপর্যায়ে তাকে বললাম, ভাই আপনি যদি আমাদের আশায় বসে থাকেন তাহলে আজকের খ্যাপ মিস করবেন। আমরা আসলে এই টাইপের না। জাস্ট মজা দেখতে এসেছি।সে অনুযোগ করে বলল, এত সুন্দর চেহারা আর সেক্স না করলে হবে!
আরো কিছুক্ষণ বসে সে কেটে পড়ল। আমি আর পল আবার ঘোরা শুরু করলাম। অনেকেই চলে এসেছে এই টাইপের। আমরা আর কাউকে পটালাম না। ঘুরে ঘুরে দেখছি। গাছের ছায়ার রাতের আঁধারে পুরুষ যুগলেরা বসে আছে। নিশ্চই কিছু ঘটে যাচ্ছে ওখানে নিঃশব্দে। রাত ৯টা বেজে গেছে। আমাদের সামনের বেঞ্চে বসা যুগল দাঁড়িয়ে গেল। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। তারপর দুজন দুদিকে চলে গেল।
আমিও পলকে বললাম, চল এবার ফিরি। সারাপথ আমার মাথার ভিতর একটা জিনিস ঘুরতে লাগল, যে জিনিস কে আমরা সাহিত্য মাখিয়ে, ভালবাসার রঙে রাঙিয়ে ফেসবুক আর ম্যানজামের পাতায় পাতায় খুঁজি সেই একই জিনিস এরা কত সহজে উপভোগ করছে খোলা আকাশের নিচে অনায়াসে। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখবে, যে জিনিস সহজে পাওয়া যায় তা সস্তা। আর সস্তা জিনিসের আদর বল আর কদর বল সেটা যে কত নিম্নমানের হয় সে কথা নিশ্চই তোমাকে বলে বোঝাতে হবে না। পরিশেষে বলব, বন্ধু জ্ঞানের উপর কিছু নেই। যতই ভালবাসার লোক হোক, সেক্সের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করবে। কনডম হল খবরের পাতার মত প্র্য়োজনীয়, আজকে যা পূর্ণ থাকে গুরুত্বপূর্ণ খবরে আগামী সেটা হয় ঠোঙ্গার কাগজ। নিজের জীবনটাকে যদি সস্তাদরে বিকিয়ে দাও তবে আগামীকাল হয়তো অন্ধ গলিতে নিজেকে খুঁজে পাবে। পথ খুঁজে বেরোতে পারবে তো!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
12 টি মন্তব্য:
আচ্ছা সত্যি কি রমনা পার্কে ওপেনলি সেক্স হয়?
আমিও একবার রমনা পার্কে যেতে চাই। তুমি আমার সাথে যাবে?
দেশটা একদম নষ্ট হয়ে গেলো। যত্তসব।
আমার মাথার ভিতর একটা জিনিস ঘুরতে লাগল, যে জিনিস কে আমরা সাহিত্য মাখিয়ে, ভালবাসার রঙে রাঙিয়ে ফেসবুক আর ম্যানজামের পাতায় পাতায় খুঁজি সেই একই জিনিস এরা কত সহজে উপভোগ করছে খোলা আকাশের নিচে অনায়াসে। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখবে, যে জিনিস সহজে পাওয়া যায় তা সস্তা। আর সস্তা জিনিসের আদর বল আর কদর বল সেটা যে কত নিম্নমানের হয় সে কথা নিশ্চই তোমাকে বলে বোঝাতে হবে না।
লেখকের সাথে সহমত।
পলের সাথে তুমি কি সেক্স করেছ?
আমি প্রতি সপ্তাহেই রমনা পার্কে যাই। শুক্রবারে। তুমি গেলে জানিও। দেখা করবো।
রমনা পার্কের সবুজ ঘাসে বসে গল্প করতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি মাঝে মাঝেই যাই।
গল্পটা ভূয়া বলে মনে হচ্ছে। এরকম সত্যি সত্যি সম্ভব নাকি!
সেক্স খুব সহজ একটা ব্যাপার। মুসলিম দেশগুলোতে এটাকে কমপ্লেক্স ভাবে দেখা হয় বলেই এত ঝক্কি। কিছু ব্যাপারে সমাজকে বাস্তববাদী আচরণ করা উচিত।
অনু পম দা তুমি এত সুন্দর করে কিভাবে লেখো! আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।
হুম
আমি নিজেও করেছি
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন