অনেকদিন পর আবার কলম ধরলাম নিজের কথা লিখব
বলে। যখন আর কোন কিছু ভাল লাগেনা তখন আমি কলম ধরি নিজের কথা লিখতে। নিজেকে ভূলিয়ে
রাখতে চাই জীবনের অব্যক্ত ইতিহাস আওড়ে। আজ আমি বলব চিটাগাইঙ্গা এক পোলার গল্প।
প্রথম মেসেজঃ প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর
ফেসবুকে ঢোকা আমার নেশা হয়ে গেছে। নোটিফিকেশান আর মেসেজ চেক করি টয়লেট আর দাঁত
ব্রাশ করার মাঝে। সেদিন একটা মেসেজ পেলাম, অনুপম তোমার বায়োডাটা অসম্ভব সুন্দর (
আমি নিজেও জানি আমার বায়োডাটা টা ইউনিক। অনেকেই কপি পেস্ট মেরে নিজের করে নিয়েছে।
তবে সব থেকে মজার ব্যাপার হল, তারা আমার বয়স, উচ্চতা পর্যন্ত কপি করেছে।) আমি
নিয়মিত তোমার স্ট্যাটাসগুলো পড়ি। (আমি মনে করার চেষ্টা করলাম আমার স্ট্যাটাসগুলোতে
এই পোলার কোন কমেন্টস দেখেছি কিনা। নাহ।) আমার খুব ভাল লাগে। আমি তোমার ভাল বন্ধু
হতে চাই।
এরকম মদন মার্কা মেসেজ আমি মাঝে মাঝে পাই।
আজকেও একটা পেলাম। তাই পাত্তা দিলাম না।
আসলে বলে কয়ে কখনো বন্ধুত্ব হয়না এই বেসিক জিনিসটা মদনগুলো কেন বোঝেনা সেটা আমি
নিজেই বুঝিনা। ভদ্রতা করে মদনটাকে লিখে পাঠালাম, অবশ্যই আমরা ভাল বন্ধু হতে পারি।
মন্তব্য বন্যাঃ এর পরের ঘটনা খুবই সাধারণ।
আমাদের মেসেজ আদান-প্রদান চলতে থাকলো। আমি স্ট্যাটাস দিলে সেখানে তার সরব
উপস্থিতি। আমার স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড কথাবার্তা আর ওপেন মাইন্ডেড মেন্টালিটি নিয়ে
মূহূর্মূহু প্রশংসা পেতে লাগলাম। এটা আমার ফেসবুক জীবনে খুব সাধারণ একটা ঘটনা।
আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এরকম অনেক গুলো বন্ধু এখনো আছে। প্রতিদিন সকালে এসে যাদের
মন্তব্য আমি প্রত্যশা করতাম। ঝগড়াঝাটি কথা কাটাকাটি সব হত কমেন্টস বক্সে। তাদের
অঙ্কেই এখনো আমার ভালো বন্ধু। কিন্তু তাদের মন্তব্য আর পাই না। হয়তো তারা ব্যস্ত
থাকে অন্য কারো স্ট্যাটাসে। এটাই জীবনের নিয়ম। এক জিনিস মানুষের খুব বেশীদিন ভাল
লাগে না।
ফোনালাপঃ ফেসবুক ব্যবহার করি ২০০৭ থেকে। ফোন
নাম্বার নিয়ে মাঝে মাঝে বিড়ম্বণার শিকার হতে হয়। সেজন্য আমি আলাদা একটা নাম্বার
নিয়েছি শুধুমাত্র ফেসবুক বন্ধুদের জন্য। তাই কেউ চাইলেই আমি নাম্বার শেয়ার করি।
নাম্বার শেয়ার করা নিয়ে ন্যাকামো করা আমার একদম পছন্দ নয়। ছবি শেয়ার করার ব্যাপারে
ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উলটো।
তার সাথে ফোনে কথা হতে থাকলো। সে আমার
ভয়েসের ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগলো। আমি মনে মনে চরম বিরক্ত হলাম। আসলে আমার ভয়েজ
টোন কিছুটা চিকন। সেজন্য আমাকে সারাজীবন হাফ লেডিস, হিজড়া এই ধরণের উপহাস শুনতে
হয়েছে। ইদানিং কোন ব্যাপারে বিরক্ত হলে আমি সরাসরি বলি যে আমার বিরক্ত লাগছে, আমি
এই ব্যাপারে কথা শুনতে আগ্রহী নই। আগে বলতে পারতাম না।
প্রেমপ্রস্তাবঃ প্রেমের প্রস্তাব পাবো আমি
এই ব্যাপারে শিওর ছিলাম। মাস না পেরুতেই পেয়ে গেলাম। অনেক তো দেখলাম ভাই। কিভাবে
ফেসবুক ভালবাসায় আস্থা রাখি বলো! ঠিক ফিরিয়ে দিলাম না। আমার সেই তথাকথিত মুখস্থ
ডায়ালগ টা মারলাম, দেখ ফ্রেন্ডস, আমি আসলে প্রেম ট্রেম বিশ্বাস করি না। আমি
বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। আমি ফেসবুকে আসি বন্ধুত্ব করার জন্য, ভালবাসার মানুষ খোঁজার
জন্য।
এই কথাগুলো অন্য মানুষ কতটা বিশ্বাস করে
জানিনা। কিন্তু আমি নিজে খুব একটা বিশ্বাস করি না। তবে একথা সত্য আমি এখন সেক্সের
জন্য ফেসবুক ব্যাবহার করিনা। ফেসবুক আমার
কাছে ফাকবুক নয়। আমি ফেসবুক ব্যবহার করি কারণ এটা অনেকটা নেশার মত হয়ে গেছে।
ফেসবুকে না আসলে ভালো লাগেনা। টাইম পাস এখন আমাকেই পাস করে।
দীর্ঘ বিরতিঃ তারপরের ঘটনা আরো সিম্পল। আমার
স্ট্যাটাস, ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে সে যেন হারিয়ে গেলো। তার কথা আমিও ভূলে গেলাম। খুব
একটা মনে রাখার মত কেউ সে নয়। তারপরও মাঝে মাঝে পাম্প দেয়া কথা গুলো মনে পড়ে।
পাম্পে কে ফোঁলেনা বলো! হাসিনা-খালেদারা পর্যন্ত পাম্প লাইক করে। আর আমিতো কোন
ছার।
সশরীরে সাক্ষাতঃ সেপ্টেম্বর মাসের কোন একদিন
সকালে চট্টগ্রামের বাসে চেপে বসলাম। পথে আমি স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু করলাম এটা ক্রস
করছি, সীতাকুণ্ডের পাহাড় আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ইত্যাদি। রাস্তায় বেরুলে স্ট্যাটাস
মারা আমার বহু পুরোনো রোগ। অনেকে বলে এভাবে আমি পার্টনার খুঁজি। এভাবে কেন
পার্টনার খুঁজবো আমি বুঝিনা। যাদের খুজতে হবে তারা এমনিতেই তো আমার ফ্রেন্ডলিস্টে
আছে। আজব মানুষের মেন্টালিটি। ভেবেছিলাম রঞ্জু, গিয়াস, মিল্টন, বাপ্পী, সঞ্জয় এদের
কেই না কেই আমাকে ফোন করবে। কিন্তু কেউ করলো না। এটাই হলো ফেসবুক বন্ধুত্ব আর
বাস্তব জীবনের বন্ধুত্বের পার্থক্য। তুমি তাদের যেভাবে ফিল করছো তারা তোমাকে
সেভাবে ফিল করে না।
আমাকে ফোন করলো দুজন। পদ্মা নদীর মাঝি আর
সেই ছেলেটা। তারা দুজনেই দেখা করতে চায়। কিন্তু আমার হাতে সময় ছিলো না। সন্ধায়
ফিরতে হবে। আমি ছিলাম জিইসি মোড়ে। পদ্মা নদীর মাঝি চাচ্ছিলো আমি তার সাথে
আন্দরকিল্লায় গিয়ে দেখা করে আসি, আর সেই মদন চাচ্ছিলো মিনি বাংলাদেশের সামনে যাই।
আমি দুজনকেই জিইসি মোড়ে আসার প্রস্তাব দিলাম। পদ্ম নদীর মাঝি আসতে রাজী হলো না।
আমারও যাওয়ার সময় ছিলো না। সে বিরক্ত হয়ে আমাকে উলটা পালটা কিছু অপ্রিয় কথা শুনিয়ে
দিলো।
একজন বয়স্ক মানুষের কাছে এধরণের ছেলে মানুষি
আশা করা যায় না। আমি তাকে অবলীলায় ব্লক করে দিলাম। তাকে ব্লক করার পেছনে অন্য কারণ
ছিলো। সে কথা পরে একদিন লিখবো। যাই হোক, কলিগদের সাথে চিটাগং এসেছি। তাদের সামনে
কারো সাথে মিট করার সাহস পাচ্ছিলাম না। তবু রাজী হলাম। এমনিতেই হাতে সময় নেই।
তারপরো সেই ছেলেটা এক ঘন্টা লেট করে এলো। হাই হ্যালো হলো। কিছুটা নার্ভাস লুক।
বুঝলাম না কেন।
মাঝারী হাইটের, গোলগাল চেহারা। গায়ের রংটা
কালোর দিকে পড়ে। ঘন্টা খানেক সময় হাতে আছে। রিক্সা নিলাম। কারো সাথে দেখা হলে তার
জীবনের কষ্টের গল্পগুলো শুনতে হয়। না চাইলেও শুনতে হয়। তাই আমি মেন্টালি
প্রিপেয়ার্ড ছিলাম। কিন্তু মদনটা কোন কষ্টের গল্প শুরু করলো না। সে শোনালো তার
জীবনের প্রেমের গল্প। একজনের সাথে তার লাভ এফেয়ার চলছে সেই গল্প। এরপর আমার দিকে
চাইলো। আমার সেই বিখ্যাত ছবিটার সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। দেখেশুনে বলল,
আমার বিশ্বাস হয় না ওটা তোমার ছবি। আমি বললাম, তোমার বিশ্বাস তোমার কাছে, ওটা নিয়ে
আমার মাথা ব্যাথা নাই। তুমি কি মনে করো ১৭ বছরের ছবির সাথে ২৬ বছরের এই আমির মিল
থাকবে। সে বলে কিন্তু তাই বলে এতটা চেঞ্জ কিভাবে হয়!
আমি তাকে ২০১০ সালে তোলা কিছু ছবি দেখালাম।
এগুলো কি আমার ছবি বলে মনে হয়। সে বলে, খুব একটা মিল নেই। আমি বললাম, চেহারা চেঞ্জ
হলে আমার কি করার আছে বলো। দুই বছর আগের ছবির সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছো না। তাহলে ১০
বছর আগের ছবির সাথে মিল খুঁজে পাবে কিভাবে। নিশ্চয় আমার চেহারায় এখন কচি ভাব খুঁজে
ফেরা বাহুল্য।
শেষঃ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। শেষ করি। ফিরে
আসার পরদিন সে আমার স্ট্যাটাস ওয়ালে ভূয়া, ফ্রড, অন্যের ছবি চোর ইত্যাদি লিখে ভরে
ফেললো। আমি রিমুভ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। আমি একমাত্র বাবা মা তুলে স্লাং না
দিলে কাউকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে রিমুভ করি না।
তাকে মেসেজ এ লিখলাম, এগুলো বাদ দাও। নিজের পথে চলো, আমাকে রিমুভ করে দাও।
ব্যাস। সে কিছু অপ্রিয় উত্তর পাঠালো। আমার
মেজাজ তো গরমই থাকে। আরো গরম হয়ে গেলো। সে স্ল্যাং লিখে পাঠালো। আমি হুমকি দিলাম,
এরকম করলে তোমার ফটো ফেসবুকে আপলোড করে দেবো। সে পালটা হুমকি দিলো আমার ফটো আপলোড
করে দেবে। আমি লিখলাম যোগ্যতা থাকলে দাও।
এবার সে নরম হলো, স্যরি বললো। লিখল, আমি
জানি তুমি খুব ভালো ছেলে। তুমি কখনোই এটা করবে না। প্লিজ আমার ছবিগুলো ডিলিট করে
দাও। আমিতো তোমার কোন ক্ষতি করিনি। আমি খুশী হয়ে তাকে ব্লক করে দিলাম।
পূনশ্চঃ ফেসবুকে আজো সে আমার ব্লকলিস্টে।
ফেসবুকে তো যোগাযোগ করতে পারেনা। আমার যে
পেজটা আছে ওখানে সে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে মাস খানেক পরে, অনুপম, তোমার স্ট্যাটাস
ছাড়া আমার ওয়াল খাঁ খাঁ করে, প্লিজ আমাকে আন-ব্লক করো।
দুষ্টু গরুর চেয়ে শুন্য গোঁয়াল অনেক ভালো।
আমি তার মেসেজের উত্তর দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি কখনো।
2 টি মন্তব্য:
চট্টগ্রামের মানুষগুলো অনেক স্বার্থপর দাদা।
কত শত অব্যক্ত কথা তুমি কত সহজে ফুটিয়ে তোলো ভাই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন