বেড়াতে যেতে কার না ভালো লাগে। বেড়ানোর
কথা বললে আমি আনন্দে নেঁচে উঠি। বাঁধন হারা মন ভেসে যেতে চায় পাখির ডানায়। আমার
তিন বন্ধু নিশান, বিশ্বজিৎ এবং বাঁধন
পূজোর ছুটিতে কক্সবাজার বেড়াতে গেল। আমিও যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পূজোর পরেই
কুরবানীর ঈদ। তাই কক্সবাজার না গিয়ে খুলনায় গ্রামের বাড়ী আসতে হলো। খুব ইচ্ছে
করছিলো সাগরের ঐ নীলাভ জলে গা ভাসিয়ে সাঁতার কাটতে। আমার জন্য ট্রেনের সিট রিজার্ভ
করা ছিলো। টাকাটাই জলে গেলো। সাগরের জলে গেলেও ভালো লাগত। আমি ওদের ফোন করে দিলাম
যাতে আর কাউকে নিয়ে নেয়। নিশান – বিশ্বজিৎ দুজনেই বিবাহিত। সিট আছে এক টা। দুই
বউদি কে কিভাবে নেয়া যায়। বাঁধনের বয়ফ্রেন্ডকে নেয়া যায়। বাঁধন যে সমকামী এটা আমরা
সবাই জানি। এটা আমরা সহজ ভাবেই মেনে নিয়েছি। বাঁধন যে ওর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে হ্যাপী,
আমাদের দিকে হাত বাড়ায়নি এটাই যথেষ্ঠ। আমরা মাঝে মাঝে বাঁধনকে ক্ষেপাই, কাছে আয় না
দোস্ত, বেশী কষ্ট দেব না। মাত্র একবার। বাঁধন পারলে তো মারতে আসে।
তিনজন সাগরে গিয়ে মেতে উঠল উদ্দাম আনন্দে।
বাঁধনহারা জীবন এক অন্যরকম মাদকতা এনে দেয়। কখন জোয়ার কখন ভাঁটা এটাই ওদের খেয়াল
ছিলো না। সন্ধ্যার জোয়ারে ভেসে গেলো চারজন। আর ফেরা হলো না তাদের। একদম স্বর্গের
দরজায়। মানুষ মরার পর সবাই কিন্তু স্বর্গের দিকে যায়। যাত্রা-সিনেমা দেখলে সবাই
যেমন ভালো সিটে বসতে চায় । ভালো সীট না পেলে খারাপ সিটে বসতে হয়। সেরকম স্বর্গে
ঢুকতে না পারলে নরক ছাড়া গতি হয় না। আগে গরুর গাড়ীতে করে স্বর্গের দরজায় পৌঁছাতে
হত। পথে বেশ কয়েকদিন সময় নষ্ট হয়ে যেত। এখন ডিজিটাল যুগ। মর্ত টু স্বর্গ সুপার
ফাস্ট ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় মৃত্যু হওয়ার সাথে সাথে স্বর্গের দরজায় পৌঁছে
যাওয়া যায়। স্বর্গের মোবাইল নেটওয়ার্ক ভালোই। কোথায় কি হচ্ছে তা পৃথিবীতে বসে
নিমিশেই জানা যাচ্ছে। শুনছি কয়েকদিন পরেই নাকি টেলিভিশনে ব্রম্মার ডাংগুলি খেলা
সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। তারা চারজন স্বর্গদ্বারে পৌঁছে দেখল প্রহরী দাঁড়িয়ে
আছেন। প্রহরীকে বেল দেয়ার সময় আছে। তারা স্বর্গে ঢুকে যাওয়ার উপক্রম হলো।
মেঘনিনাদে চিৎকার করে উঠল প্রহরী, কুকুর হইতে সাবধান। তারা ভয় পেয়ে থমকে দাঁড়ালো। বাঙালী বলে কথা। বাই বর্ন ভিতুর ডিম। গেট
পাহারা দেয়ার জন্য ইয়া বড় বড় কুকুর বাঁধা।
সেই কুকুরের কাছে বসুমতির বুলডগ তেলাপোকার সমান। ভাগ্যিস কুকুরগুলো লোহার
শিকলে বাঁধা। শিকল টা লোহার না সোনার তাই নিয়ে নিশান আর বিশ্ব আলোচনা শুরু করে দিলো।
নিশান মাথা নেড়ে বলতে
লাগলো অবশ্যই এটা সোনার। স্বর্গে সোনা অনেক সস্তা।
প্রহরী পান চিবুতে চিবুতে তাদের পরিচয়
নিলো। স্বর্গে তো আর মৃত্যু বলে কিছু নেই।
প্রহরীটা বড্ড সেকেলে। পান কেউ খায় নাকি এখন। হাতে একটা ব্রান্ডির বোতল
থাকলে মানাতো। সে তাদের রেকর্ড দেখে নিলো বেশ মনযোগ দিয়ে। তারপ্র চোখ তুলে তাকালো।
প্রথমে নজরে এল বিশ্বজিৎ।
-
বাবা বিশ্বজিৎ, তোমার রেকর্ড তো ভালো। কিন্তু তুমি বড্ড লোভী।
সারাজীবন টাকা পয়সার লোভ তোমার। ঈশ্বরের চিন্তা ভাবনা করো নাই। বেশী সম্পদের আশায়
লক্ষী নামের মেয়েকে বিয়ে করেছ। বঊয়ের ভাগ্যে নিজের ভাগ্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার লোভ ছিলো
তোমার। না বাপু, তোমাকে আমি স্বর্গে ঢুকতে দিতে পারিনা। তুমি নরকে গিয়ে দেখ সিট
খালি আছে কিনা। না থাকলে তোমাকে পুনর্জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে যেতে হবে।
এবার
প্রহরীমশাই নিশানের থলথলে দেহের দিকে তাকিয়ে বললেন।
-
নিশান চট্টোপাধ্যায়, তোমার রেকর্ড ভালো। ঈশ্বরের নাম তুমি ভালোই
নিয়েছ। কিন্তু তুমি বড় পেটুক। খাওয়া দাওয়া নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলে যে তোমার মানব
জন্মটাই বৃথা। আবার বিয়ে করেছ মিষ্টি নামের মেয়েকে। বউ তোমার মিষ্টি ছিলো? তোমাকে
বাপু স্বর্গে আমি ঢুকতে দেবনা। এমনিতেই স্বর্গের জনসংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে
গেছে। তোমাকে স্বর্গে ঢোকালে এখানে খাদ্যসংকট দেখা দেবে। তোমার নরকেও গিয়ে কাজ
নেই। তুমি বরং ডাইরেক্ট মর্তে ফিরে যাও।
ব্যাপার স্যাপার দেখে বাঁধনের বয়ফ্রেন্ড
তার কানে ফিসফিস করে বলল,
-
ব্যাপার তো খুব সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। তোমার নামে তো আবার ধোন
আছে। আমাদের কি আর স্বর্গলাভ সম্ভব হবেনা!
(এই পর্বটি কেমন লাগলো বন্ধু। আরো পড়তে
চাও)
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন