২৭ অক্টোবর ২০১৩। রোমের পুরাতন একটি পাস্তা ফ্যাক্টরির ১২
তলায় দাঁড়িয়ে আছে সাইমন। ইতালিয় উচ্চারন
সিমোন। সাইমনের বয়স ২১ বছর। সে মেডিকেলের ছাত্র। ইতালির সর্ববৃহৎ সরকারী হাসপাতাল
পলিকিলিকো আমবারতো তে সে ইন্টার্নশিপ করছে। পৃথিবীটা আজ সাইমনের কাছে বড় অসহ্য মনে
হচ্ছে। মানসিক কষ্ট তাকে চরম সিদ্ধান্ত
নিতে বাধ্য করেছে। সে সুইসাইড হটলাইনে অন্তত দশবার ফোন করেছে। কোন কিছুতে সমাধান
না পেয়ে সে পাস্তা ফ্যাক্টরির ১২ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। বড় অভিমান
করে সে পৃথিবীকে ছেড়ে গেলো। রোমের রাস্তায় সেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে
ভালোবাসতো। দলবেঁধে পাস্তা খাওয়ার স্মৃতি নিয়ে টিকে আছে নাস্তার টেবিলগুলো।
৬ নভেম্বর ২০১৩। ইতালীয় পুলিশ সাইমনের আত্মহত্যার কারণ
উদঘাটন করতে পেরেছে। সাইমন এন্টি-হোমোফোবিয়া যোগাযোগ কেন্দ্রকে জানিয়েছিলো, “যারা
সুইসাইড করেছে আমি তাদের কষ্টগুলো অনুধাবন করছি।”
সাইমনের ফোন কল গুলো গত দুই মাসে ধারণ করা হয়েছে। একটিতে
সে জানিয়েছে, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমি যখন করিডোর দিয়ে হেঁটে যাই, আমার
সহপাঠীরা আমাকে ফ্যাগট (বিদ্রুপ অর্থে সমকামী) বলে ক্ষেপায়। আমাকে নিয়ে তারা কৌতুক
করে।”
আরেকটি ফোনকলে সে জানায়, “আমি এই সব কৌতুক আর বৈষম্যে
হতাশ। আমার স্কুল জীবন থেকেই এটা শুরু হয়েছে। হাই স্কুলেও এটা ঘটেছে এবং এখন
বিশ্ববিদ্যালয়েও একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হচ্ছে।”
মৃত্যুর আগে সাইমন সুইসাইড নোটে লিখে গেছে, “ আমি সমকামী।
ইতালী একটি মুক্ত দেশ কিন্তু এখানে হোমোফোবিয়া (সমকামীদের ঘৃণা করা) আছে। যাদের
মধ্যে এই আচরণ আছে তারা অবশ্যই তাদের বিবেকের সাথে বোঝাপড়া করা উচিত।”
রোমের পুলিশ অভিযুক্তদের ধরার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছে। ইতালীয় পত্রিকা “কুরিয়েরে
দেল্লে সেরা” জানিয়েছে , প্রকৃত অভিযুক্তদের ধরা অনেক কঠিন একটি কাজ।
সাইমন ঠিক লিখে গেছে। বিবেক দিয়ে মানুষের বোঝা উচিত।
অন্যের কষ্টগুলো। অন্যের ব্যাথার জায়গাগুলো। আমাদের সামান্য মজার কারনে যেন অকালে
সাইমনদের ঝরে পড়তে না হয় পৃথিবী থেকে।
আমাদের বাংলাদেশে রাতুলেরাও ঝুলে পড়ছে ফ্যানের সিলিং এ। কবে দূর হবে
বৈষম্য? কবে প্রতিষ্ঠিত হবে সমধিকার!
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন