খুলনা পাবলিক কলেজের গেটে এসে নামলাম।
মধ্যবয়সে এসে আরো একবার সেই কৈশরের অনুভূতি ফিরে এলো। কৈশরে এসেছিলাম বাবার হাত
ধরে। আমি গ্রামের ছেলে। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাবলিকে এসে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স
পাই। দারোয়ানকে পরিচয় দিতে একাদশ শ্রেনীর
ক্লাসে পাঠিয়ে দিলো। চারপাশে অচেনা সব নতুন মুখ। এতদিনে স্কুলের অনেক কিছুর
পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন বিল্ডিংও হয়েছে একটা। পুরাতন ভবন আজো আছে। আজকেও অধিকাংশ
মুখ অচেনা। আজ রিইউনিয়ন। বিভিন্ন ব্যাচের ছেলেরা এসেছে। চেহারা দেখে আর চেনার জো
নেই। নিজের ব্যাচের ছেলেদের অনেককেই চিনতে পারলাম। আবার অনেকের নাম শুনে চেনার চেষ্টা করেও পারছি না। কি ছিলো
আর কি হয়ে গেছে। তারপরও নস্টালজিক একটা দিন কেটে গেল। খুব কাছের চার বন্ধু গোল হয়ে
বসলাম সেই পুরোনো সেই ক্লাস রুমে। এখানেই আলাল স্যার, লতিফ স্যার, ইউসুফ স্যার, বদু স্যার, টিপি
ম্যাডাম কত ক্লাস নিয়েছেন। রিইউনিয়নে টিপি ম্যাডামও এসেছেন। রিটায়ার্ড করেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। চেহারায়
বার্ধক্যের ছাপ এলেও সাজগোজে তিনি এখনো অনেক স্মার্ট, হেব্বি ফিটফাট। আমাকে ডেকে বলল, ঐ শুভ্র
, তুই কি এখনো সেই রকম লাজুক আছিস নাকি!
এই প্রথম কেউ তুই বলল, ভালো লাগলো।
বন্ধুরা প্রায় সবাই তুই থেকে তুমি তে উঠে গেছে। সৌমিত্র, সাজু, রাসেল আর আমি গিয়ে বসলাম আমাদের
সেই ক্লাসরুমে। আমরা ছিলাম বি গ্রুপের। এখন তো দুই শিফটে স্কুল চলে। আমাদের সময়ে
একটাই শিফট ছিলো। ডে শিফট। গল্পের পর গল্পের তুবড়ি ছুটছে। এই বয়সের বাপদের একটা
প্রব্লেম আছে। গল্পের মাঝে নিজের ছেলে মেয়েদের কথা তুলবেই। আমার বোর লাগে। আমি
ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করতে লেগে গেলাম। স্ট্যাটাসের বন্যা বইয়ে না দিয়ে আমি
আবার বের হতে পারিনা।
সৌমিত্র তার ছেলের প্রশংসা করে বলছে, আমার
ছেলে বড় চাকরী করে তো জানো। সে তার বন্ধুদের প্রতিও অনেক কেয়ারফুল। গত মাসে তার
ক্লোজ এক বন্ধুকে সে তাদের কোম্পানীতে উচ্চ বেতনে চাকরী পাইয়ে দিয়েছে।
সাজু বলল, আরে আমার ছেলেও অনেক বন্ধুবৎসল।
গত মাসে তার বন্ধুকে বিএমডব্লিও গিফট করেছে।
নাজমুল আরেক কাঠি সরেস। সে বলল, আরে আমার
ছেলে পারলে তো তার জানটাই বন্ধুর জন্য দিয়ে দেয়। গতমাসে সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে
গুলশানে একটা বাড়ী কিনে দিয়েছে।
এবার আমার বলার পালা। আমি চুপ করে আছি।
তিনজনে আমার দিকে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছে। নিজের সাফল্য বন্ধুদের থেকে ছাড়িয়ে গেলে
আমরা সবাই অন্যরকম একটা তৃপ্তি অনুভব করি। যদিও কখনোই
সেটা মুখে স্বীকার করব না। তাদের মুখের রেখায় সেই ধরণের একটা ছায়া আমি দেখতে
পেলাম।
সৌমিত্র বলল, কিরে তোর মাথা থেকে এখনো
ফেসবুকের পোকা নামেনি! মার্ক জ্যুকারবার্গ শুনলাম ফেসবুক ব্যবহার করে বোর হয়ে
গেছে। তাই সে এখন ট্যুইটার ইউজ করে।
আমি বললাম, আমার ছেলেটা গ্রাজুয়েশন করার
পরে ভালোই আছে। তোমরা মনে হয় জানো না আমার
ছেলে সমকামী। সেটা নিয়ে প্রথমে আপত্তি করেছিলাম। এখন মেনে নিয়েছি। তবে তোমরাও
স্বীকার করতে বাধ্য হবে আমার ছেলের বন্ধুভাগ্য অনেক ভালো। আমার ছেলে গতমাসে তার তিন
বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে ভালো বেতনের চাকুরী, বিএমডব্লিউ গাড়ী আর গুলশানে বাড়ী
পেয়েছে। তার তিন বয়ফ্রেন্ডের ছবিও আমার
কাছে আছে। দেখবে।
ছবি দেখার পর তিন গর্বিত পিতা চুপসে গেলো।
কেন ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমার ছেলে সমকামী এটা স্বীকার করেছে বলে তোমরা ছি ছি
করছ, তোমাদের সোনার চাঁন , পিতলা ঘুঘু গোপনে কি করে তার কোন খবর রেখেছ কখনো!
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন